ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আপনি প্রথম দুটি প্রশ্নের উত্তর দলীলসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন আমাদের দেয়া 0932 নং প্রশ্নের উত্তর। ৩। বর্তমান যুগের বিখ্যাত ও সুপরিচিত ফিকহী কিতাব আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যাতু ও আদিল্লাতুহু এর লেখক ড. ওয়াবাহ আয-যুহাইলি বলেন, اتفق الفقهاء على أن الشاة والمعز لا تجوز أضحيتهما إلا عن واحد، وتجزئ البدنة أو البقرة عن سبعة أشخاص،
ফকীহগণ একমত যে, ছাগল ও ভেড়া একজনের পক্ষ থেকে এবং উট কিংবা গরু সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী হিসাবে যথেষ্ট হবে। আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যাতু ও আদিল্লাতুহু ৪/২৬৪। প্রখ্যাত ও বিখ্যাত ফিকহী বিশ্বকোষ আলমাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ এর আলেমগণ বলেন,
فَذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ وَالشَّافِعِيَّةُ وَالْحَنَابِلَةُ ، وَأَكْثَرُ أَهْل الْعِلْمِ : إِلَى أَنَّ الْبَقَرَةَ الْوَاحِدَةَ تُجْزِئُ عَنْ سَبْعَةِ أَشْخَاصٍ ، فَيَجُوزُ لَهُمُ الاِشْتِرَاكُ فِي الْبَقَرَةِ الْوَاحِدَةِ ، وَسَوَاءٌ أَكَانُوا أَهْل بَيْتٍ وَاحِدٍ ، أَمْ أَهْل بَيْتَيْنِ ، أَمْ مُتَفَرِّقِينَ ،
وَقَال مَالِكٌ : يُجْزِئُ الرَّأْسُ الْوَاحِدُ مِنَ الإْبِل أَوِ الْبَقَرِ أَوِ الْغَنَمِ عَنْ وَاحِدٍ ، وَعَنْ أَهْل الْبَيْتِ وَإِنْ كَثُرَ عَدَدُهُمْ وَكَانُوا أَكْثَرَ مِنْ سَبْعَةٍ
হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী মাজহাবের আলেগণ এবং অধিকাংশ আলেমের অভিমত হলো যে, একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী হিসাবে যথেষ্ট হবে। সুতরাং একটি গরুতে শরীকানা জায়েজ, চায় তারা এক পরিবারের হোক, দুই পরিবারের হোক কিংবা একাধিক পরিবারের হোক। ইমাম মালেক রহ. বলেন, উট, গরু, ছাগল এক জনের পক্ষ থেকে কিংবা এক পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া যায়। যদিও পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশী হয়, এমনকি সাত জনের বেশী হয়। ৮/১৬৩। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসিদ্ধ ও সর্বজন গ্রহনযোগ্য ফিকহী বোর্ড জান্নাত আদ-দায়েমা এর আলেমদের কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা তার উত্তরে বলেছেন,
تجزئ البدنة والبقرة عن سبعة ، سواء كانوا من أهل بيت واحد أو من بيوت متفرقين ، وسواء كان بينهم قرابة أو لا ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم أذن للصحابة في الاشتراك في البدنة والبقرة كل سبعة في واحدة ، ولم يفصل ذلك انتهى
উট এবং গরু সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী জায়েজ হবে। চাই তারা এক পরিবারের সদস্য হোক কিংবা ভিন্ন পরিবারের। তাদের মধ্যে আত্নীয়তার সম্পর্ক থাক বা না থাক। কেননা নবী সা. সাত সাহাবীকে একটি গরু বা উটে শরীক হতে আদেশ দিয়েছেন। ফাতাওয়া জান্নাত আদ-দায়েমা, ৯/৪১৬, ফাতাওয়া নং ২৪১৬। যে সব হাদীসের ভিত্তিতে আলেম ও ফকীহগণ গরু তথা বড় প্রাণীতে সাত ভাগে কুরবানী জায়েজ বলেছেন তার অন্যতম হলো হযরাত জাবীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এর হাদীস। তিনি বলেন,
نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ .
আমরা হুদায়বিয়ার বছরে রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে উট এবং গরু সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছি। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩১৮; সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ১৫০২। । অন্য বর্ণনায় জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন,
أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ
নবী সা. বলেছেন, গরু সাত জনের পক্ষ থেকে এবং উট সাত জনের পক্ষ থেকে। সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮১০। শায়খ আলবানী রহ. এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আরেকটি হাদীসে হযরত হুযাইফা রা. বলেন,
شَرَّكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّتِهِ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ فِي الْبَقَرَةِ عَنْ سَبْعَةٍ.
