গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে শুকরান, মুবারকবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নের উত্তর সহ আরেকটু বিস্তারিত দেওয়ার প্রয়াস পাচ্ছি। বিষয়টি সহজে বুঝতে প্রথমে কয়েকটি ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সময় কোনো কিছুর দোহাই বা বা ওসীলা দেওয়া কয়েকভাবে হতে পারে:
১) মহান আল্লাহর পবিত্র নাম ও গুণাবলির দোহাই দেওয়া। ২) নিজের কোনো ভাল কর্মের দোহাই দেওয়া। ৩) কারো দুআর দোহাই দেওয়া। ৪) কারো ব্যক্তিগত মর্যাদা বা অধিকারের দোহাই দেওয়া। প্রথমত: মহান আল্লাহর পবিত্র নাম ও গুণাবলির দোহাই দেওয়া যেমন বলা যে, হে আল্লাহ, আপনার রহমান নামের গুণে, বা গাফ্ফার নামের ওসীলায় আমার দুআ কবুল করুন। এরূপ দোহাই দেওয়া কুরআন- হাদীসের নির্দেশ এবং দুআ কবুল হওয়ার কারণ। দিত্বীয়তঃ নিজের কোনো ভাল কর্মের দোহাই বা ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা। নিজের কোনো ভাল কর্মের দোহাই বা ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করলে কবুল হয় বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতীত যুগের তিনজন মানুষ বিজন পথে চলতে চলতে বৃষ্টির কারণে এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে। প্রবল বর্ষণে একটি বিশাল পাথর গড়িয়ে পড়ে তাদের গুহার মুখ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে গুহাটি তাদের জীবন্ত কবরে পরিণত হয়। এ ভয়ানক বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তারা দুআ করতে মনস্থ করেন। এবং আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং পাথরটি সরে যায়। অনুরূপভাবে নিজের ঈমান, মহব্বত ইত্যাদির ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়াও এ প্রকারের ওসীলার অন্তর্ভক্ত । বুরাইদাহ আসলামী (রা) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করে দেখেন এক ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় দুআ করছে হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, এ ওসীলায় (এদ্বারা) যে, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, আপনিই আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনিই একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি জন্মদান করেননি ও জন্মগ্রহণ করেননি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, নিশ্চয় এই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তাঁর ইসমু আযম ধরে প্রার্থনা করেছে, যে নাম ধরে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নাম ধরে চাইলে তিনি প্রদান করেন। তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫১৫; আবূ দাউদ, হাকিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এখানে আমরা দেখছি যে, ঈমান ও শাহাদতের ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে এরূপ দুআ করা যায়, যেমন: হে আল্লাহ, আমি গোনাহগার, আমি অমুক কর্মটি আপনার সন্তুষ্টির জন্য করেছিলাম, সেই ওসীলায় আমার প্রার্থনা কবুল করুন। তৃতীয়ত: কারো দুআর দোহাই দেওয়া। কারো দুআর ওসীলা দেওয়ার অর্থ এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ, অমুক আমার জন্য দুআ করেছেন, আপনি আমার বিষয়ে তাঁর দুআ কবুল করে আমার হাজত পূরণ করে দিন। নেককার মুত্তাকী মুমিনদের নিকট দুআ চাওয়া সুন্নাত সম্মত রীতি। এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণীত। হাদীসে আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন:
إِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ t كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنك r فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ
উমার (রা) যখন অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হতেন তখন আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবকে (রা) দিয়ে বৃষ্টির দুআ করাতেন, অতঃপর বলতেন: হে আল্লাহ আমরা আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওসীলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করতাম ফলে আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আপনার নিকট প্রার্থনা করছি আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচার ওসীলায়, অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। আনাস (রা) বলেন, তখন বৃষ্টিপাত হতো। বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৪২, ৩/১৩৬০। আব্বাস (রা) নিম্নের বাক্যগুলি বলে দুআ করলে আল্লাহ বৃষ্টি দিতেন:
اللهم إنه لم ينزل بلاء إلا بذنب ولم يكشف إلا بتوبة وقد توجه القوم بي إليك لمكانى من نبيك وهذه أيدينا إليك بالذنوب ونواصينا إليك بالتوبة فاسقنا الغيث
