আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 195

নামায

প্রকাশকাল: 12 আগস্ট 2006

প্রশ্ন

আস্সালামু আলাইকুম, কেমন আছেন, একটি ব্লগে দেখলাম একজন চরম ভাবে রাসুলের হাদিসের প্রতি ওনিহা সেই বলছে কোরআনে সালাতের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোন ওক্তে কয় রাকাত পড়তে হবে তা নেই এমন কি সে বলে তোমরা যে হাদিসের কথা বলো তাতেও নেই সুতরাং নিজের ইচ্ছা মাপিক রাকাত পড়া যাবে ওক্ত সমূহে। । এমন চরম অনিহা পুর্ণ কথা মানতে পারছি না তাই অনুগ্রহ করে কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল গুলো দিয়ে উপকৃত করুন।

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকআত সংখা উল্লেখ আছে। ইসলাম সম্পর্কে চরম অজ্ঞ কিংবা ইসলামের চরম শত্রু, এমন লোকেরাই কেবল এধরনের মন্তব্য করতে পারে। নিচে সংক্ষেপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলো: নিচের উল্লেখিত এই হাদীস দ্বারা আমারা জানতে পারি যে, ফজরের নামায দুই রাকআত, জোহর, আসর, ঈশা চার রাকআত আর মাগরিব তিন রাকআত। হাদীসটি হলো: عَنْ عَائِشَةَ ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قَالَتْ : كَانَ أَوَّلَ مَا افْتُرِضَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلاَةُ : رَكْعَتَانِ رَكْعَتَانِ ، إِلاَّ الْمَغْرِبَ ، فَإِنَّهَا كَانَتْ ثَلاَثًا ، ثُمَّ أَتَمَّ اللَّهُ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْعِشَاءَ الآخِرَةَ أَرْبَعًا فِي الْحَضَرِ ، وَأَقَرَّ الصَّلاَةَ عَلَى فَرْضِهَا الأَوَّلِ فِي السَّفَرِ تعليق شعيب الأرنؤوط : إسناده حسن من أجل ابن إسحاق অর্থ: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর প্রথমে দুই দুই রাকআত করে নামায ফরয হয়েছিল, তবে মাগরিব তিন রাকআত ছিল। এরপর আল্লাহ তায়ালা সাধারণ সময়ে (সফর বাদে) জোহর, আসর ও ঈশা চার রাকআত পূর্ণ করে দেন। আর সফর অবস্থায় পূর্বের বিধান বহাল রাখলেন। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৬৩৮১। শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আরো কিছু হাদীস নিচে উল্লেখ করা হলো যে সব হাদীস থেকে আমরা বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাযের রাকআত সংখা জানতে পারি: عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فِى الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ فِى الْحَضَرِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ وَصَلَّيْتُ مَعَهُ فِى السَّفَرِ الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ وَالْعَصْرَ رَكْعَتَيْنِ وَلَمْ يُصَلِّ بَعْدَهَا شَيْئًا وَالْمَغْرِبَ فِى الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ سَوَاءً ثَلاَثَ رَكَعَاتٍ لاَ تَنْقُصُ فِى الْحَضَرِ وَلاَ فِى السَّفَرِ وَهِىَ وِتْرُ النَّهَارِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ. قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সফরে এবং সাধারণ সময়ে নামায পড়েছি। আমি তার সাথে সাধারণ অবস্থায় যোহর চার রাকআত পড়েছি। এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। আমি তাঁর সাথে সফরে জোহর দুই রাকআত পড়েছি এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। এরপর আর কিছু তিনি কোন নামায পড়েন নি। আর মাগরিব সফর ও সাধারণ উভয় অবস্থায় তিন রাকআত পড়েছি। সফরে এবং সাধারণ অবস্থা কোন সময়ই তা কম করা হয় না আর সেটা হলো দিনের বিতর এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ৫৫৫। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম জোহরের নামায চার রাকআত আর মাগরিবের নামায তিন রাকআত। আর এই নামাযেরগুলোর পরে দু রাকআত করে সুন্নাত আছে। عَنْ قَيْسِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ رَأَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- رَجُلاً يُصَلِّى بَعْدَ صَلاَةِ الصُّبْحِ رَكْعَتَيْنِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- صَلاَةُ الصُّبْحِ رَكْعَتَانِ فَقَالَ الرَّجُلُ إِنِّى لَمْ أَكُنْ صَلَّيْتُ الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا فَصَلَّيْتُهُمَا الآنَ. فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- অর্থ: কাইস ইবনে আমর বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. একজন লোককে দেখলেন, ফজরের নমাযের পর দুই রাকআত নামায পড়ছে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ফজরের নামায তো দুই রাকআত। তখন লোকটি বলল, আমি এর পূর্বের দুই রাকআত পড়িনি তাই এখন তা পড়ছি। তখন রাসূলুল্লাহ সা. চুপ থাকলেন। সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৬৯। হাদীসটি সহীহ। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম ফজরের নামায দুই রাকআত। عَنْ أَنَسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا وَالْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ وَسَمِعْتُهُمْ يَصْرُخُونَ بِهِمَا جَمِيعًا অর্থ: আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (বিদায় হজ্জের সফরের সময়) রাসূল সা. মদিনায় যোহর সালাত চার রাকআত আদায় করেন। (সফর শুরু করে) যুল হুলাইফা পৌঁছানোর পর তথায় আসর সালাত (কসর হিসেবে) দু রাকআত আদায় করেন। আমি শুনলাম সাহাবীগণ হজ্জ ও উমরার জন্য একত্রে (কিরান হজ্জের) তালবিয়া পড়ছেন চিৎকার করে। । সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪৮। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম জোহর নামায চার রাকআত ও আসরের নামায সফর অবস্থায় দুই রাকআত। এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে নামাযের রাকআত সংখা নিয়ে অনেক হাদীস উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য এখানে আমরা পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামায সমূহের রাকআত সংখা নিয়ে আলোচনা করেছি। সুন্নত নামায নিয়ে নয়। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কোন ওয়াক্তে নামায কত রাকআত তা হাদীসে বিষদভাবে বর্ণিত আছে। এছাড়াও এটা রাসূলুল্লাহ সা. থেকে এখন পর্যন্ত উম্মতের কর্মধারা দ্বারা প্রমানিত। সুতরাং কারো কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই।