কবর পাকা করার রীতি অনেক পুরাতন। প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মৃত স্বজনের স্মৃতি রক্ষার্থে কবর পাকা করত, এমনকি পিরামিড তৈরি করত। আরব দেশেও এরূপ প্রচলন ছিল বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন।
এক হাদীসে জাবির (রা) বলেন:
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ
“রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর চুনকাম করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর ইমারত বা ঘর বানাতে নিষেধ করেছেন।1১.সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানাইয, নং ১৬১০। এ অর্থে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলি থেকে জানা যায় ৫টি বিষয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন: কবর চুনকাম করা, কবরের উপরে বসা, কবর বাঁধানো বা কবরের উপরে ঘর জাতীয় কিছু তৈরি করা, কবরের উপরে লেখা এবং অতিরিক্ত মাটি এনে কবর উঁচু করা।2আবু দাউদ, নং ৩২৩৫, ৩২২৬, তিরমিযী, ১০৫২, ইবনুল আসীর, জামিউল উসূল ১১/১৪৫-১৪৬।
শুধু কবর পাকা করা নিষেধই নয়,
উপরন্তু পাকা কবর ভেঙ্গে ফেলতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। ৩. এ সকল হাদীসে বিপরীতে একটি হাদীসেও তিনি কবর পাকা করার অনুমতি দেন নি। কখনোই তিনি বা সাহাবীগণ কারো কবর পাকা করেন নি। চার ইমাম একে মাকরূহ বা হারাম বলেছেন। হানাফী মাযহাবের অন্যতম ইমাম, ইমাম মুহাম্মাদ (রাহ) বলেন: “আমাদের মত হলো, কবর খুড়তে যে মাটি বেরিয়েছে তা ছাড়া অন্য মাটি এনে কবর উঁচু করা যাবে না। কবরের মাটি দিয়েই শুধু এতটুকু উঁচু করতে হবে যেন কবর বলে চেনা যায়, কেউ তা পদদলিত না করে। কবরকে চুনকাম করা বা কাদা দিয়ে লেপে দেওয়া মাকরুহ।
অনুরূপভাবে কবরের নিকট মসজিদ তৈরি করা বা কোনো পতাকা, চিহ্ন, স্তম্ভ বা স্মৃতিচিহ্ন তৈরি করাও মাকরুহ। কবরের উপরে কিছু লিখাও মাকরুহ। ইট দিয়ে কবরের উপরে ঘর বানানো বা কবরের মধ্যে ইট দিয়ে পাকা করা সবই মাকরুহ। তবে (কবরের উপরে) পানি ছিটিয়ে দেওয়াকে আমরা না-জায়েয মনে করি না। এই হলো আবূ হানীফা (রাহ)-এর মত।”3সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানায়েজ, নং ৯৬৯।
মাকরূহ অর্থই মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম পর্যায়ের মাকরূহ, যাতে গোনাহ হবে। টাকা পয়সা খরচ করে গোনাহ কামাই করার কোনো অর্থ হয়? কবর পাকা না করে টাকাগুলি দান করলে মাইয়েত সাওয়াব পেতেন। আর কবর পাকা করলে আপনি গোনাহ পাবেন এবং তারা কিছুই পাবেন না।