হে আল্লাহ, পাপের কারণ ছাড়া বালা-মুসিবত নাযিল হয় না এবং তাওবা ছাড়া তা অপসারিত হয় না। আপনার নবীর সাথে আমার সম্পর্কের কারণে মানুষেরা আমার মাধ্যমে আপনার দিকে মুখ ফিরিয়েছে। এ আমাদের পাপময় হাতগুলি আপনার দিকে প্রসারিত এবং আমাদের ললাটগুলি তাওবায় আপনার নিকট সমর্পিত, অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ২/৪৯৭। এ হাদীসেও স্পষ্ট যে, আব্বাস (রা) বৃষ্টির জন্য দুআ করেছেন উমার (রা) আব্বাসের (রা) দুআর ওসীলা দিয়ে দুআ করেছেন। তাঁর কথা থেকে বুঝা যায় যে, যতদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ছিলেন, ততদিন খরা বা অনাবৃষ্টি হলে তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে দুআ চাইতেন এবং সে দুআর ওসীলায় আল্লাহ তাদের বৃষ্টি দান করতেন। তাঁর ওফাতের পরে যেহেতু আর তাঁর কাছে দুআ চাওয়া যাচ্ছে না, সেহেতু তাঁর চাচা আব্বাসের (রা) কাছে দুআ চাচ্ছেন এবং দুআর ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছেন। চতুর্থত: কোনো ব্যক্তি তাঁর মর্যাদা বা অধিকারের দোহাই দেওয়া। আল্লাহর কাছে দুআ করার ক্ষেত্রে ওসীলা বা দোহাই দেওয়ার চতুর্ত পর্যায় হলো, কোনো ব্যক্তির, বা তাঁর মর্যাদার বা তাঁর অধিকারের দোহাই দেওয়া। যেমন জীবিত বা মৃত কোনো নবী-ওলীর নাম উল্লেখ করে বলা: হে আল্লাহ অমুকের ওসীলায়, বা অমুকের মর্যাদার ওসীলায় বা অমুকের অধিকারের অসীলায় আমার দুআ কবুল করুন। এরূপ দুআ করার বৈধতার বিষয়ে আলিমদের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। অনেক আলিম এরূপ দুআ করা বৈধ বলেছেন। তাদের বর্ণনার সার-সংক্ষেপ যে, খলীফা হযরর উসমান (রা)-এর সময়ে এক ব্যক্তি তাঁর দরবারে একটি প্রয়োজনে যায়। কিন্তু খলীফা তার প্রতি দষ্টিৃপাত করেন না। লোকটি উসমান ইবনু হানীফের (রা) নিকট গমন করে তাকে খলীফা উসমানের নিকট তার জন্য সুপারিশ করতে অনুরোধ করে। তখন উসমান ইবনু হানীফ লোকটিকে একটি দোয়া শিখিয়ে দেন, যা রাসূল সাঃ এর এক অন্ধ ছাহাবী অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাসূল সাঃ এর কাছে দোয়া চাইলে তিনি তাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। লোকটি এভাবে দুআ করার পরে খলীফা উসমান (রা) তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। দোয়াটি নিম্নরূপঃ
أَنَّ رَجُلا ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ r فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي قَالَ إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قَالَ فَادْعُهْ قَالَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ (فيحسن ركعتين) وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ r نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، (يا محمد) إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِيَ (يا محمد إني أَتَوَجَّهُ بِكَ إلى اللهِ أَنْ يَقْضِيَ حَاجَتِيْ) (فَيُجْلِيْ لِيْ عَنْ بَصَرِي) اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ (وشَفِّعْنِي فِيْهِ) (اللهم شَفِّعْهُ فِيَّ وَشَفِّعْنِيْ فِيْ نَفْسِيْ)
একজন অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আগমনে করে বলে, আমার জন্য দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দান করেন। তিনি বলেন: তুমি যদি চাও আমি দুআ করব, আর যদি চাও তবে সবর কর, সেটাই তোমার জন্য উত্তম। লোকটি বলে: আপনি দুআ করুন। তখন তিনি তাকে নির্দেশ দেন, সে যেন সুন্দর করে ওযূ করে (অন্য বর্ণনায়: এবং দু রাকাত সালাত আদায় করে) এবং এই দুআ করে: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকে মুখ ফিরাচ্ছি (মনোনিবেশ করছি) আপনার নবী মুহাম্মাদের দ্বারা, যিনি রহমতের নবী, হে মুহাম্মাদ, আমি মুখ ফিরাচ্ছি (মনোনিবেশ করছি) আপনার দ্বারা আমার প্রতিপালকের দিকে আমার এ প্রয়োজনটির বিষয়ে, যেন তা মেটানো হয়। (অন্য বর্ণনায়: যেন তিনি তা মিটিয়ে দেন, যেন তিনি আমার দৃষ্টি প্রদান করেন। ) হে আল্লাহ আপনি আমার বিষয়ে তার সুপারিশ কবুল করুন (অন্য বর্ণনায়: আমার বিষয়ে তাঁর সুপারিশ কবুল করুন এবং তাঁর জন্য আমার সুপারিশ কবুল করুন। অন্য বর্ণনায়: আমার বিষয়ে তাঁর সুপারিশ কবুল করুন এবং আমার বিষয়ে আমার নিজের সুপারিশও কবুল করুন। ) তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৬৯; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৭০০, ১/৭০৭; হাকিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এ হাদীসে অন্ধ লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দুআ চেয়েছে। তিনি দুআ করেছেন এবং তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন তাঁর দুআর ওসীলা দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে নিজে দুআ করতে। লোকটি সেভাবে দুআ করেছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুআর ওসীলাই নয়, উপরন্তু তাঁর ইন্তেকালের পরেও তাঁর ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়াও বৈধ। