আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 4872

হালাল হারাম

প্রকাশকাল: 2 জুন 2019

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,
১.উটের মূত্র পান সম্পর্কিত যে হাদিছ টি রয়েছে সেটা নিয়ে নাস্তিক রা শরীয়তের নিয়মের উপর দোষারোপ করে থাকে যে মুসলিমরা উটের মূত্র পান করে এক্ষেত্রে উপযুক্ত জবাব অথবা এসম্পর্কিত সঠিক তথ্য জানতে চাচ্ছি, যে এটা খাওয়া জায়েজ কি না? যেন আমি নিজে সত্য টা জানতে পারি এবং যারা এই প্রশ্ন টা করে তাঁদের ভুল বোঝাবুঝি টা দূরীভূত হয়। ২.সামুদ্রিক কি কি খাবার খাওয়া হালাল? যেমন সামুদ্রিক কাঁকড়া বা এজাতীয় খাবারে?,শরিয়াহ এর বিধান কি?
জাঝাকাল্লাহু খাইরান…

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বুখারী ও মুসলিমসহ প্রায় সকল হাদিস গ্রন্থে উঠের মূত্র খাওয়ার হাদিসটি রয়েছে। যদিও একেক হাদিসে একেকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু সব হাদিসেই উঠের পেশাব খাওয়ার বর্ণনাটা আছে।আমরা আলোচনার জন্যে এখানে একটি হাদিস উল্লেখ করছি عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَهْطًا، مِنْ عُكْلٍ ـ أَوْ قَالَ عُرَيْنَةَ وَلاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ قَالَ مِنْ عُكْلٍ ـ قَدِمُوا الْمَدِينَةَ، فَأَمَرَ لَهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِلِقَاحٍ، وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَخْرُجُوا فَيَشْرَبُوا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا، فَشَرِبُوا حَتَّى إِذَا بَرِئُوا قَتَلُوا الرَّاعِيَ وَاسْتَاقُوا النَّعَمَ، فَبَلَغَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم غُدْوَةً فَبَعَثَ الطَّلَبَ فِي إِثْرِهِمْ، فَمَا ارْتَفَعَ النَّهَارُ حَتَّى جِيءَ بِهِمْ، فَأَمَرَ بِهِمْ فَقَطَعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ وَسَمَرَ أَعْيُنَهُمْ، فَأُلْقُوا بِالْحَرَّةِ يَسْتَسْقُونَ فَلاَ يُسْقَوْنَ قَالَ أَبُو قِلاَبَةَ هَؤُلاَءِ قَوْمٌ سَرَقُوا، وَقَتَلُوا، وَكَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ، وَحَارَبُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ আনাস ইবনু মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত, উকল গোত্রের লোক মদিনায় এলো, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দুগ্ধবতী উটের কাছে যাওয়ার নির্দেশ করলেন। তাদেরকে আরো নির্দেশ করলেন যেন তারা সে সব উটের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করে। তারা তা পান করল। অবশেষে যখন তারা সুস্থ হয়ে গেল, তখন রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাকিয়ে নিয়ে চলল। ভোরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ সংবাদ পৌছল। তিনি তাদের খোঁজে লোক পাঠালেন। দুপর হবার আগেই তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের সম্পর্কে তিনি নির্দেশ করলেন, তাদের হাত-পা কাটা হল। লৌহশলাকা দিয়ে তাদের চোখগুলো ফুড়ে দেয়া হল। এরপর প্রখর রৌদ্র তাপে ফেলে রাখা হল। তারা পানি পান করতে চাইল। কিন্তু পান করানো হলনা। আবু কিলাবা (রহঃ) বলেন: ঐ লোকগুলো এমন একটি দল যারা চুরি করেছিল, হত্যাও করেছিল, ঈমান আনার পর কুফরি করেছিল আর আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। (সহীহ বুখারী, ইফা, হাদিস নং ৬৩৪৯) এই হাদীসের ভিত্তিতে আলেমেদের মতে চিকিৎসা হিসেবে উটের পেশাব খাওয়াতে সমস্যা নেই। উটের পেশাব খাওয়ার হাদিসগুলো নিয়ে গত দুইশত বছরের আগে