আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 194

ইতিহাস

প্রকাশকাল: 11 আগস্ট 2006

প্রশ্ন

ইসলামী নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি কি? হযরত উমর (রা), হযরত ওসমান(রা), হযরত আলী (রা) কোন পদ্ধতিতে খলিফা নির্বাচিত হয়ে ছিল? দুটি প্রশ্নের উত্তর কামনা করছি।

উত্তর

রাসূলুল্লাহ সা.-এর আগমনের সময় সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছিল মূলত বংশতান্ত্রিক। রাষ্ট্রের মালিক রাজা। তার অন্যান্য সম্পদের মতই রাষ্ট্রের মালিকানাও লাভ করবে তার বংশধরেরা। রাজ্যের সকল সম্পদ-এর মত জনগণও রাজার মালিকানাধীন। রাজা নির্বাচন বা রাজ্যপরিচালনা বিষয়ে তাদের কোনো মতামত প্রকাশের সুযোগ বা অধিকার নেই। রাসূলুল্লাহ সা. সর্বপ্রথম একটি আধুনিক জনগণতান্ত্রিক পরামর্শ-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এ ব্যবস্থার দুটি বিশেষ দিক ছিল: (১) রাজা ও প্রজার সম্পর্ক মালিক ও অধীনস্থের নয়, বরং মালিক ও ম্যানেজারের। তবে মালিক রাজা নন। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। রাজা তাদের খলীফা বা প্রতিনিধি বা ম্যানেজার হিসেবে তা পরিচালনা করবেন। জনগণই তাকে মনোনিত করবেন এবং জনগণ তাকে সংশোধন বা অপসারন করবেন। (২) রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ করা একটি জাগতিক কর্ম এবং তা জনগণের কর্ম। জনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে তা সম্পন্ন হবে। পরামর্শের ধরন নির্ধারিত নয়। যুগ, দেশ ও জাতির অবস্থা অনুসারে তা পরিবর্তিত হতে পারে। ইসলামী ব্যবস্থায় পূর্ববর্তী শাসক কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে বিষয়টি জনগণের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিতে পারেন। অথবা জনগণের পরামর্শ ও স্বীকৃতির ভিত্তিতে যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দিতে পারেন। সবচেয়ে বেশি যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয় নি; কারণ সবচেয়ে যোগ্য নির্ণয়ে সমাজে অকারণ সংঘাত তৈরি করে। ইসলামে জনগণের পরামর্শ ও স্বীকৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ ও স্বীকৃতি থাকলে নিজ পুত্র বা বংশের কাউকে পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দিতে কোনোভাবে নিষেধ করা হয় নি। মূলত বিষয়টি দেশ, কাল ও সমাজের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এ ব্যবস্থার আওতায় রাসূলুল্লাহ সা. কাউকে মনোনিত না করে উম্মাতকে সরাসরি নির্বাচনের মুখোমুখি রেখে যান। আবূ বকর (রা) নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শক্রমে উমারকে (রা) পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে যান। উমার (রা) ৬ জনের একটি কমিটিকে মনোনয়ন দেন, যারা জনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে তাঁদের মধ্য থেকে উসমানকে (রা) মনোনয়ন দেন। উসমান (রা)-এর শাহাদতের পরে মদীনার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ পরামর্শের মাধ্যমে আলী (রা)-কে শাসক মনোনিত করেন। আলী (রা) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর পুত্র হাসান (রা)-কে পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দেন।