আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 749

অর্থনৈতিক

প্রকাশকাল: 17 ফেব্রু. 2008

প্রশ্ন

সুরা ফাতিহা না পড়লে নামায হয না (সহীহ বুখারী তাওহীদ প্রকাশনি 1ম খণ্ড 367 পৃঃ হাদিস নং 756)
আমার প্রশ্ন জামাতে নামায পড়তে গিয়ে যদি দেখি ইমাম সাহেবের সুরা ফাতিহা তেলওয়াত শেষ তখন কি আমি একা সূরা ফাতিহা পড়ে নিব? অনেকে বলে ইমাম সাহেব পড়লে পিছনে যারা নামায পড়ে তাদের পড়া হয়ে যায় এই কথার কী কোন সহীহ হাদিস আছে? প্রমাণ সহ উত্তর দিবেন দয়া করে

উত্তর

ভাই, এটা অনেক পুরাতন প্রশ্ন। ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া বিষয়ে ফকীহদের মতামত জানতে দেখুন আমাদের দেয়া ১৪০ নং প্রশ্নের উত্তর। ইমামের পিছনে সূরা পড়তে হলে কখন পড়তে হবে এই নিয়ে যারা পড়তে বলেন তাদের মাঝেও অনেক মতভেদ আছে। আপনাকে যারা বলেছে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন, এই অবস্থায় আপনি কি করবেন। যে সব সালাতে স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় সেসব সালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতহা পড়তে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসসহ বিস্তারিত দেখুন, আমদের দেয়া ২৫৯ নং প্রশ্নের উত্তরে। ইমাম পড়লে পিছনে যারা পড়ে তাদের পড়া হয়ে যায় এই মর্মে দুটি হাদীস নিচে আলোচনা করছি: হযরত জাবের রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সা. বলেছেন, مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ، فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ অর্থযা: র ইমাম থাকবে ইমামের পড়াই তার পড়া। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৪৬৬৩। হাদীসটিকে শায়খ শুয়াইব আরনাউত (তালীক মুসনাদ আহমাদ) ও শায়খ আলবানী রহ. (ইরওয়াউল গলীল, হাদীস নং ৫০০) হাসান বলেছেন। অপর একটি হাদীসে তাবেয়ী নাফে বলেন, عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا سُئِلَ: هَلْ يَقْرَأُ أَحَدٌ خَلْفَ الإِمَامِ؟ يقول: إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ خَلْفَ الإِمَامِ فَحَسْبُهُ قِرَاءَةُ الإِمَامِ، وَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ فَلْيَقْرَأْ، قَالَ: وَكَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ لاَ يَقْرَأُ خَلْفَ الإِمَامِহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. এর কাছে যখন জানতে চাওয়া হতো ইমামের পিছনে কি মুক্তাদি পড়বে? তখন তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ ইমামের পিছনে সালাত আদায় করবে তখন ইমামের পড়াই তার জন্য যথেষ্ট। আর যখন একাকী সালাত আদায় করবে তখন পড়বে। নাফে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ইমামের পিছনে পড়তেন না। মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস নং ১৯২। হাদীসটি সহীহ। ইমাম মালেক রহ. অবশ্য বলেছেন, এটা স্বশব্দে কুরআন পড়া সালাতে ক্ষেত্রে প্রযোয্য। হাদীসে স্পষ্টভাবে এটা উল্লেখ নেই। স্যার রহ. স্বশব্দে পড়া হয় এমন সালাতে সূরা ফাতিহ না পড়া এবং নি:শব্দে পড়া হয় এমন সালাত সূরা ফাতিহা পড়ার কথা বলতেন।সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বিষয়টি এভাবেই বলেছেন, عن أبي هريرة : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم انصرف من صلاة جهر فيها بالقراءة فقال هل قرأ معي أحد منكم آنفا ؟ فقال رجل نعم يا رسول الله قال إني أقول مالي أنازع القرآن ؟ ! قال فانتهى الناس عن القراءة مع رسول الله صلى الله عليه و سلم فيما جهر فيه رسول الله صلى الله عليه و سلم من الصلوات بالقراءة حين سمعوا ذلك من رسول الله صلى الله عليه و سلم অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, একদা স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় এমন নামায শেষ করে রাসূল (সা.) ফিরে তাকিয়ে বললেন, তোমাদের কেউ কি একটু আগে আমার সাথে পড়েছে? তখন একজন লোক বললেন, হ্যাঁঁ, ইয়া রাসূলূল্লাহ। এরপর রাসূল (সা.) বললেন, আমার সাথে কুরআন নিয়ে ঝগড়া করা হচ্ছে কেন? আবু হুরায়রা বলেন, এরপর থেকে যে সব নামাযে রাসূল (সা.) স্বশব্দে কুরআন পড়তেন তখন মানুষেরা পড়া থেকে বিরত থাকতেন। তিরমিযী: হাদিস নং ৩১২। ইমাম তিরমিযী (র.) বলেছেন, হাদীসটি হাসান আর শায়খ আলবানী বলেছেন, সহীহ। তবে কেউ যদি সূরা ফাতিহা ইমামের পিছনে পড়তে চা্ই তার অনুমতি আছে। আদেশ নয়। অন্য একটি হাদীস থেকে তা আমরা দেখতে পাই। عن محمد بن أبي عائشة عن رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم قال قال النبي صلى الله عليه و سلم : لعلكم تقرءون والإمام يقرأ مرتين أو ثلاثا قالوا يا رسول الله انا لنفعل قال فلا تفعلوا الا ان يقرأ أحدكم بفاتحة الكتاب অর্থ: মুহাম্মাদ ইবনে আয়েশা একজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা.) একদা বললেন, সম্ভবত তোমরা ইমামের পড়া অবস্থায ইমামের সাথে সূরা পড়, তিনি দুই তিনবার এই কথা বললেন। তখন সাহাবীর বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা এমন করি। তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন করবে না, তবে তোমাদের যে কেউ সূরা ফাতিহা পড়তে পারো। মুসনাদে আহমাদ: হাদীস নং ১৮০৯৫ ও আস-সুনানুল কুবরা: হাদীস নং ৩০৩৯। শুয়াইব আরনাউত বলেছেন, হাদীসের সনদ সহীহ, ইমাম বায়হাক্কী বলেছেন, সনদটি ভাল, শায়খ আলবানী রহ. বলেছেন, هذا إسناد جيد এটা ভাল সনদ। আল্লাহ ভাল জানেন।