খাদ্য দিয়ে দিলে সকল আলেমের মতে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। তবে অর্থর্ দ্বারা যাকাতুল ফিতর আদায় করার ব্যাপারে ফকীহদের মাঝে দুটি মত বিদ্যমান। হবে এবং হবে না। ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান সাওরী, উমার ইবনে আব্দুল আযীয, ইবনে তাইমিয়া রহ.সহ প্রমুখ আলেমের নিকট অর্থ দিয়ে আদায় করলে জায়েজ হবে বরং ক্ষেত্রে বিশেষ এটাই উত্তম হবে। পক্ষান্তরে ইমাম মালেক, আহমাদ, শাফী রহ.সহ অধিকাংশ আলেম বলেছন খাদ্য ছাড়া অন্য কোন কিছু দিয়ে আদায় করলে হবে না। যারা বলেন খাদ্য দিয়েই ফিতরা দিতে হবে তাদের দলীল: ইবনে উমার রা. বলেন, রা.
فرض رسول الله صلى الله عليه و سلم زكاة الفطر صاعا من تمر أو صاعا من شعير على العبد والحر والذكر والأنثى والصغير والكبير من المسلمين وأمر بها أن تؤدى قبل خروج الناس إلى الصلاة অর্থ: রাসূলুল্লা সা. সদকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এক সা. (সাড়ে তিন কেজির মত ) খেজুর অথবা জব। স্বাধীণ, গোলাম, নারী, পুরুষ, ছোট-বড় প্রতিটি মুসলিমের উপর। এবং তিনি ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই ফিৎরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩২। এছাড়া অনেক সহীহ হাদীসে গম, কিসমিস, আখরোট ও খাবারের কথা উল্লেখ আছে। যারা বলেন অর্থ তথা টাকা-পয়সা দিয়ে আদায় করলেও জায়েজ হবে তাদের দলীল: সাহাবী মুআয রা. ইয়ামানবাসীদের বলেন,
ائتُوني بعَرْضٍ : ثيابٍ خَميصٍ ، أَو لَبيسٍ في الصدقة ، مكان الشعير والذُّرة ، أَهوَنُ عليكم ، وَخَيْرٌ لأصحاب رسولِ الله -صلى الله عليه وسلم- بالمدينة
অর্থ: তোমরা জব এবং ভুট্টার পরবর্তে পোশাক সদকা (যাকাত কিংবা ফিতরা) দাও। কেননা তা তোমাদের জন্য সহজ এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহবীদের জন্য কল্যানকর। সহীহ বুখারী, বা-বুল আরযি ফিয যাকাত, ২/১১৬। এছাড়া উমার ইবনে আবদুল আযীয, হাসান বসরী রহ. ফিতরার ক্ষেত্রে মূল্য নিতে বলেছেন বলে বর্ণিত আছে। দেখুন, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১০৪৬৯-১০৪৭৩। ১০৪৭০ নং হাদীসটির আরবী পাঠ নিম্নরুপ:
حدثنا وكيع ، عن قرة ، قال : جاءنا كتاب عمر بن عبد العزيز في صدقة الفطر : نصف صاع عن كل إنسان ، أو قيمته نصف درهم
এ বিষয়ে আরো জানতে দেখুন, আলফিকহুল ইসলাম্যিু ও আদিল্লাতুহু ৩/ ৩৮৩,৩৮৫। বর্তমানে মূল্য দ্বার ফিতরা জায়েজ হওয়া মতটাই বেশী যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। ঈদের দিন এখন মানুষের ময়দা বা কিসমিস বেশী প্রয়োজন হয় না । বেশী প্রয়োজন হয় চাল, গোশাত, সেমাই-চিন, জামা কাপড় ইত্যাদি। সহীহ হাদীসে অবশ্য খাবারের কথা বলা হয়েছে সে হিসাবে আপনি চাল দিতে পারেন। এখন যদি আমরা সবাই তাদেরকে চাল বা ময়দা দেই তাহলে গরীবরা অন্য জিনিসগুলো কোথায় পাবে? বিতর্কের সূত্রে যদি কেউ বলে এগুলো বিক্রি করে গোশত, সেমাই-চিনি কিনবে তাহলে এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, গরীব মানুষেরা এক্ষেত্রে ন্যায্য মূল্য পাবে না। কারণ এসব ক্ষেত্রে নানা জনের নানান রকম দ্রব্য এক হয়ে মান কমে যায়, যার কারণে মূল্যও কমে যায়।সতরাং সাহাবীদের থেকে যেহেতু খাদ্যের বদলে কাপড় দেয়ার কথা উল্লেখ আছে এবং একদল আলেম মুদ্রা দিলেও জায়েজ হবে বলেছেন সেক্ষেত্রে কেউ যদি মুদ্রা দিয়ে যাকাতুল ফিতরা আদায় করে তাহলে বিতর্কে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের যার যেভাবে ভাল লাগবে আমারা সেভাবে ফিতরা আদায় করবো। তবে সব সময় গরীব মানুষের প্রয়োজনটার দিকে বেশী লক্ষল করবো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দিন। আমীন