প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে যে, আমাদের দেশে খতমে বুখারীর অনুষ্ঠানের অবস্থা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ১)বছরের শেষে বুখারী শরীফ সমাপ্তির দিন বিশেষ দরস হয় যেখানে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অনেকে উপস্থিত হয়ে থাকেন । তবে কেউ এটাকে দ্বীনের বিষয় বা সওয়াবের উপলক্ষ মনে করে না। ২)বছরের শেষে বুখারী শরীফ সমাপ্তির দিন বিশেষ দরস হয় যেখানে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অনেকে উপস্থিত হয়ে থাকেন । পাশাপাশি এটাকে বিশেষ বরকতের কারন মনে করা হয়। ৩)কেউ কোন বালা-মসীবতে পড়লে বিপদ মুক্তির জন্য বা সওয়াবের আশায় বুখারী শরীফ খতম করা হয়। উপরে উল্লেখিত প্রথম প্রকারের খতমে বুখারী বৈধ, কোন সমস্যা নেই বরং এসে যতটুকু হাদীস শুনল বা দ্বীনের কথা শিখল ততোটুকু এলেম শিক্ষার সওয়াব পাবে। এর চেয়ে বেশি কিছু অর্থাৎ বিশেষ কোন বরকত লাভ হবে না। কিন্তু দিত্বীয় এবং তৃতীয় প্রকারের খতমে বুখারী সওয়াবের উপলক্ষ বা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির উপায় মনে করার কারনে বিদআত হিসাবে পরিগণিত হবে। কেননা ঈসালে সাওয়াবের জন্য হাদীস তেলাওয়াত করা, অসুস্থ হলে বা যে কোন মুসিবতে পড়লে হাদীস পাঠ করে দুআ করার কোন নজীর না রাসূলে শিক্ষায় রয়েছে, না সাহাবায়ে কেরামের জীবনে রয়েছে, না খাইরুল কুরুনে রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জীবনেও বালা-মসীবত এসেছে কিন্তু তাঁরা একদিনও একটি হাদীস পড়ে দুআ করেন নি। অথচ তাঁরা আমাদের তুলনায় রাসূল সা. কে বেশী ভাল বাসতেন, বেশী অনুসরণ করতেন। এমতাবস্থায় আমরা যদি একাজটিকে সওয়াব লাভের সতন্ত্র একটি উপায় মনে করি তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে বিদআতের মধ্যে নিপতিত হব। বিদআত থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে রাসূল সা. কঠিন ভাষায় সতর্ক করেছেন। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন, রাসূল সা. বলতেন:
شر الأمور محدثاتها وكل محدثةبدعة وكل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار
অর্থঃসবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল, যা (দ্বীনের নামে আবিষ্কৃত)নতুন বিষয়। আর(এমন) সব নতুন বিষয় বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে। শায়েখ আলবানী হাদীসটি কে সহীহ বলেছেন। সুনানে তিরমিযী,তাহকীক,আলবানী,৩/১৮৮(১৫৭৮),কিতাব, সালাতুল ঈদাইন, বাব, কায়ফাল খুতবা। আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণীত,তিনি বলেন,রাসূল সাঃ বলেছেন:
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
অথঃদ্বীনের বিষয় নয় এমন কোন বিষয়কে যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে সৃষ্টি করবে তা প্রত্যাক্ষাত হবে। বুখারী,আস সহীহ,হাদীস নং ২৬৯৭। বিপদ মুক্তির ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হলো, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ইউনূস (আ)-এর মত নিজে দুআ ইউনূস বা অন্যান্য সুন্নাহ সম্মত দুআ পড়ে মনের আবেগে আল্লাহর কাছে কাঁদবেন এবং বিপদমুক্তি প্রার্থনা করবেন। একজনের বিপদে অন্যজন কাঁদবেন, এমনটি নয়। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে, দুআ ইউনূস পাঠ করে দুআ করলে আল্লাহ্ কবুল করবেন। (লা ইলাহা ইলা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতুম মিনায যালিমীন) অর্থ- আপনি ছাড়া কোনো মাবূদ নেই, আপনি মহা-পবিত্র, নিশ্চয় আমি অত্যাচারীদের অন্তভূক্ত হয়েছি। নিজে দুআ করার পাশাপাশি জীবিত কোনো আলিম-বুজুর্গের কাছে দুআ চাওয়াতে অসুবিধা নেই। তবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নিজের জন্য নিজের দুআই সর্বোত্তম দুআ। এছাড়া দুআর ক্ষেত্রে মনের আবেগ ও অসহায়ত্বই দুআ কবুলের সবচেয়ে বড় অসীলা। আর বিপদগ্রস্ত মানুষ যতটুকু আবেগ নিয়ে নিজের জন্য কাঁদতে পারেন, অন্য কেউ তা পারে না। অনেকে মনে করেন,আলিম-বুজুর্গের সুপারিশ বা মধ্যস্ততা ছাড়া আল্লাহর নিকট দুআ বোধহয় কবুল হবে না। এ ধরনের চিন্তা সুস্পষ্ট শিরক। ইসলামের বিধিবিধান শিখতে, আত্মশুদ্ধির কর্ম শিখতে, কর্মের প্রেরণা ও উদ্দীপনা পেতে বা আল্লাহর জন্য ভালোবাসা নিয়ে আলেম ও বুজুর্গগণের নিকট যেতে হয়। প্রার্থনা, বিপদমুক্তি ইত্যাদির জন্য একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইতে হয়, অন্য কারো কাছে নয়। কথিত আছে ইমাম বুখারী রহঃ নাকি এই কিতাবের কাজ শেষ করার পর আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন যে, যে ব্যক্তি তাঁর এই কিতাব প্রথম থেশে পর্যন্ত পড়ে দুআ করবে আল্লাহ যেন তার দুআ কবুল করেন। অথচ বুখারী রহঃ এই কিতাব রচনার প্রেক্ষাপটের নির্ভরযগ্য কোন কিতাবে এমন কোন কথা পাওয়া যায় না। সহী বুখারী রচনার কয়েক শতাব্দি পর পর্যন্ত ইমাম বুখারী রচিত এ গ্রন্থের চর্চা, তার খেদমত অত্যন্ত ব্যাপকভাবে হয়েছে । কিন্তু কোথাও তা খতমের নজীর পাওয়া যায় না। তাছাড়া বুখারী রহঃ এর মত বিশুদ্ধ আকীদার ধারক ব্যক্তির দিকে এমন কথার নিসবত করা গর্হিত এবং বানোয়াট। আল্লাহ আমাদেরকে সর্বাবস্থায় বিদআত থেকে হেফাযত করুক। আমীন।