কখনো কোনো প্রশ্ন উঠেনি। সবাই এটাকে স্বাভাবিক মনে করেছিলো। কিন্তু ইসলাম-বিদ্বেষী ও রিয়েন্টালিস্টরা মুসলিমদের ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যে এ হাদিসগুলোকে সামনে আনে। এবং এ হাদিসগুলো দেখিয়ে মুসলিমদেরকে বলে, দেখো, তোমাদের রাসূল কত বাজে জিনিস খেতে বলেছেন তোমাদেরকে। ওরিয়েন্টালিস্টদের বিপরীতে এ পক্ষের মুসলিমরা যুক্তি দিয়ে বলেন যে, রাসূল (স) খালি খালি উটের পেশাব খেতে বলেননি, বরং দুধের সাথে মিশিয়ে খেয়ে বলেছেন। অর্থাৎ, তিনি স্বাভাবিকভাবে নয়, বরং ওষুধ হিসাবে মিশিয়ে খেতে বলেছেন। এছাড়া, ইবনে সিনার চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ আল কানুন ফিত-তিব ১৬ শতক পর্যন্ত মুসলিম ও পশ্চিমা বিশ্বের মেডিক্যালগুলোতে পড়ানো হতো। সে গ্রন্থে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্যে উটের পেশাবকে অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে ওষুধ তৈরি করার নিয়মাবলী দেয়া হয়েছে। সে নিয়ম কেবল মুসলিম বিশ্ব নয়, পশ্চিমা বিশ্বেও গত তিন-চারশ বছর আগে প্রচলিত ছিলো। এমনকি এখনো আমেরিকার নাসা সহ জার্মান, জাপান, চীন, ভারতের মতো বিভিন্ন দেশে মেডিক্যালের একাডেমিক জার্নাল ও বইয়ে উটের পেশাব নিয়ে রিসার্চ হচ্ছে; এবং তারা বলছেন যে, পেশাবকে মেডিসিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। (<a href="https://bit.ly/2QEHf6j") সুতরাং, উটের পেশাবকে ওরিয়েন্টালিস্টরা যেভাবে অযৌক্তিক ও বর্বর আকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তাই এ হাদিসটা মানতে কোনো সমস্যা নেই। এছাড়া রাসূল (স)-কে আল্লাহ তায়ালা ডাক্তার হিসাবে পৃথিবীতে পাঠাননি। রাসূল (স)-কে পাঠিয়েছেন মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে। সুতরাং, যে-সব হাদিসে আল্লাহর বিষয়ে বা ইবাদাতের বিষয়ে কোনো খবর দেয়া হয়েছে, তা আমল করতে হবে। কিন্তু যেসব হাদিসে দুনিয়াবি বিষয়ে কোনো পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তা মানুষের উপর আমল করা জরুরী নয়। রাসূল (স) মানুষ হিসাবে যেসব কথা বলেছেন, তার অনেককিছু সাহাবীরা আমল করেননি। এমন অনেক উদাহরণ হাদিসের গ্রন্থে রয়েছে। যেমন রাফি ইবনু খাদীজ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন। লোকেরা খেজুর গাছ তাবীর করত। রাবী বলেন, অর্থাৎ নর ও নারী ফুলের রেণুতে মিশ্রণ ঘটিয়ে খেজুর গাছকে গর্ভদান করত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা কি করছ? তারা বললো আমরা এরূপ করে আসছি। তিনি বললেন, তোমরা এমন না করলেই বোধ হয় ভাল হয়। রাবী বললেন, সুতরাং তারা তা বর্জন করল। আর এতে খেজুর ঝরে পড়ল অথবা (রাবী বলেছেন,) তার উৎপাদন কমে গেল। রাবী বলেন, লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ ঘটনা বলল। তখন তিনি বললেন, আমি তো একজন মানুষ। দ্বীন সম্পর্কে যখন তোমাদের আমি কোন আদেশ দেই, তখন তোমরা তা পালন করবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার মতানুসারে বলি, তখন তো আমি একজন মানুষ মাত্র। (সহীহ মুসলিম, ইফা, হাদিস ৫৯১৫। এ ছাড়াও আরো অসংখ্য হাদিসে রাসূল (স) বলেছেন, তিনি মানুষ হিসাবে যে কাজ করেন, তা আমল করা উম্মতের জন্যে জরুরী নয়। অনেকে বলেন, উটের পেশাব খাওয়ার হাদিসটা রাসূল (স) মানুষ হিসাবে তৎকালীন প্রচলিত চিকিৎসার ওষুধ হিসাবে বলেছেন। এখন যদি আরো উন্নত কোন চিকিৎসা পদ্ধতি বের হয় তাহলে উম্মত সেটা গ্রহন করতে পারে। https://jobayerbd.wordpress.com/2020/03/23/1234/ এই লিংকে গিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।