As-Sunnah Trust

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 6743

বিবাহ-তালাক

প্রকাশকাল: 19 Feb 2024

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম।  ২০২০ সালের কথা। তখন আমার বয়স ছিল পনেরো। আমি একটা হারাম রিলেশনে জড়াই। আমার মা বাবা সেটা কিছুদিনের মাঝেই জানতে পারেন। ছেলেটির বাড়ি আমার পাশের এলাকায়। ছেলেটি এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী নামে পরিচিত এবং এলাকার কেউ তাকে পছন্দ করে না।  খারাপ ছেলে বলেই তার পরিচয়। এ বিষয়গুলো মা বাবা জানার পর আমাকে বোঝায় আমি যেন এসব বাদ দেই। কিন্তু ঐ ছেলে এবং তার পরিবার আমাকে খুব ভালোবাসত। তাদের কথায় প্ররোচিত হয়ে আমি ঐ ছেলের সাথে পরিচয়ের এক মাস পরেই লুকিয়ে বিয়ে করি । সেখানে একটা হুজুর আর আমরা দুজন ছাড়া কেউ উপস্থিত ছিলাম না। আমি তখন জানতাম না যে এই ভাবে অভিভাবক এর অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয় না। এজন্য তার কথায় কিছুদিন পর আমি তার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমার মা বাবা পুলিশের মাধ্যমে আমাদের দুই দিন পর খুঁজে পায় এবং ছেলেটিকে পুলিশে দেয়। সে দুই মাস জেল খাটার পর । তার জন্য আমার অনেক মায়া হয় এবং আমি তাকে বিয়ে করার জন্য মা বাবার সাথে অনেক জেদ করি । সেই ছেলের মা বাবাও বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমার মা বাবা ছেলের চরিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন আজেবাজে কথা শোনায় তারা কোনোভাবেই রাজি হয় না। আমার মা বাবা এবং সব গুরুজন আমাকে বোঝালেও আমি ভাবতাম তারা আমাকে এসব মিথ্যা কথা বলছে। আমি তাদের কোনো কথাই বিশ্বাস করতাম না। মা বাবার সাথে বেয়াদবি করতাম ।ঐ ছেলের সাথে যোগাযোগ রাখতাম। এক পর্যায়ে মা বাবা আমাদের গুরুজনদের কে নিয়ে বসে এবং তারা আমার বাবার বলে ঐ ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে। কিন্তু মা বাবা কিছুতেই রাজি হয় না। তারপর এরকম আমার জেদ এবং আত্মীয়দের চাপে সেই দিন রাতে বিয়ের আয়োজন করা হয় আমার বড় চাচার বাড়িতে। আমার ঐ বড় চাচা ছাড়া বিয়েতে কেউ রাজি ছিল না। বাবা মা সেদিন খুব কান্নাকাটি করেছে কিন্তু আমি তাদের কোনো কথা শুনিনি। বাবা কে সবাই জোর করে কাবিননামায় অভিভাবকের স্বাক্ষর করায় । আমার বাবা সেদিন একদম ই রাজি ছিল না। তারপর বিয়ে হলে আমি সেখানে যাই। সেখানে আমি প্রায় দশ মাস থাকি। বিয়ের পর আমি বুঝতে পারি আমার মা বাবা যা বলেছিল তাই ঠিক। ছেলেটি আসলেই ভালো না। আমার মা বাবার বাড়িতে আমি চলে আসি এবং তাকে স্বামী তালাক দেই। স্বামী তালাক দেওয়ার তিন মাস পর আমি সেই তার কাছে আবার ফিরে যাই এবং একদিন দেখি আমি যেই ঘরে থাকি সেই ঘরে মৃত পশুর হাড় দিয়ে আমার কাপড় বাঁধানো। তখন এটি আমি তার আপন ভাইকে জানাই। তখন আমার ভাসুর বলে আমার স্বামী আমাকে বিয়ের আগে থেকে এখন পর্যন্ত কালো জাদু করে আসছে।‌ যেন তার সাথে আমি সংসার করি।এ র আগেও কয়েকটা মেয়ের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল এসব তারা আমাকে জানায়। এবং বলে আমার সাথে প্রতারণা করে বিয়ে করেছে।এসব আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলে সে স্বীকার করে যে সে এসভ করেছে। আমি এসব জানার পর আমার মা বাবাকে জানাই এবং তারা আমাকে নিয়ে চলে আসে। প্রায় দুই বছর যাবত আমি মা বাবার কাছে অবস্থান করছি। এর মাঝে সেও আমাকে তালাক দেয় নি আমিও দেয় নি। আমি চলে আসার পর সে আবার বিয়ে করেছে এবং সেই স্ত্রী ও থাকে নি, চলে গেছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী চলে যাওয়ার কিছু দিন পর থেকে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয় এবং সে বলে সে এখনো আমাকে ভালোবাসে। কিছু দিন আগে আমি জানতে পারি স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা না দেয় তাহলে স্ত্রী তালাক নিতে পারে না। এই কথা জানার পর আমার মনে হয় আমরা এখনো স্বামী স্ত্রী আছি কারণ আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে সে আমাকে কখনো তালাক এর অধিকার দেয় নি এবং সে আমাকে কখনো তালাক দিবেও না। এসব জানার পর তার সাথে আমার অন্তরঙ্গতা বাড়ে। তার সাথে লুকিয়ে দেখা করা ।‌কিন্তু এলাকার সবাই জানে আমাদের তালাক হয়ে গেছে। তার সাথে আমার যোগাযোগ এর বিষয় টি আমার মা বাবা জানতে পারলে তারা খুব কষ্ট পায় এবং আমাকে অভিশাপ দেয় এবং বলে আমি যদি কখনো তার কাছে যাই তাহলে আমার মা বাবা আত্মহত্যা করবে এবং আমার উপর গযব নামবে। কিন্তু আমার স্বামী নিজেকে বদলে ফেলবে আর কখনো খারাপ কাজ করবে না বলে আমাকে জানায়। তার সাথে যোগাযোগ এর কারণে প্রতিনিয়ত আমার মা বাবার সাথে আমার মিথ্যা বলতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। আমি কি মা বাবার কথা শুনে তার কাছে তালাক চাইব নাকি তার কাছে চলে যাব? মেহেরবাণী করে উত্তর দিবেন।

উত্তর

আপনার বক্তব্য  “বিয়ের পর আমি বুঝতে পারি আমার মা বাবা যা বলেছিল তাই ঠিক। ছেলেটি আসলেই ভালো না।” তাহলে এই ছেলের সাথে আবার কেন যোগাযোগ করছেন? অজ্ঞতার তো একটা সীমা থাকা দরকার। সে তো প্রথম থেকেই খারাপ, তারপরও সবার অমতে সেখানে গিয়ে তার অবস্থা স্বচক্ষে দেখে এসে আবার সেখান যাওয়ার জন্য চিন্তা করা, প্রশ্ন করা! মাঝে আরেকজন মেয়েও তার নিকৃষ্টতা দেখে গেছে। এতো  কিছুর পরও কী আপনার শিক্ষা হবে না! পিতা-মাতা যা বলবে এক বাক্যে মেনে নিবেন। তার কাছে তালাক চান, না দিতে চাইলে যেভাবে কাজ করলে তালাক দেয় সেভাবে কাজ করুন। বাড়ি থেকে বের হবেন না, মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দিন।