আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 5248

অর্থনৈতিক

প্রকাশকাল: 12 জুন 2020

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু, আমার নাম সাজিদ আল মামুনুল হক। আমি একজন Accountant। আমি আর আমার পরিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকি ১৬ বছর। আমরা সদ্য হেদায়াত প্রাপ্ত মুসলিম বলতে পারেন। আপনার কুরআন এবং হাদিস এর সব আলোচনা দেখার এবং মানার চেষ্টা করি। আপনার কাছ থেকে ইসলাম শেখার চেস্তা করি। আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাই। নিশ্চয়ই আপনি আমাদের নিরাশ করবেন না। ১. আমরা প্রাই সব আলোচনাই দেখি বিজ্ঞ আলোচক শুধু রিবা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করে, রিবা দেওয়ার ব্যাপারে কিছু বলে না। অধিকাংশ মানুষ কিন্তু রিবা নেয় না বরং দিয়ে থাকে। আমরা যারা প্রবাস এ থাকি তারা প্রায় সবাই দুনিয়াবি প্রতিযোগিতাই নিমজ্জিত হয়ে রিবা করে গাড়ী, বাড়ি আরও অনেক কিছু করে থাকি। এমনকি ঋণ নিয়ে উমরা বা হজ্জ ও করে। তারা অনেকেই জানে রিবা কি আর তার শাস্তি কি বলে কুরআন এবং হাদিসে। কিন্তু জেনেও না জানার ভান করে। আর কুরআন ও হাদিস এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের অপরাধ কে ধামাচাপা দিয়ে অন্য কে বলে আল্লাহর কাছে বার বার নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, সদাকা আর বেশি বেশি দোয়া করে নিলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন ইনশাল্লাহ। যেহেতু আল্লাহ্ মিরাজ এ রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু কে বলেছেন যে তোমার উম্মত যদি শিরক না করে আমি তাদের সব গুনাহ মাফ করে দিব। এ কথা শুনে সবাই নিশ্চিত, যা করি না কনো মুসলিম হয়ে যখন জন্ম নিয়েছি আল্লাহ্ আমাদের গুনাহ হইত মাফ চাইলে মাফ করে দিবেন। প্রস্ন হল কাবিরা গুনাহ মাফ করার শর্তগুলা কি কি? যারা ভারা বাসাই থাকে তাদের ভারাটা একটা খরচ। এই খরচ কি তাদের জন্য সাদাকা হিসাবে গণ্য হবে যেহেতু তারা তাদের নাফস কে রিবা হতে দমন করে সমাজে হেয় হয়ে থাকছে অথচ তারা ইচ্ছা করলেই ব্যাংক থেকে সুদে ঋণ নিয়ে বাড়ি কিংবা সম্পত্তি করতে পারত কিন্তু করেনি। তাহলে তাদের সামাজিক মর্যাদা ইসলাম এর দৃষ্টতে কি হবে? রিবা করে যারা আমল করছে তাদের আমল কি আল্লাহ্ গ্রহণ করছে? যেমন গিবত করলে আমল নষ্ট হয় ঠিক একই ভাবে রিবা করে নামায রোজা দোয়া করলে কি আমল থিক থাকছে নষ্ট হচ্ছে না? অনেকেরই ধারনা সাইয়াুদুল ইস্তেগফার, সূরা মূলক, হজ্জ ইত্যাদি আমল করে রিবার গুনাহ মাফ করিয়ে ফেলবে কিন্তু রিবা করে বাড়ি গাড়ি করা বাদ দিবে না। তাহলে যে বলা হোল, যে রিবা করলো সে আল্লাহ্ ও রাসুল এর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করল। সে ক্ষেত্রে এই সূরা মূলক,দোয়া বা ইস্তেগফার কি তাকে বাঁচাতে পারবে? উপরে লিখা প্রশ্ন গুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কুরআন ও সুন্নার আলোকে reference সহ যদি দিতেন তাহলে প্রবাসের অনেক দিন ই ভাইরা আপনার মাধ্যমে উপকৃত হোতো। যাজাক আল্লাহ্ খাইর। সাজিদ হক, যোগাযোগ- +61434199407, ইমেইল- [email protected]

