ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কুরবানী একটি বড় ইবাদাত। কুরআনে সূরা কাউসারে কুরাবনী করতে আদেশ করা হয়েছে এবং অনেকগুলো সহীহ হাদীসে কুরবানী করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী পরিত্যাগকারীকে ধমক দেয়া হয়েছে। কুরাবনী দেয়া অধিকাংশ আলেমের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও করবানী না করা মাকরুহ। এই বিষয়ে বিখ্যাত ফিকহী বিশ্বকোষ আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ এর ভাষ্য হলো, ذَهَبَ جُمْهُورُ الْفُقَهَاءِ ، وَمِنْهُمُ الشَّافِعِيَّةُ وَالْحَنَابِلَةُ ، وَهُوَ أَرْجَحُ الْقَوْلَيْنِ عِنْدَ مَالِكٍ ، وَإِحْدَى رِوَايَتَيْنِ عَنْ أَبِي يُوسُفَ إِلَى أَنَّ الأُْضْحِيَّةَ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ . وَهَذَا قَوْل أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَبِلاَلٍ وَأَبِي مَسْعُودٍ الْبَدْرِيِّ وَسُوَيْدِ بْنِ غَفَلَةَ وَسَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ وَعَطَاءٍ وَعَلْقَمَةَ وَالأْسْوَدِ وَإِسْحَاقَ وَأَبِي ثَوْرٍ وَابْنِ الْمُنْذِرِ অর্থ: অধিকাংশ ফকীহ মত পোষন করেছেন যে, কুরবানী সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তাদের মধ্যে আছেন, শাফেয়ী ও হাম্বলীগণ, ইমাম মালেক (দুই মতের মধ্যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত), আবু ইউসুফ (এক মতানুযায়ী) রহ.। একই মত পোষন করেছেন, আবু বকর রা., উমার রা., বিলাল রা., আবু মাসউদ আল-বাদারী, সুয়াইদ ইবনে গফলাহ, সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব, আাতা, আলকামাহ, আসওয়াদ, ইসহাক, আবু সাওর ইবনে মুনযির। আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৫/৭৬। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إِذَا دَخَلَتِ الْعَشْرُ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّىَ فَلاَ يَمَسَّ مِنْ شَعَرِهِ وَبَشَرِهِ شَيْئًا অর্থ: যখন জ্বিলহজ্জের দশ তারিখ আসবে আর তোমাদের কেউ কুরবানী করতে চাইবে তখন সে যেন তার চুল এবং চামড়ার কোন কিছু স্পর্শ না করে। সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫২৩২। উক্ত হাদীসে কুরবানী করাকে চাওয়া তথা ইচ্ছা এর উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং কুরবানী ওয়জিব নয় সুন্নাত। নচিরে হাদীস দুটি লক্ষ্য করুন:
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ هِشَامٍ ، وَكَانَ قَدْ أَدْرَكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَذَهَبَتْ بِهِ أُمُّهُ زَيْنَبُ ابْنَةُ حُمَيْدٍ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ بَايِعْهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم هُوَ صَغِيرٌ فَمَسَحَ رَأْسَهُ وَدَعَا لَهُ ، وَكَانَ يُضَحِّي بِالشَّاةِ الْوَاحِدَةِ عَنْ جَمِيعِ أَهْلِهِ
র্অথ: আব্দুল্লাহ ইবনে হশিাম থকেে র্বণতি (তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে পয়েছেলিনে), তারা আম্মা যায়নাব বনিতে হুমাইদ তাকে রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে নয়িে গয়িছেলিনে। তনিি রাসূলুল্লাহ সা. কে বললনে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ওকে বায়াত করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললনে, সে তো ছোট। তিনি তার মাথায় হাত বুলয়িে দলিনে এবং তার জন্য দোয়া করলনে। আর তনিি তার পরবিাররে সকলরে পক্ষ থকেে একটি ছাগল দ্বারা কুরবানী করছেলিনে। সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭২১০। أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ ، اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيمَيْنِ ، سَمِينَيْنِ ، أَقْرَنَيْنِ ، أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوءَيْنِ ، فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ ، لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ ، بِالتَّوْحِيدِ ، وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ ، وَذَبَحَ الآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ ، وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ.