হজ্বের সময় রাসূলুল্লাহ সা. মুসলিমদের সাত জনকে একটি গরুতে শরীক করিয়ে ছিলেন। মুসনাদু আহমাদ, হাদীস নং ২৩৫০০। শায়খ শুয়াইব আর নাইত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এই বিষয়ে নিচের হাদীসটিও গুরুত্বপূর্ণ:
عَنْ حُجَيَّةَ بْنِ عَدِىٍّ عَنْ عَلِىٍّ قَالَ الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ. قُلْتُ فَإِنْ وَلَدَتْ قَالَ اذْبَحْ وَلَدَهَا مَعَهَا. قُلْتُ فَالْعَرْجَاءُ قَالَ إِذَا بَلَغَتِ الْمَنْسِكَ. قُلْتُ فَمَكْسُورَةُ الْقَرْنِ قَالَ لاَ بَأْسَ أُمِرْنَا أَوْ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ نَسْتَشْرِفَ الْعَيْنَيْنِ وَالأُذُنَيْنِ.
হুজাইয়া ইবনে আদী হযরত আলী রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বললেন, গরু সাত জনের পক্ষ থেকে । আমি বললাম, যদি গরুটি বাচ্চা প্রসব করে? তিনি বললেন, সেটাকেও জবাই করে দিবে। আমি বললাম, যদি পশুটি খোঁড়া হয়? তিনি বললেন, যদি কুরবানী জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত যেতে পারে তাহলে সমস্যা নেই। আমি বললাম, যদি শিং ভাঙ্গা হয়? তিনি বললেন, সমস্যা নেই। রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে দুই চোখ ও কান ভাল করে দেখতে বলেছেন। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ১৫০৩। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। শায়খ আলবানী রহ. বলেছেন, হাসান। উপরের প্রথম তিনটি হাদীসে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি রাসূলুল্লাহ সা. একটি গরু বা উটে সাত জনকে শরীক হতে অনুমতি দিয়েছিলেন। আর শেষ হাদীসে আমরা দেখতে পাচ্ছি সাহাবী আলী রা. সাত ভাগে কুরবানী দেয়া বৈধ বলেছেন। স্পষ্ট যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সা. থেকে এটাই শিখেছিলেন। ইমাম তিরমিযী রহ.-এর কথা থেকেও বুঝা যায় যে, অন্যান্য সাহাবীদের আমলও এমন ছিল। হযরত জাবের রা. থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনার পর তিনি বলেন,
وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- وَغَيْرِهِمْ وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِىِّ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِىِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ
নবী সা. এর সাহাবী এবং অন্যান্য আলেমগণের নিকট এর উপরই আমল হবে। সুফিয়ান সাউরী, ইবনুল মুবারক, শাফেয়ী, আহমাদ ও ইসহাক উক্ত মত পোষন করেছেন। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ১৫০২। উপরেরর আলোচনা থেকে আমরা জানলাম যে, ভাগে কুরবানী হাদীস দ্বারা প্রমানিত। এবং সাহাবী এবং পরবর্তী ফকীহগণ এর উপরই আমল করেছেন। এখন আমরা পূর্ব যুগের কয়েকজন বিখ্যাত আলেমের অভিমত লক্ষ্য করি:
ইমাম নববী রহ. বলেন
يجوز أن يشترك سبعة في بدنة أو بقرة للتضحية سواء كانوا كلهم أهل بيت واحد أو متفرقين
সাত জন ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি উট বা গরু কুরবানী দেয়া জায়েজ। তারা এক পরিবারের হোক বা একাধিক পরিবারের হোক। মাজমাইল ফাতাওয়া, ৮/৩৯৮। ইমাম বাইহাক্কী রহ. বলেন,
وَرُوِّينَا عَنْ عَلِىٍّ وَحُذَيْفَةَ وَأَبِى مَسْعُودٍ الأَنْصَارِىِّ وَعَائِشَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّهُمْ قَالُوا : الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ
হযরত আলী, হুজায়ফা, আবু মাসউদ আনসারী এবং আয়েশার রাদিয়াহুতায়ালা আনহুম থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা বলেছেন, গরু সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা যায়। আস-সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ১৯৭১২। ইবনে কুদামা হাম্বলী রা. বলেন,
يجوز أن يشترك في التضحية بالبدنة والبقرة سبعة،
কুরবানীর ক্ষেত্রে জায়েজ আছে যে, সাত ব্যক্তি উট কিংবা গরুতে শরীক হবে। আল-মুগনী ২২/১। বর্তমান যুগের কয়েকজন আলেমের অভিমত দেখবো যারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত: শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহি. বলেন,
قد صحّ عن النبي – عليه الصلاة والسلام – أن أمر بالاشتراك في البدنة والبقرة عن سبعة নবী আলাইহিস সলাতু ওয়াসসালাম থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি উট এবং গরুতে সাত জনকে শরীক হতে আদেশ করেছেন। দেখুন,
http://www.binbaz.org.sa/noor/2803“””