কিতাব বিভাগের পরিচিতি (সংক্ষেপে)
১. বালক ও বালিকা শাখা:
ইসলামী মূল্যবোধ ভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তার এবং ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষজ্ঞ আলেম তৈরী আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য। আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিভাগ “জামিআতুস সুন্নাহ নামে পরিচিত। জামিয়াতুস সুন্নাহর সর্ববৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প দাওরায় হাদীস বিভাগ অর্থাৎ কিতাব বিভাগ। বিশুদ্ধ ইসলামী আকীদা, আমল ও আখলাকের ভিত্তিতে যোগ্য আলেম গড়ে তোলার সুব্যবস্থা করা এই বিভাগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার জন্য কওমী মাদ্রাসার মূল পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রমগুলো ঠিক রেখে, সাধারণ বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বালকদের জন্য ৯ বছর এবং বালিকাদের জন্য ৮ বছর মেয়াদী পাঠক্রম তৈরী করা হয়েছে। বর্তমানে বালক-বালিকা উভয় শাখায় জামাতে জালালাইন পর্যন্ত চালু আছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে (১৪৪০-১৪৪১ হি.) মিশকাত জামাত এবং পরবর্তী বছর দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত চালু হবে ইনশাআল্লাহ।
বালকদের ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য আরবী ভাষা, হাদীস, ফিকহ, তাফসীর ও অন্যান্য ইসলামী জ্ঞানে পারাদর্শী গবেষক আলিম ও যোগ্য শিক্ষক তৈরী করা। বালিকাদের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য আরবী ভাষায় দক্ষতাসহ ইসলামী জ্ঞানে অভিজ্ঞ, তাকওয়া, আখলাক, আদব ও সমাজ সচেতন মুসলিম মহিলা তৈরী করা। এ দিকে লক্ষ্য করেই পাঠ্যক্রম তৈরী করা হয়েছে। মূল নিয়মাবলী উভয় বিভাগের জন্য একই, তবে পাঠ্যক্রম কিছুটা ভিন্ন। পর্দা সংরক্ষণের স্বার্থে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসরুম ও আবাসনের ব্যবস্থা সর্ম্পূণ পৃথক করা হয়েছে।
২. এই বিভাগের দায়িত্বশীলগণ:
বিভাগীয় প্রধান: বিশিষ্ট আলিম শায়খ আবু জাফর হাফিযাহুল্লাহ।
বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক সার্বিক সহযোগিতা যারা করেন তাদের অন্যতম হলেন,
বিশিষ্ট আলিম ফুরফুরার গদ্দীনশীন পীর শায়খ আব্দুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী আল-কুরাইশী।
বিশিষ্ট আলিম শায়খ আহমাদুল্লাহ। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, দায়ী ও গবেষক ।
প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন জনাব আব্দুর রহমান, সেক্রেটারী, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট। ০১৭১৮-১৩৬৯৬২
৩. ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী:
উক্ত বিভাগের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবীন ও প্রবীন সমন্বিত, সৃজনশীল মানসকিতা সম্পন্ন, প্রতিভাবান ও সুদক্ষ, শিক্ষির্থীদের প্রতি নিবেদিত প্রাণ একদল শিক্ষক-শিক্ষিকা সার্বক্ষণিক তাদের পাঠদান ও দেখাশোনা করে থাকেন। বালক ও বালিকা উভয় শাখায় দেখভাল করার জন্য একজন করে খাদেমের ব্যবস্থা আছে।
৩. কিতাব বিভাগের কতিপয় বৈশিষ্ট্য:
তরজামাতুল কুরআন, তাফসীর, হাদীস, উসূলুল হাদীস, ফিকহ, উসূলুল ফিকহ, র্সফ, নাহউ, আকাঈদ, তারিখুল ইসলাম, ইলমুল আখলাক বিস্সুনান, বাংলা, ইংরেজী গণিতসহ অন্যান্য জীবন ঘনিষ্ট সকল বিষয়ে পাঠ দান।
সুুুস্বাস্থকর পরিবেশ, সুপরিকল্পিত পাঠ্যসূচী, কিঞ্চিত বিনোদন, আধুনিক ও উন্নত আবাসন ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত উন্নত খাদ্য পরিবেশন।
সাপ্তাহিক বক্তৃতা প্রশিক্ষণ।
বিশুদ্ধ উচ্চারণে আরবী কথোপকথন প্রশিক্ষণ।
ইসলামী শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়।
