আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 6512

পোশাক-পর্দা

প্রকাশকাল: 18 ডিসে. 2023

প্রশ্ন

আস-সালামু আলাইকুম, মুহতারাম, আমার একটা জিজ্ঞাসা আছে। আমার স্ত্রী দ্বিন মেনে জীবনযাপন করে। ঘরে এবং বাইরে কঠোর পর্দা করে। এখন, আমার গ্রাম থেকে অনেক বন্ধু আসে শহরে, তারা আমার বাসায় যেতে চাই, মাঝে মাঝে রাত থেকে সকালে চলে যেতে চায়। কিন্তু আমার স্ত্রীর পর্দা মানতে অসুবিধা হবে ভেবে সে আমার ঐসব বন্ধুদের বাসায় আনতে কঠোরভাবে নিষেধ করে। এমন পরিস্থিতে আমার করনীয় কি? বন্ধুদেরকে আমি কি বলে বুঝাতে পারি? সুন্দর উত্তর আশা করছি। ধন্যবাদ

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। গ্রাম থেকে কোন বন্ধু বা আত্মীয় প্রয়োজনে আসলে তাকে বাসায় থাকতে দেয়া বা মেহমানদারী করা মুসলিম হিসেবে আপনার দায়িত্ব। পর্দারক্ষা করেও এটা সম্ভব। বন্ধু বা আত্মীয় আসলে পর্দার লংঘন হবে, এটা খুবই খারপ কথা। পর্দা রক্ষা করেই তাদের মেহমানদারী করতে হবে। স্ত্রীর এই অযৌক্তিক কথা মানবেন না। যারা আসবেন তাদের জন্য আলাদা রুম এবং বাথরুমের ব্যবস্থা করবেন। তারা যত সময় বাসায় থাকে ততটুুক সময় আপনিও বাসায় থাকবেন। পর্দা কখনোই বাসায় মেহমান আসার অন্তরায় হতে পারে না। পর্দার দোহাই দিয়ে মেহমানদের বাসায় আসেত নিষেধ করার কোন সুযোগ নেই। পর্দা যেমন ধর্মের অংশ, মেহমানদের মেহমানদারী করাও ধর্মের অংশ। রাসূল সা. এর বাড়িতেও মেহামানরা এসেছেন, রাতে থেকেছেন। حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّهُ كَانَ عِنْدَ عَائِشَةَ – رضى الله عنها – فَاحْتَلَمَ فَأَبْصَرَتْهُ جَارِيَةٌ لِعَائِشَةَ وَهُوَ يَغْسِلُ أَثَرَ الْجَنَابَةِ مِنْ ثَوْبِهِ أَوْ يَغْسِلُ ثَوْبَهُ فَأَخْبَرَتْ عَائِشَةَ فَقَالَتْ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَأَنَا أَفْرُكُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم হাফস ইবনু উমার… ইব্রাহীম থেকে হাম্মামের সূত্রে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ) এর মেহমান ছিলেন। তাঁর সপ্নদোষ হওয়ার পর তিনি কাপড় হতে বীর্য ধৌত করছিলেন। তা আয়িশা (রাঃ) এর বাদী দেখে তাকে (আয়শাকে) অবহিত করেন। তখন আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাপড় হতে এটা খুঁচে তুলে ফেলে দিতাম। সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৭১। সাহাবীরাও মেহমানদেরকে রাত্রে বাসায় রাখতেন। নীচের হাদীসটি লক্ষ্য করুন: عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ إِنِّى مَجْهُودٌ. فَأَرْسَلَ إِلَى بَعْضِ نِسَائِهِ فَقَالَتْ وَالَّذِى بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا عِنْدِى إِلاَّ مَاءٌ. ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُخْرَى فَقَالَتْ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى قُلْنَ كُلُّهُنَّ مِثْلَ ذَلِكَ لاَ وَالَّذِى بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا عِنْدِى إِلاَّ مَاءٌ. فَقَالَ « مَنْ يُضِيفُ هَذَا اللَّيْلَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ ». فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ. فَانْطَلَقَ بِهِ إِلَى رَحْلِهِ فَقَالَ لاِمْرَأَتِهِ هَلْ عِنْدَكِ شَىْءٌ. قَالَتْ لاَ إِلاَّ قُوتُ صِبْيَانِى. قَالَ فَعَلِّلِيهِمْ بِشَىْءٍ فَإِذَا دَخَلَ ضَيْفُنَا فَأَطْفِئِى السِّرَاجَ وَأَرِيهِ أَنَّا نَأْكُلُ فَإِذَا أَهْوَى لِيَأْكُلَ فَقُومِى إِلَى السِّرَاجِ حَتَّى تُطْفِئِيهِ. قَالَ فَقَعَدُوا وَأَكَلَ الضَّيْفُ. فَلَمَّا أَصْبَحَ غَدَا عَلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ « قَدْ عَجِبَ اللَّهُ مِنْ صَنِيعِكُمَا بِضَيْفِكُمَا اللَّيْلَةَ ». আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমি ক্ষুধায় কাতর হয়ে আছি।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট সংবাদ পাঠালেন। তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যের সঙ্গে পাঠিয়েছেন! আমার কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই।’ অতঃপর অন্য স্ত্রীর নিকট পাঠালেন। তিনিও অনুরূপ কথা বললেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত সকল (স্ত্রী)ই ঐ একই কথা বললেন, সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যের সাথে পাঠিয়েছেন! আমার কাছে পানি ছাড়া কোন কিছুই নেই।’ তারপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজকের রাতে কে একে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করবে?’’ এক আনসারী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করব।’ সুতরাং তিনি তাকে সাথে করে নিজ গৃহে নিয়ে গেলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মেহমানের খাতির কর।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (আনসারী) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তোমার নিকট কোন কিছু আছে কি?’ তিনি বললেন না, কেবলমাত্র বাচ্চাদের খাবার আছে।’ তিনি বললেন, কোন জিনিস দ্বারা তাদেরকে ভুলিয়ে রাখবে এবং তারা যখন রাত্রে খাবার চাইবে, তখন তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। অতঃপর যখন আমাদের মেহমান (ঘরে) প্রবেশ করবে, তখন বাতি নিভিয়ে দেবে এবং তাকে দেখাবে যে, আমরাও খাচ্ছি।’ সুতরাং তাঁরা সকলেই খাওয়ার জন্য বসে গেলেন; মেহমান খাবার খেল এবং তাঁরা দু’জনে উপবাসে রাত কাটিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন তিনি সকালে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট গেলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা দু’জনের আজকের রাতে তোমাদের মেহমানের সাথে তোমাদের ব্যবহারে আল্লাহ বিস্মিত হয়েছেন!’’ সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৩৭৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৫৪। উপরের হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট যে, পর্দা কখনো মেহমানদারীর অন্তরায় হতে পারে না। যারা এটা করে তারা ধর্ম বোঝে না, পর্দাও বোঝে না। সুতরাং স্ত্রীর এই কথাকে কখনই প্রশ্রয় দিবেন না। মেহমানদের বাসায় নিয়ে আসবেন, খাওয়াবেন।