আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 3474

প্রকাশকাল: 4 আগস্ট 2015

প্রশ্ন

আমি স্নাতক সম্পন্ন করে মারস্টার্স করছি ইংরেজি বিভাগে। বাবা রিটায়ার্ড সরকারি কর্মকর্তা এবং বর্তমানে ওকালতি করছেন। আমি করোনা পরিস্থিতি বিচারে বর্তমানে চাকরির জন্য বসে না থেকে ফ্রিলান্সিং করছি। আলহামদুলিল্লাহ একটা পরিবার চালানোর মত সামর্থ এখন আছে। আল্লহর রহমতে সালাত-সওম যথাযথ পালন করার চেষ্টা করি। আমি একবাসায় টিউশনি করাতাম। তো সেখানে আমার ছাত্রীর বড় বোন (এখন ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন) আর আমার মধ্যে একটা আকর্ষণ তৈরি হয়। এবং ২০১৯ সালে আমি এবং আমার ছাত্রীর বড় বোন সেটা স্বীকার করি এবং তার পরদিনই আমি পড়ানো ছেড়ে দেই। এবং আমার ছাত্রীর বড়বোন তার বাসায় জানায় যে সে আমাকে ভালোবাসে। ওর বাবা-মায়ের কাছে (যখন পড়াতাম) ছেলে হিসেবে আমার মত ছেলেই ছিলো না। এমনকি মোটামুটি কনজারভেটিভ ফ্যামিলি হওয়ার পরেও সবসময়েই সবার কাছে আমার প্রশংসা করতো। আমি টিউশন ছেড়ে দেয়ার পর থেকে এই দুই বছরে আমাদের মধ্যে আর কোনো দেখা হয় নি বা আমরা করি নি। যোগাযোগের মধ্যে যখন বাসা থেকে খুব বেশি কথা শুনায় বা খোটা দেয়, সেই কষ্টটুকু শেয়ার করতে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করে। ওর বাবা মায়ের বক্তব্য হচ্ছে, ছেলে হিসেবে আমি খারাপ না। আমার চরিত্র নিয়েও তাদের কোনো সমস্যা নেই। সামাজিক মর্যাদায়ও মোটামুটি তাদের থেকে একেবারে নিচে না, ১৯-২০ হবে কিন্তু ১৯-৫০ না। তাদের কথা হচ্ছে তারা বাসার টিউশন মাস্টারের সাথে বিয়ে দেবে না। শুধু এই একটা জেদ যে মানুষে বলবে যে মাস্টারের সাথে বিয়ে দেছো, এই কথায়। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা যেখানে বিয়ে দেবে সেখানে বিয়ে হওয়ার পর মেয়ে মরে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমার কাছে বিয়ে দিয়ে তারা মানুষের কথা শুনতে পারবে না। আন্টি (মেয়ের মা) বলেছেন, আমি যদি ভিখিরি হতাম তাতেও তাদের সমস্যা ছিলো না৷ কিন্তু মাস্টারের সাথে বিয়ে দেবে না। আমার মা বলছেন, তোর বিয়ের বয়স হয়েছে, মেয়েও সাবালিকা, মেয়ের বাসায় যদি এই জেদ ধরে বসে থাকে যে তোর কাছে দেবেই না, তবে তুই মেয়ে নিয়ে আয়। মায়ের কথা, যদি তোর কোনো ত্রুটির কারনে না দিতে চাইতো সেটা ঠিক করে আনতাম। কিন্তু অন্যায় জেদের কাছে আমার মা নত স্বীকার করতে না করেছে। এদিকে আমরা আলাদাও হতে পারছি না। কারন না আমার জীবনে আমি তাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি, আর না সে। মেয়ের বক্তব্য হচ্ছে, “দেখুন, আমার অনিচ্ছায় একজায়গায় আমাকে বিয়ে দিলো। তো আমার সেই স্বামীর সাথে যে সহবাস করবো, সেটাও আমার অনিচ্ছায় হবে। কিন্তু বিয়ের পরে হাদিস অনুযায়ী আমাকে আমার স্বামীর ডাকে সাড়া দিতেই হবে। নাহলে আল্লাহর লানত পরবে। কিন্তু অনিচ্ছায় সহবাস তো একটা মেয়ের কাছে ধর্ষনই। আমি কিভাবে প্রতিটা দিন ধর্ষিতা হবো?”
এই একই প্রশ্ন সে তার মা-কেও করেছে। তার মা বলেছে, সেটা ব্যাপার না। তুমি মরে গেলেও কিছু না। আর আন্টি তাকে উদাহরণ দেন তার এক চাচাতো বোনের, যে ১০-১২ জনার সাথে সম্পর্ক করার পর বাবার ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন। তাদের মতে সেই মেয়ে ভালো, কারন বাবার সম্মান রেখেছেন। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যতটুকু কথাই হোক, বা আমাদের মাঝে এই যে আমরা একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে কল্পনা করছি৷ এটাও তো জিনাহ। তাই আমরা চেয়েছিলাম বিয়ে করতে। কিন্তু ইমাম হানিফা (রাহেঃ) বাদে অন্য সকল ইমামের মতে বাবার অনুমতি ছাড়া মেয়ে বিয়ে করলে সে বিয়ে বাতিল। এক্ষেত্রে আমার কি করনীয়?
উল্লেখ্যঃ তারা প্রতিনিয়ত মেয়েকে এমন একটা মানুষিক চাপের মধ্যে রাখেন কথার মাধ্যমে যেটাতে ওই মেয়ে অভ্যস্ত না। মানে এক ধরনের মেয়ে আছে না যে গায়ে মাইর সয় কথা সয় না, তেমন। আর মেয়ের বাবা বলে দিয়েছেন, সে যদি আমার সাথে আসতে চায়, তাহলে তার জন্য দড়জা খোলা। কিন্তু আসার পরে তাদের সাথে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। বেশি বড় করার জন্য দুঃখিত। স্যারের কাছে উত্তর এবং দোয়া চাচ্ছি। আর আমার এই সমস্যার গোপনীয়তা প্রর্থনা করছি। ধন্যবাদ।

উত্তর

যদি এই সম্পর্কে না জড়াতেন তাহলে এতোগুলো মানুষের এই মানষিক ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। যদি এখনো অবৈধ এই রিলেশন ছেড়ে দেন তাহলে সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচবে। একজন সন্তানের সবচেয়ে বেশী হিতাকাঙ্খী তার বাবা-মা। অন্য কাউকে সাময়িক সময়ের জন্য কাছেন মনে হতে পারে, কিন্তু সেটা কখনোই দীর্ঘ স্থায়ী হতে পারে না। কত মেয়ে বাবা-মায়ের কথা অমান্য করে ঘর ছেড়ে বড় বড় বিপদে পড়েছে, হত্যার স্বীকার পর্যন্ত হয়েছে হচ্ছে। বিয়ের আগে আবেগের সম্পর্ক থাকে, বাস্থবতা থাকে না, বিয়ের পরে বাস্তব জীবনে এসে যখন আর আবেগের জীবনের আবেগ থাকে না, তখনই সম্পর্কে টানাপড়েন সৃ্ষ্টি হয়, পরিণাম শুধু দু:খ, কষ্ট, বেদনা। সুতরাং মেয়ের বাবা-মা যদি রাজি না থাকে এখানে বিয়ে থেকে দূরে থাকুন।যে পরিবারে আপনার সম্মান মর্যাদ থাকবে না, সেখানে কেন যাবেন? অন্য কোথাও আপনার উপযুক্ত পাত্রী দেখে বিয়ে করে নেন। অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মেয়েদের বিবাহের সুযোগ নেই।