র্অথ: রাসূলুল্লাহ সা. যখন কুরবানী দয়োর ইচ্ছা করতনে তখন দুটি বশিাল বড় সাইযরে সুন্দর দখেতে খাসী করা কাটান দওেয়া পুরুষ মষে বা ভড়ো ক্রয় করতনে। তাঁর উম্মতরে যারা তাওহীদ ও তাঁর রসিালাতরে সাক্ষ দয়িছেতে তাদরে পক্ষ থকেে একটি কুরবানী করতনে এবং অন্যটি মুহাম্মাদ সা. এবং মুহামাদ সা. এর পরবিাররে পক্ষ থকেে কুরবানী করতনে। ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩১২২; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৫৮২৫। হাদীসটি হাসান। এই হাদীস দুটরি ভত্তিতিে ইমাম মালকে, ইমাম আহমাদ,ইমাম শাফয়েী রাহ. প্রমুখ ফকীহ বলনে একটি পরবিাররে পক্ষ থকেে একটি কুরবানী যথষ্টে হব। ইমাম শাফয়েী রহ. আরো বলনে, প্রত্যেকের জন্য জীবনে একবার কুরবানী দেয়া সুন্নাত। দখেুন, সুনানু তরিমযিী, হাদীস নং ১৫০৫; তুহফাতুল আহওযী, ১৪২৫ নং হাদীসরে আলোচনা; মুয়াত্তা মালকি,হাদীস নং ১০৩৩। হানাফী মাজাহাবের আলেমগণের মতে কুরবানী ওয়াজিব। এই বিষয়ে বিখ্যাত ফিকহী বিশ্বকোষ আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ এর ভাষ্য হলো, وَذَهَبَ أَبُو حَنِيفَةَ إِلَى أَنَّهَا وَاجِبَةٌ . وَهَذَا الْمَذْهَبُ هُوَ الْمَرْوِيُّ عَنْ مُحَمَّدٍ وَزُفَرَ وَإِحْدَى الرِّوَايَتَيْنِ عَنْ أَبِي يُوسُفَ . وَبِهِ قَال رَبِيعَةُ وَاللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ وَالأَْوْزَاعِيُّ وَالثَّوْرِيُّ وَمَالِكٌ فِي أَحَدِ قَوْلَيْهِ অর্থ: আবু হানিফা রাহ. এর মতে কুরবানী ওয়াজিব। আরো যে সব ফকহী উক্তমত পোষন করেছেন তারা হলেন, ইমাম মুহাম্মাদ, আবু ইউসুফ ((এক মতানুযায়ী), যুফার রহ.। অন্যান্যদের মধ্যে এই মত পোষন করেছেন, রবি, লাইস ইবনে সাদ, আওযায়ী, ছাওরী এবং ইমাম মালেক রহ. (এক মতানুযায়ী)। আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৫/৭৭। তাদের দলীল হলো রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, : مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ ، وَلَمْ يُضَحِّ ، فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا. অর্থ: যার সামর্থ আছে অথচ কুরবানী করছে না সে যেন ঈদগাহে (সালাত আদায় করতে) না আসে। সুনানু ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৩১২৩; আল-মুসতাদরক, ইমাম হাকিম, হাদীস নং ৭৫৬৫। হাদীসটিকে ইমাম হাকীম ও শায়খ যাহাবী রহ. সহীহ বলেছেন এবং শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন। সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে আমাদের দেশে নিসাব পরিমান মালিক বলা হয়। হানাফী মাজহাব অনুযায়ী সামর্থ্য আছে অর্থাৎ নিসাবের অধিকারী প্রত্যেকের উপর কুরবাণী ওয়াজিব। এক পরিবারের একাধিক সদস্যদের সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেকের উপরই কুরবানী ওয়াজিব। এই বিষয়ে ইমাম ও আলেমগণের মতামত এবং তাদের দলীল বিস্তারিত জানতে দেখুন, আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু, ৪/২৪৫-৪৬; আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৫/৭৬-৭৭; আল-ফিকহ আলা মাজাহিবির আরবা, ১/১১০৭। এবার আসি আপনার মূল প্রশ্নের উত্তরে। যার কুরবানী করার সামর্থ্য বা সক্ষমতা আছে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। সামর্থ্য বা সক্ষমতা কোন ব্যক্তির আছে তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। এই বিষয়ে আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু এর ভাষ্য হলো,
والمقصود بالقدرة عند الحنفية، هو اليسار أي يسار الفطرة ، وهو أن يكون مالكاً مئتي درهم الذي هو نصاب الزكاة، أو متاعاً يساوي هذا المقدار زائداً عن مسكنه ولباسه، أو حاجته وكفايته هو ومن تجب عليه نفقتهم