সকল শাখায় অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা দ্বারা পাঠদান। আরবী শিক্ষকদের প্রায় সকলেই দাওরায়ে হাদীসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর এক বা একাধিক বিষয়ে তাখাসসুস সম্পন্ন করেছেন। সাধারণ শিক্ষকদের সকলেই স্ব স্ব বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রীপ্রাপ্ত।
মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা। আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জেডিসি এবং দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ।
প্রতিটি শ্রেণিতে আকীদার বিষয়ে পাঠদান।
প্রতিটি শ্রেণিতে বিষয়ভিত্তিক কুরআন ও হাদীস মুখস্ত করানো হয়।
‘উসূলে ফিকহ’, ‘আদাব’, ‘নাহু’ ও অন্যান্য শাস্ত্রে দরসে নিযামী ও বর্হিবিশ্বের সিলেবাসের সমন্বয়।
শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা।
৪. ভর্তি প্রক্রিয়া:
শাওয়াল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভর্তি কার্যক্রম চলে এবং তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পাঠদান শুরু হয়।
আবেদনকারীকে বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াতে সক্ষম এবং বাংলা, ইংরেজী, অংক ইত্যাদি সাধরণ বিষয়ে পঞ্চম শ্রেণীর মানের হতে হয়।
ভর্তি পরীক্ষায় চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হলে আবেদন পত্রের সাথে জন্ম-সনদ, নাগরিক সনদ, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রশংসাপত্র, নিজের বা অভিভাবকের ভোটার আই. ডি. কার্ডের কপি এবং দু’কপি সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে।
৫. প্রস্তুতিমূলক শিক্ষাবর্ষ:
কিতাব বিভাগে ভর্তিচ্ছুক অনেকে পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হলেও কুরআন কারীম বিশুদ্ধ তেলাওয়াতে অক্ষম। আবার অনেকে হাফিযে কুরআন বা কুরআন ও আরবীতে যোগ্য হলেও বাংলা, ইংরেজী, অংক ইত্যাদি সাধারণ বিষয়ে দুর্বল। এদের জন্য বালক ও বালিকা বিভাগে পৃথক প্রস্তুতিমূলক বিশেষ শ্রেণির ব্যবস্থা রয়েছে। এক বছর নিবিড় তত্ত্বাবধানে তাদেরকে কিতাব বিভাগ প্রথম বর্ষের জন্য প্রস্তুত করা হয়। বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।
৬. বেতন ও প্রাসঙ্গিক তথ্য:
কিতাব বিভাগের মাসিক খরচ মোট ৩০০০ টাকা।
নতুন শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও অন্যান্য ফি ১৬০০ টাকা এবং পুরাতন শিক্ষার্থীদের সেশন ও অন্যান্য ফি ১১০০ টাকা।
সকল প্রকার ফি মাসের ১-৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।
দরিদ্র ও মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা আছে।
এতিমদের জন্য থাকা-খাওয়াসহ লেখা-পড়ার যাবতীয় খরচ প্রতিষ্ঠান বহন করে থাকে।
৭. শিক্ষা বর্ষ, পরীক্ষা ও ছুটি বিষয়ক তথ্য:
ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে জামিআতুস সুন্নাহ-এর শিক্ষা কার্যক্রমে আরবী চান্দ্র বর্ষ অনুসরণ করা হয়। শাওয়াল মাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় এবং শাবানে শেষ হয়। রামাদানে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু তারবিয়াতী কার্যক্রম থাকে।
শিক্ষাবর্ষ তিনটি পর্বে বিভক্ত করে সর্বমোট ৬ টি মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিনটি মাসিক পরীক্ষা, দুইটি পার্বিক পরীক্ষা এবং বার্ষিক পরীক্ষা। পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কমপক্ষে গড়ে ৪৫% নম্বর পেতে হবে।
ঈদুল আযহাতে ১০-১২ দিন, ২টি পার্বিক পরীক্ষার পর ৫-৭ দিন এবং প্রতিমাসে ১ দিন ছুটি। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত ছুটি ছাড়া কোন শিক্ষার্থীকে ছুটি দেয়া হয় না। জরুরী পরিস্থিতিতে ছুটি দেওয়া-না দেওয়া বিভাগীয় প্রধানের বিবেচনাধীন।
৮. আবাসিক নীতিমালা:
কিতাব বিভাগের জন্য সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আবাসিক থাকা বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনীয় বিছানা-পত্র এবং পোশাকাদি শিক্ষার্থীরা নিয়ে আসবে।