আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 455

হজ্জ

প্রকাশকাল: 29 এপ্রিল 2007

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম, ওমরার সম্পূর্ণ নিয়ম কি ( সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত)? ২. প্রতি চক্কর (তাওয়াফ) এর সময় কি আলাদা আলাদা দোয়া পরতে হয়।

উত্তর

ওয়া আলাইকুুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। উমরা আদায়ের নিয়মঃ ক) মক্কায় প্রবেশের পর মিকাত থেকে ইহরাম করে মক্কা পৌঁছানর পরে গোছল করা মুসাহাব, কারণ রাসুলুল্লাহ (সঃ) তা করেছিলেন। এরপর মসজিদে প্রবেশ করিয়ে বলবেনঃ بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله، أعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم، وسلطانه القديم، من الشيطان الرجيم، اللهم افتح لى أبواب رحمتك. বিসমিল্লাহ, ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহর উপর দরুদ ও সালাম। আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত চেহারা, তাঁর অনাদি ক্ষমতার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের – কল্যাণের দরজাগুলো খুলে দিন। খ) তাওয়াফের নিয়মঃ – কাবাঘরের কাছে পৌঁছে উমরা পালনকারী তালবিয়া (লাব্বাইকা…) পাঠ বন্ধ করবেন। এরপর হাজরে আসওয়াদের (কাল পাথরের) কাছে পৌঁছে সম্ভব হলে بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ. বিসমিল্লাহি ওয়া আল্লাহু আকবার বলে তাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন এবং চুমু দিবেন। ভীড় থাকলে ঠেলাঠেলি করে মানুষকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবেনা। বরং সম্ভব হলে শুধুমাত্র হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে স্পর্শ করবেন এবং হাতে বা লাঠিতে চুমু দিবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে দুর থেকে হাত দিয়ে اللهُ أَكْبَرُ আল্লাহ আকবার বলে ইশারা করবেন, ঈশারা করার পর হাতে চুমা খাবেন না। – এরপর কাবা শরীফকে বামে রেখে তাওয়াফ শুারু করবেন। – রুকনে ইয়েমানী বা কাবাঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পৌঁছানর পর সম্ভব হলে بِسْمِ اللهِ وَاللهِ أَكْبَرُবিসমিল্লাহি ওয়া আল্লাহ আকবার বাاللهُ أَكْبَرُ আল্লাহ আকবার বলে রুকনে ইয়েমানীকে স্পর্শ করবেন। তাকবীল একবারই বলতে হবে। ভীড়ের কারণে রুকনে ইয়েমানী স্পর্শ করা সম্ভব না হলে স্বাভাবিক ভাবে তাওয়াফ করে এগিয়ে যাবেন। হাত দিয়ে রুকনে ইয়েমানীর দিকে ঈশারা করার দরকার নেই, হাদীসে তা বলা হয়নি। – তাওয়াফ করার সময়ে কোন নির্দিষ্ট দোয়া নেই। কাজেই তওয়াফ কারা কালীন কুরআন তিলাওয়াত, বা তাসবীহ-তাহলীল বা জিকির করতেন পারেন, বা যে কোন ভাষায় যে কোন দোয়া করতে পারেন। শুধুমাত্র প্রতি চক্করের শেষে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর শেখান নীচের দোয়া বলবেনঃ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّار[البقرة ২০১] রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতান, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া ক্কিনা আযাবান নার। হে আমাদের প্রভু, পামাদেরকে দুনিয়ার (পার্থিব) জীবনে কল্যাণ ও মঙ্গল দান কারন, পরকালের জীবনকে কল্যাণ ও মঙ্গলময় করুন এবং আমাদেরকে দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষ করুন। এই তাওয়াফের সময় কেবল পুরুষদের জন্য নিচের দুটি বিষয় সুন্নাতঃ ১) ইদতিবা অর্থাৎ গায়ে জড়ান চাদরের মধ্যভাগ ডান বগলের নিচে রেখে দুই প্রান্ত বাম কাঁধের উপরে রাখা। এতে ডান কাঁধ খোলা থাকবে। সাত চক্কর তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এভাবে করা সুন্নাত। তবে তাওয়াফ ছাড়া অন্য সময়ে ইদতিবা করবেন না, স্বাভাকিব ভাবে দুই কাঁধ ঢেকে চাদর পরবেন। বিশেষতঃ নামাজের সময়ে অবশ্যই দুই কাঁধ ঢেকে রাখবেন। ২) রমল, অর্থাৎ দৌড়ানর ভঙ্গিতে ছোট পদক্ষেপে তাওয়াফ করা। সাত চক্করের