والقادر عليها عند المالكية: هو الذي لا يحتاج إلى ثمنها لأمر ضروري في عامه. ولو استطاع أن يستدين استدان. والمستطيع عليها عند الشافعية : هو من يملك ثمنها زائداً عن حاجته وحاجة من يعوله يوم العيد وأيام التشريق، لأن ذلك وقتها، مثل زكاة الفطر، فإنهم اشترطوا فيها أن تكون فاضلة عن حاجته مَمونة يوم العيد وليلته فقط.والقادر عليها عند الحنابلة: هو الذي يمكنه الحصول على ثمنها ولو بالدين، إذا كان يقدر على وفاء دينه
অর্থ: হানাফী আলেমদের নিকট সক্ষমতা দ্বারা উদ্দেশ্য কারো কাছে তার এবং তার অধিনস্থ অন্যান্যদের বাসস্থান, পোশাক এবং নিতপ্রয়োজনীও দ্রব্যাদির বাইরে ২০০ দিরহাম রোপা বা এই পরিমান সম্পদ থাকা। (২০০ দিরহাম হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা)। মালেকীদের নিকট কারো কাছে যদি নিত্য প্রয়োজনীও ব্যায় মেটানোর পর কুরাবানী দেয়ার মত সম্পদ থাকে, যা এক বছরের মধ্যে তার প্রয়োজন হবে না তাহলে সে সক্ষম বলে বিবেচিত। শাফেয়ী আলেমদের নিকট কুরবানীর দিনগুলোতে যদি কোন ব্যক্তির কাছে নিত্য প্রয়োজনীও ব্যায় মেটানোর পর কুরবানী দেয়ার মত সম্পদ থাকে তাহলে সেই সামর্থবান ব্যক্তি। হাম্বলীদের নিকট যদি কোন ব্যক্তি কুরবানী দেয়ার মত সম্পদ অর্জন করতে পারে সে সামথ্যবান ব্যক্তি । এমনকি ঋন নিয়ে কুরবানী করে যদি ঋন পরিষোধ করতে সক্ষম হয় তাহলে সেও তাদের নিকট কুরবানী করতে সক্ষম বলে বিবেচিত। আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু, ৪/২৫০। আরো জানতে দেখুন, আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৫/৮০; আল-ফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা ১/১১০৯। হানাফী মাজহাবে সক্ষম ব্যক্তির (অর্থাৎ কুরবানীর নেসাব পরিমান সম্পদ আছে এমন ব্যক্তির) পরিচয় আরো বিস্তারিত এভাবে বলা যায়: প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তষ্কি সম্পন্ন প্রত্যকে মুসলমি নর-নারী, যে ১০ যলিহজ্ব ফজর থকেে ১২ যলিহজ্ব র্সূযাস্ত র্পযন্ত সময়রে মধ্যে (নিত্য)প্রয়োজনরে অতরিক্তি (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং অন্যান্য জরুরী জিনিসপত্ররে অতরিক্তি)নিসাব পরমিাণ সম্পদরে মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজবি। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকরি প্রয়োজন আসে না এমন জমি প্রয়োজন অতরিক্তি বাড়ি, ব্যবসায়কি পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নসোবরে ক্ষত্রেে হসিাবযোগ্য। আর নিসাব হল র্স্বণরে ক্ষত্রেে সাড়ে সাত (৭.৫)ভরি রূপার ক্ষত্রেে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষত্রেে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যরে সমপরমিাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নিসাব পরমিাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতরিক্তি একাধকি বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যরে সমপরমিাণ হয়ে যায় তাহলওে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজবি। – আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানযি়া ১৭/৪০৫(মাসিক আলকাউসার, অক্টোবর, ২০১২ থেকে নেয়া)। আমাদের দেশে সাধারণত হানাফী মাজাহাবের মতামত মেনে চল হয় তাহলে আপনার জন্য হানাফী মাজাহাবরের মতামত অনুযায়ী চলাই উচিত হবে। তাছাড়া সুন্নাত বলার কারণে অনকে দশেে কুরাবনীর মত এই মহা সওয়াবরে কাজ থকেে মানুষ দূরে সরে যাচ্ছ। আর কুরআনে কুরবানী করতে আদশে দয়ো হয়ছে। সুতরাং কুরবানী ওয়াজবি বলার মধ্যইে সতর্কতা। অন্যের সাথে কুরবানী করার ক্ষেত্রে মিনিমাম ইনকাম ধর্তব্য নয় বরং আপনার সক্ষমতা আছে কি নেই এটাই ধর্তব্য। সামর্থ্য থাকলে আপনি একাও দিতে পারেন আবার অন্যের সাথ ভাগেও দিতে পারেন। আল্লাহ ভাল জাননে।