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সুদ দেওয়া ও নেওয়া দুটোই কবীর গুনাহ। দেওয়া ও নেওয়া উভয়টি সম্পর্কেই আলোচনা হওয়া জরুরী। এটা ঠিক যে, সুদ নেওয়ার বিষয়ে বেশী আলোচনা হয়, সুদ দেওয়ার বিষয়ে তুলনামূলক কম আলোচনা হয়। হাদীসে তো আরো দুজনকেও লা নাত প্রাপ্ত বলা হয়েছে। হযরত জাবির রা. বলেন, لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ. রাসূল সা. সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক, সাক্ষীদ্বয় সবার উপর লানাত দিয়েছেন এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান। সহীহ মুসলিম, ৪১৭৭। সুদের ভয়াবহাতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,   الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (২৭৫)   অর্থ: যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে সেভাবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, শয়তান যাকে মোহবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয় বিক্রয় ও তো সুদেরই মত! অথচ আল্লাহ তায়ালা ক্রয় বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং বিরত হয়েছে, যা পূর্বে হয়ে গেছে তা তার এবং সেই বিষয়টি আল্লাহ তায়ালার জিম্মাই। আর যারা পূনরায় সুদের সাথে জড়িত হবে তারা জাহান্নামে যাবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৭৬। সুতরাং সুদের সাথে জড়িত হওয়ার পর বিভিন্ন দুআ দরুদ পড়লে এই গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, এমন ভাবনা নির্বুদ্ধিতা, মূর্খতা, বেপরোয়া মানসিকতা।সুদে টাকা নিয়ে হজ্ব ও ওমরা করা যাবে না। হজ্ব ও ওমরার জন্য হারাম কাজে জড়িত হওয়ার দরকার নেই। সুদে ঋন নিয়ে বাড়ি করা হারাম। যদি বাড়ি করার সামর্থ না থাকে তাহলে ভাড়া বাড়িতেই থাকতে হবে। ভাড়া বাড়িতে থাকার জন্য যে খরচ হয় সেটা সদকা হবে না। তবে সুদের ছড়াছড়ির মধ্যে সুদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই অনেক সওয়াবের অধিকারী হবে। আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,   عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ الصَّابِرُ فِيهِمْ عَلَى دِينِهِ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمْرِ   মানুষের উপর এমন একটি যুগের আগমন ঘটবে যখন তার পক্ষে ধর্মের উপর ধৈর্য ধারণ করে থাকাটা জ্বলন্ত অঙ্গার মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা ব্যক্তির মতো কঠিন হবে। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ২২৬, হাদীসটি সহীহ। সুদের রাজ্যে সুদ থেকে বিরত থাকা অনেকটা আগুনের মধ্যে হাত রাখার মতই। তাই যে এই ধরণের সমাজে সুদ থেকে বিরত থাকবে সে বিশেষ সওয়াবের অধিকারী হবে ইনশাআল্লাহ। যারা আল্লাহকে বেশী ভয় করবে আল্লাহ তায়ালার নিকট তাদের মর্যাদা ততো বেশী। সুতরাং যারা সুদের টাকা দিয়ে বাড়ি করেছে তাদের চেয়ে যারা আল্লাহর ভয়ে সুদ থেকে বিরত থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছে তাদের মর্যাদা আল্লাহর নিকট হাজারগুন বেশী। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ নিশ্চয় তোমারদের মধ্যে আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তি আল্লাকে অধিক ভয় করে। সূরা হুজুরাত, আয়ত ১৩। গিবতের মতই সুদের সাথে জড়িত হয়ে আমল করলে সেই আমল কাজে লাগবে না। এই বিষয়ে নিচের হাদীসটি লক্ষ্য করুন:   عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ ( يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) وَقَالَ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ) . ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ   হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, হে মানুষসকল, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত কিছু কবুল করেন না। আর আল্লাহ তায়ালা মূমিনদের সেই নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি তাঁর রাসূলগণদের দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, হে রাসূলগণ, তোমরা হালাল খাবার ভক্ষন করো এবং সৎ আমল করো। নিশ্চয় আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত। । এবং আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, হে ইমানদারগণ, আমি তোমদের যে হালাল রিযিক দান করেছি তা থেকে ভক্ষন করো। এরপর রাসূলুল্লাহ সা. একজন লোকের কথা উল্লেখ করলেন, যেবহুদূর পথ সফর করে (কোন বরকতময় স্থানে দুআর জন্য) এলো, তার চুল উশকো-খুশকো, শরীর ধুলোমলিন, আকাশের দিকে দুহাত তুলে ফরিয়াদ করতে লাগলো, আয় আল্লাহ আয় মালিক! কিন্তু তার অন্ন-বস্ত্র সবই হারাম মাল থেকে আসে। হারাম মাল দ্বারাই সে প্রতিপালিত। তাহলে এই ব্যক্তির দুআ কেমন করে কবুল হবে?সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫ আর কবীরগুনাহ থেকে মাফ পেতে হলে তওবা করা শর্ত। তওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হলো : ১. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তওবা করা। ২.সংশ্লিষ্ট গুনাহের কাজটিকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। ৩. কৃত অপরাধের কারণে লজ্জিত হওয়া। ৪.ভবিষ্যতে পুনরায় ওই গুনাহে লিপ্ত হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করা। ৫. অন্যায়কাজটি যদি মানুষের অধিকারসংশ্লিষ্ট হয় তবে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। এই শর্তগুলোর একটি হলো ভবিষ্যতে পুনরায় ওই গুনাহে লিপ্ত হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করা। সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে সুদে জড়াবে আর দুআ দরুদ পড়ে মাফ চাইবে সেটা চলবে না। এমন করলে জাহান্নামে যেতে হবে, যেটা আমরা উপরের একটি আয়াত থেকে জেনেছি। আশা করি আপনার উত্তর পেয়েছেন। অস্পষ্ট থাকলে আবারো লিখবেন।   সূত্র: https://www.islamweb.net