মধ্যে শুধু প্রথম ৩ চক্করে রমল করতে হবে। বাকী ৪ চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন। – ৭ চক্কর তাওয়াফের পর সম্ভব হলে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে, অথবা হারামের যে কোন স্থানে ২ রাকাত নামায আদায় করবেন। প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে কুল হুয়াল্লাহ আহাদ সরা পড়া সুন্নাত। – নামাযের পর সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদে ডান হাত দিয়ে তা স্পর্শ করা সুন্নাত। এরপর সায়ী করার জন্য সাফার দিকে যাবেন। গ) সায়ী করার নিয়মঃ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে করণীয়ঃ – সম্ভব হলে সাফা পাহাড়ের উপরে ওঠা উত্তম, অসুবিধা হলে এর পাদদেশে দাঁড়াবেন এবং নিচের আয়াতটি পড়বেনঃ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ. [البقرة ১৫৮] ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ, ফামান হাজ্জাল বাইতা আওইতামারা ফালা জুনাহা আলাইহি আঁইয়াত্তাওয়াফা বিহিমা ওয়ামান তাতওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলীম। নিশ্চয় সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমুহের অন্তর্ভুক্ত, কাজেই যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরা করবে তাঁর জন্য এদুয়ের মাঝে সায়ী করা অনুচিত হবে না। আর যদি কেউ বেশী করে ভাল কাজ করে তাহলে আল্লাহ কৃতজ্ঞ ও জ্ঞানী। – এরপর মুস্তাহাব হল কিবলামুখি হয়ে বলবেঃ الحَمْدُ لِلّهِ اللهُ أَكْبَرُ আলহামদু লিল্লাহ আল্লাহু আকবার। এরপর বলবেঃ لَاإلَهَ إلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ. لَا إِلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الًمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ. لَا إلَهَ إِلَّا اللهُ، وَحْدَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলক, ওয়ালাহুল হামদু, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু, অহুয়া আলা কুাল্লি শাইয়িন কাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু। অর্থাৎঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ, নেই তিনি একক, তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, তিনিই জীবন দেন, মৃত্যু দেন এবং তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তিনি তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়িত করেছেন,তাঁর বান্দাকে বিজয়ী করেছেন এবং তিনি একাই সকল বিরোধী শক্তিকে পরাজিত করেছেন। এরপর হাত তুলে ইচ্ছামত আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবেন। সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ীর সময়ে করণীয়ঃ – সাফা থেকে নেমে হেঁটে মারওয়ার দিকে যেতে হবে সবুজ চিহ্ণের কাছে এলে পুরুষেরা দৌড়াবেন দ্বিতীয় সবুজ চিহ্ণ পর্যন্ত। এরপর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে উপরে বর্ণিত তাকবীর, তাহলীল ও দোয়ার পর সেখান থেকে সাফার দিকে এগোতে হবে। মহিলারা সর্বদা স্বভাবিকভাবে হাঁটবেন, তাদের জন্য দৌড়ান সুন্নাত নয়। – সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত গেলে এক বার সায়ী হয়, আবার মারওয়া থেকে সাফা গেলে আরেক সায়ী হয়। এভাবে ৭ বার সায়ী করতে হবে। এতে সাফা থেকে শুরু হবে এবং মাওয়াতে গিয়ে শেষ হবে। – সায়ী করার সময় যত বেশী সম্ভব দোয়া ও যিকর করা উচিত। এছাড়া ওজু অবস্থায় সায়ী করা উচিত। তবে ওজু ছাড়াও সায়ী জায়েজ হবে, কিন্তু তাওয়াফ ওজু ছাড়া হবেই না। ঘ) সায়ীর পরে করণীয়ঃ ৭ বার সায়ী করার পর পুরুষেরা মাথা টাক করাবেন, অথবা চুল ছাঁটাবেন। পুরুষদের জন্য টাক করা উত্তম। তামাত্তু কারীর জন্য ছাঁটানো উত্তম, তিনি হজ্জের পরেটাক করবেন। টাক করা বা ছাঁটনো উভয় ক্ষেত্রেই পুরো মাথার চুল কাটতে বা ছাঁটতে হবে। আংশিক ছাঁটানো বা কাটানো জায়েজ নয়। মেয়েরা সর্বাবস্থায় নখ পরিমাণ চুল ছাঁটবেন।