আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 6396

বিবাহ-তালাক

প্রকাশকাল: 4 আগস্ট 2023

প্রশ্ন

আস-সালামু আলাইকুম। আমার বাবা মুখে ৩ বার তালাক বলেছে। আমার জানা মতে এইভাবে বললে তালাক পতিত হয়। কিন্তু আমার কিছু কাছের মানুষ এইটা মানছে না। তারা বলছে ৩ তালাক বললে ১ তালাক কাউন্ট হবে। এইটা শায়েক সালেহ আল মুনাজ্জিদ, শায়েক উসাইমিন (র) তাদের ইসলামিক সাইটে ফাতোয়া দিয়েছেন। তাই অনেকে বলছে এই মতটাই স্ট্রং। এখন আমি জানতে চাচ্ছি কোন মতটা বেশি শক্তিশালী। ৩ তালাকে কি ৩ তালাক পতিত হবে নাকি ১ তালাক?

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তিন তালাক পতিত হবে এটাই অধিকাংশ ফকীহ ও আলেমের অভিমত। নীচের হাদীসটি দেখুন: حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، – وَاللَّفْظُ لاِبْنِ رَافِعٍ – قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ ابْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ الطَّلاَقُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَسَنَتَيْنِ مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ طَلاَقُ الثَّلاَثِ وَاحِدَةً فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِنَّ النَّاسَ قَدِ اسْتَعْجَلُوا فِي أَمْرٍ قَدْ كَانَتْ لَهُمْ فِيهِ أَنَاةٌ فَلَوْ أَمْضَيْنَاهُ عَلَيْهِمْ . فَأَمْضَاهُ عَلَيْهِمْ .   ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহিমাহুমাল্লাহ)… ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এবং আবূ বকর (রাযিঃ) এর যুগে ও উমার (রাযিঃ) এর খিলাফাতের প্রথম দু’ বছর পর্যন্ত তিন তালাক এক তালাক সাব্যস্ত হত। পরে উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিঃ) বললেন, লোকেরা একটি বিষয়ে অতি ব্যস্ততা দেখিয়েছে যাতে তাদের জন্য ধৈর্যের (ও সুযোগ গ্রহণের) অবকাশ ছিল। এখন যদি বিষয়টি তাদের জন্য কার্যকর সাব্যস্ত করে দেই…(তবে তা-ই কল্যাণকর হবে)। সুতরাং তিনি তা তাদের জন্য বাস্তবায়িত ও কার্যকর সাব্যস্ত করলেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭২। এই হাদীস থেকে আমরা জানতে পারছি উমরা রা. তিনি একসাথে তিন তালাককে তিন তালাক হিসেবে কার্যকর করে দিয়েছেন। আর তার আদেশ সকল সাহাবী মেনে নিয়েছে। ওমর রা. এর আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। عَنْ أَبِي نَجِيحٍ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: “وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم مَوْعِظَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا، قَالَ: أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ”. আবূ নাজীহ্ আল-’ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বক্তৃতায় আমাদের উপদেশ দান করেন যাতে আমাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে ও আমাদের চোখে পানি এসে যায়। আমরা নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে বিদায়কালীন উপদেশ; আপনি আমাদেরকে অসীয়াত করুন। তিনি বললেন: “আমি তোমাদের মহান আল্লাহকে ভয় করতে অসীয়াত করছি, আর আনুগত্য দেখাতে অসীয়াত করছি; যদি কোন গোলামও তোমাদের শাসক হয় তবুও। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে; সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের পদ্ধতি মেনে চল, তা দাঁত দিয়ে (অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) ধরে রাখ; আর অভিনব বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কারণ প্রত্যেক অভিনব বিষয় হচ্ছে বিদ’আত, প্রত্যেক বিদ’আত হচ্ছে গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন।” সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭, সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। হাদীসটি সহীহ। সুতরাং মতভেদের এই সময়ে খলীফা উমার রা. এর সিদ্ধন্ত মেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। চার মাজহাবসহ অধিকাংশ আলেম ও ফকীহর মত হলো এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হবে।