আস-সালামু আলাইকুম, আমি একজন বিবাহিতা নারী। আমার জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। এখানে বড় হয়েছি। আমি ইংরেজিতে এম এ করেছি। ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী আমার বিয়ে হয়, শশুর বাড়ি রাউজানের একটি গ্রামে। বিয়ের দুই মাসের মাথায় আমার স্বামী সৌদি আরব চলে যান। আমাদের বাড়ি নীচতলায়। আমি পরিপূর্ণ পর্দা করে চলি। বিয়ের পর থেকে বুঝতে পারি আমার বাসার বাইরে যাওয়া মানে উঠানে দাঁড়ানোটাও আমার শ্বাশুড়ির মোটেও পছন্দ না।
বলে রাখা ভালো উনি আর আমি ছাড়া ওই বাড়িতে আর কেউ থাকতাম না। আমি সারাদিন ঘরের ভেতর বন্দী থাকতাম। প্রচন্ড গরমেও একটু বাইরে বেরিয়ে উঠানে বসাটা ওনার পছন্দ না। এদিকে রাত দিন একটা বাসার একটা রুমে থাকতে থাকতে আমি হাঁপিয়ে উঠি। আমি বাবার বাসায় আসতে চাইলে আমার স্বামীকে দিয়ে বলায় ঠিক কয়দিন থাকব? কয়দিনে ফিরে আসব? ওই দিনেই চলে যেতে হবে। আমার এক দেবর আছে। সে ওদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে চট্টগ্রাম শহরে আছে। সে মাকে দেখতে যায় না।
তার মার প্রতি তার দায়িত্বের কথা কেউ বলত না। কেবল আমাকে আমাকে বলা হত আমার শাশুড়ী একা আমি আমার বাড়ীতে গিয়ে ২/৩ দিনের বেশি থাকতে পারব না। আমার মা আমার শাশুড়ীর চেয়ে বেশি অসুস্থ। তবুও ওরা থাকা নিয়ে অনেক ঝামেলা করত। আমার স্বভাব চুপচাপ থাকা কম কথা বলা। এটা নিয়েও উনি বলতেন আমি কথা বলি না। এর পর আরো অনেক আছে।আমার দায়িত্ব ছিল কেবল শাক, ভর্তা, ডাল, সবজি এসব রাঁধা। ওনার অনুমতির বাইরে কিছু রাঁধলে উনি খেতেন না।
গত রমজানের সময় সেহেরীতে আমাকে একটা খেজুর খেতে দেখে প্রায় সব খেজুর সরিয়ে ফেলেছেন। আমি পর দিন ইফতারের দশ মিনিট আগে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম সরিয়ে রেখেছেন কি না। কিন্তু উনি মিথ্যা বললেন যে প্রতিবেশীদের দিয়েছেন। আমি বুঝলাম মিথ্যা বলছে। কারণ কারো সাথে ওনার এত ভাল সম্পর্ক নাই সেখানে। পরে প্রতিবেশীর কাছে কৌশলে আমি জিজ্ঞেস করেছি। ওরা জানায় দেয় নি। যাই হোক মনের দুঃখে কিছু কথা কাজের মানুষকে বলে ফেলেছিলাম। গত জুনে আমার স্বামী বিদেশ থেকে আসেন।
আমি আমার স্বামী সহ আগস্টে একটি কাজে ঢাকা যাই। ফিরে আমার বাবার বাসায় উঠি। ২ দিন পর স্বামী আমাকে নিতে আসবে বলে। আমি আরো কয়েক দিন থাকার জন্য অনুরোধ করি কারণ আমার বড় বোন তার ৪ বছরের ছেলেটিকে রেখে জরূরী প্রয়োজনে কুমিল্লা যান। আর বাচ্চাটিও আমাকে ছাড়া থাকছিল না কারণ ওকে ছোট থেকে আমি লালন পালন করেছি। কিন্তু ও আমার পরিবারের সদস্যদের ওর সংসারের কেউ না বলে আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে ফোন রেখে দেয়। আর ফোন দেয় না।
সেপ্টেম্বরের নয় তারিখ আমার শ্বশুর দুবাই থেকে আমার বাবাকে ফোন দেয়। আর বলে আমার এখন শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পরে ১৪ তারিখ আমার স্বামী আমার বাসায় আসে। ওকে ওরা নিষেধ করেছিল আমার সাথে যোগাযোগ করতে। তবুও সে আসে।আমাদের ঝামেলা মিটে যায়। আমিও শ্বশুর বাড়ি ফিরে যেতে চাই।কিন্তু ওরা বলে শ্বশুর আসুক। তারপর নাকি ডিসিশন হবে। কিন্তু আমার স্বামীর জন্য আমার খুব খারাপ লাগছিল তাই আমি যেতে চাইলে আমার শ্বাশুড়ি ফোন দিয়ে আমার মাকে নিষেধ করে।
তখন ওনার সাথে আমার কিছু বাক বিতন্ডা হয়। পরে ওর বাবা অক্টোবরের নয় তারিখ আসে। আমার বাবার সাথে প্রথমে দেখা করে বলে আমি যেন ১৫ দিন গ্রামে ওদের ওখানে আর ১৫ দিন শহরে থাকি। পরদিন আমার স্বামী খুব খুশি হয়ে এই কথা জিজ্ঞেস করলে ওরা অস্বীকার করে। আর আমার বাবাকে পুনরায় ফোন দিয়ে বলে আমি যেন এখন আর যাই আমার আরো বহু দোষ বলে। কাজের মেয়েটিও আমি যা বলেছিলাম তা ওদের কাছে বলে দেয়।
আমার স্বামী তার সমস্ত টাকা পয়সা ওনাদের জন্য ব্যয় করেছেন। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এখন তার কাছে অত টাকা নেই। প্রশ্ন হলো আমার স্বামী বর্তমানে বেকার তার সামর্থ নেই আমাকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকার। ওরা বলছে আমি ওখানে যেতে পারব না। আজ তিন মাস আমি বাবার বাসায়। এটা কি ওরা অন্যায় করছে না? আমার শ্বাশুড়ির সাথে তর্কাতর্কির কারণে কি আমাকে বাসায় ঢোকাবে না এটা যুক্তি যুক্ত? আমার স্বামী বলেছে আমি আর কখনো তর্ক করব না।ওনার কাছে ক্ষমা চাইব। তবুও ওরা কোনোভাবে মানছে না।
ওরা কি আমার স্বামী আর আমার হক নষ্ট করছে না? আমাদের একজনকে ছাড়া আরেকজনের থাকাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমি কি মজলুম নই? আমি যদি আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই তাহলে কি সেটা উচিত হবে? দয়া করে উত্তর দিবেন। ইমেইলে উত্তরটা দিয়েন। আমি নামাজী হয়েছি স্যারের ভিডিও দেখে। ওনার ইসলামী আকীদা,এহইয়াউস সুনান,রাহে বেলায়াত, হাদীসের নামে জালিয়াতি, আল ফিকহুল আকবার, পর্দা পোশাক দেহসজ্জা সবগুলো বই আমি পড়েছি। আল্লাহ স্যার রাহিমাহুল্লাহকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।