প্রশ্ন-০৫: কুরআন অনুসারে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জাতির জন্য প্রেরিত রাসূল। আবার কুরআনে আছে তিনি কওমের রাসূল। মক্কা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রাসূল। তিনি উম্মিদের নবী। তাহলে কুরআনের বর্ণনা সাংঘর্ষিক হয়ে গেল না?
উত্তর: এটাও খ্রিস্টানরা বলে বেড়ায়। কুরআনে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বনবী। কুরআনে কোথাও নেই- আমি কেবলমাত্র আমার জাতির জন্য। ইঞ্জিলে আছে, ঈসা মসীহ বলছেন, আমি কেবলমাত্র আমার জাতির জন্য। কিন্তু কুরআনে কোথাও নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি শুধু, কেবলমাত্র আমার জাতির জন্য। আমার দাওয়াত শুরু হবে কী দিয়ে? আমার জাতিকে আগে দেব নাকি আগে অন্য জায়গায় যাব? কুরআনে আছে, তুমি উম্মুল কুরা এবং তার পার্শ্ববর্তী লোকদের দাওয়াত দেবে। এটা হল ইসলামের বিশ্বজনীনতা। প্রথমে মক্কা এবং তার চারিদিকে দাওয়াত দেবে। এটা প্রমাণ করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ধর্ম বিশ্বধর্ম।
কারণ দুনিয়াটা মক্কার চারিদিকে সমান। একটু ভালো করে ভূগোলটা দেখেন। মক্কার পশ্চিমে ইউরোপ। পূর্বে এশিয়া। দক্ষিণে আফ্রিকা। উত্তরে সাইবেরিয়া। বিশ্বের মিডিল। উম্মুল কুরা। সারা বিশ্বের সব জনপদের কেন্দ্র হল মক্কা। মক্কার নিচে চলে যান, মহাসাগর। মানুষ নেই। কাজেই উম্মুল কুরা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাওয়াত শুরু হবে এবং তার চারিপাশে। এভাবে সারা বিশ্ব ঘিরে নেবে। যে কোনো জিনিস শুরুর একটা জায়গা থাকে। এরপরে সব জায়গায় যাবে। কুরআনে বলা হচ্ছে, উম্মুল কুরা এবং তার আশেপাশে দাওয়াত দিতে হবে।
তাহলে আশেপাশে বলতে কি আশপাশের ১০ মাইল? ৫০ মাইল? ১০০ মাইল? ২০০ মাইল? এমন কথা কি কুরআনে আছে? এর বিপরীতে দেখেন, ইঞ্জিলে ঈসা মসীহ বলছেন, আমি আমার জাতি বনী ইসরাঈল ছাড়া আর কারো জন্য প্রেরিত হইনি। এবং এখানে আরেকটা জিনিস আছে। সেটা হল, কম্যুনালিজম। বংশ। তোমরা দাওয়াত দেবে শুধু বংশ দেখে। ব্লাড দেখে দাওয়াত দেবে। আর ইসলাম বলছে, উম্মুল কুরা এবং তার চারপাশে দাওয়াত দিতে হবে। কুরআনে কোথাও নেই আরবদের ডাকবে বা অনারবদের ডাকবে- কোথাও নেই। মানুষকে ডাকবে।
এবং মক্কা থেকে শুরু করে চারিদিকে শুধু বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে। কাজেই কেউ যদি বলে মক্কা এবং তার চারিদিকে… চারিদিকে ৩ মাইল না ৩০ মাইল লেখা আছে নাকি? এটাই তো ইসলামের বিশ্বজনীনতা। ইসলাম তো বলেনি যে মক্কার বাইরে যেতে পারবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বজনীন এটাও কুরআনে স্পষ্ট বলা আছে। তার দাওয়াত উম্মাল কুরা থেকে শুরু হয়ে সারা বিশ্বের জন্য, এটাও কুরআনে বলা হয়েছে। পূর্বের সকল নবী তাঁর জাতির জন্য ছিলেন। এর বাইরে কাউকে দাওয়াত দেয়ার দাবিই করেননি। যিশুখ্রিস্ট বারবার বলেছেন, আমি আমার জাতির জন্য। আর কাউকে দাওয়াত দেব না। ফুঁকও দেব না। এক মহিলা, সে বনী ইসরাঈলের নয়, ইঞ্জিলের ঈসা মসীহর বংশের নয়, আরবের মহিলা, তার মেয়েটাকে ভূতে ধরেছে; তো যিশুখ্রিস্টকে বললে ভূত চলে যায়, মহিলা এসে কাঁদছে- হুযুর, আমার মেয়েটাকে ভূতে ধরেছে, আপনি একটু দু‘আ করেন, ভূতটা সেরে যাক।
যিশুখ্রিস্ট কথা বললেন না। মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করছে। তখন শিষ্যরা বলল, হুযুর, ওকে একটু ফুঁ দিয়ে দেন না! তিনি বললেন, না। আমি বনী ইসরাঈলের হারানো মেষপাল ছাড়া আর কারো জন্য প্রেরিত হইনি। দীনের দাওয়াত দূরের কথা, তাবীয-কবয, দু‘আ-দরূদও অন্যদেরকে দেয়া যাবে না। এরপর ওই মেয়েটা আরো কাঁদছে। তখন উনি বললেন:
It is not meet to take the children’s bread, and to cast it to dogs.
নিজের সন্তানদের রুটি নিয়ে কুত্তার দেয়া ঠিক নয়। তার মানে বনী ইসরাঈল হল ঈশ্বরের সন্তান। আর বাকিরা হল কুত্তা। কাজেই দীনের দাওয়াত, দু‘আ-তদবীর, ফুঁ দিয়ে জিন খেদানো- কোনো সুবিধাই ওদের দেয়া যাবে না। এরা দাবি করে বিশ্বজনীনতা! অন্য ধর্ম, ভারতীয় ধর্মেও অন্যদেরকে- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র, বৈশ্য- এদের বাইরে অন্য কাউকে হিন্দুধর্মে ঢুকানোর কোনো সুযোগ নেই। তাদের বিশ্বজনীনতার কোনো সুযোগ নেই। কেউ দাবি করেও না।