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো ফিরিশতা, নবী, সাহাবী, তাবিয়ী বা ওলী-আল্লাহর ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়ার কোনো কথা কোনো হাদীসে বা সাহাবী-তাবিয়ীগণের বক্তব্যে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো আলিম কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যক্তিসত্তার ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা জায়েয বলেছেন। অন্য কারো ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়া নাজায়েয বলেছেন। তাঁদের মতে, কারো মৃত্যুর পরেও তাঁর ওসীলা দিয়ে দুআ করা জায়েয বলার পরে রাসূলুল্লাহ সা. কে বাদ দিয়ে অন্য কারো ওসীলা দিয়ে দুআ করা তাঁর সাথে বেয়াদবী ছাড়া কিছুই নয়। পক্ষান্তরে অন্য অনেক আলিম কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির, তাঁর মর্যাদার বা তাঁর অধিকারের দোহাই দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা অবৈধ ও নাজায়েয বলে গণ্য করেছেন। তাঁরা বলেন যে, এরূপ কোনো জীবিত বা মৃত কারো ব্যক্তিসত্তার ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়ার কোনোরূপ নযির কোনো সহীহ ও প্রসিদ্ধ হাদীসে বা সাহাবী-তাবিয়ীগণের মধ্যে পাওয়া যায় না। এছাড়া নবীগণ ও যাদের নাম মহান আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন তাঁরা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির বিষয়ে সুনিশ্চিতভাবে কখনোই বলা যায় না যে, উক্ত ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বা আল্লাহর কাছে তাঁর কোনো বিশেষ মর্যাদা বা অধিকার আছে। সর্বোপরি তাঁরা উপরে উল্লেখিত উমার (রা) কর্তৃক আব্বাসের ওসীলা প্রদানকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। যদি কারো দুআর ওসীলা না দিয়ে তাঁর সত্তার ওসীলা দেওয়া জায়েয হত তবে উমার (রা) ও সাহাবীগণ কখনোই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বাদ দিয়ে আব্বাস (রা)-এর দোয়ার ওসীলা পেশ করতেন না। শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী তাঁর আল-বালাগুল মুবীন গন্থে উমার (রা)-এর হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন: এই ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তিকে অসিলা করা শরীয়ত বিরোধী। যদি শরীয়ত সিদ্ধ হইত হযরত ওমর (রা) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অসিলা করিয়াই দোআ করিতেন। কারণ, মৃত বা জীবিত যে কোন ব্যক্তির চেয়েই হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ফযীলত সীমাহীন-অনন্ত। তাহই হযরত ওমর (রা) এই কথা বলেন নাই যে, হে আল্লাহ, ইতি পূর্বে তো আমরা তোমার নবীকে অসীলা করিয়া দোআ করিতাম। কিন্তু এখন তিনি আমাদের মধ্যে বিদ্যমান নাই তাই আমরা তাঁহার রুহু মোবারককে অসিলা করিয়া তোমার কাছে আরযী বেশ করিতেছি। তাই কোন মৃত ব্যক্তিকে অসিলা করা মোটেই বৈধ নহে। এবং জীবিত ব্যক্তির ব্যক্তি স্বত্তার ওসীলা দিয়ে দোয়া করার কথাও কোরান হাদীসে কোথাও পাওয়া যায় না। বরং জীবিত ব্যক্তির দোওয়ার ওসীলা দিয়ে দোয়া করার কথা একাধিক হাদীসে পাওয়া যায়। ইমাম আবূ হানীফা (রাহ), ইমাম আবূ ইউসূফ (রাহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহ) সকলেই একমত যে কারো অধিকার বা মর্যাদার দোহাই দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ চাওয়া মাকরূহ। আল্লামা ইবনু আবিল ইয্য হানাফী বলেন:
قَالَ أَبُو حَنِيفَةَ وَصَاحِبَاهُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ : يُكْرَهُ أَنْ يَقُولَ الدَّاعِي: أَسْأَلُكَ بِحَقِّ فُلانٍ، أَوْ بِحَقِّ أَنْبِيَائِكَ وَرُسُلِكَ ، وَبِحَقِّ الْبَيْتِ الْحَرَامِ ، وَالْمَشْعَرِ الْحَرَامِ ، وَنَحْوِ ذَلِكَ
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) ও তাঁর সঙ্গীদ্বয় বলেছেন: আমি অমুকের অধিকার বা আপনার নবী-রাসূলগণের অধিকার, বা বাইতুল হারামের অধিকার বা মাশআরুল হারামের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি বা প্রার্থনা করছি বলে দুআ করা মাকরূহ। আল্লামা আলাউদ্দীন কাসানী (৫৮৭ হি) বলেন:
وَيُكْرَهُ لِلرَّجُلِ أَنْ يَقُولَ فِي دُعَائِهِ أَسْأَلُك بِحَقِّ أَنْبِيَائِك وَرُسُلِك وَبِحَقِّ فُلانٍ لأنَّهُ لا حَقَّ لأحَدٍ عَلَى اللَّهِ…
আমি আপনার নবী-রাসূলগণের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি এবং অমুকের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি বলে দুআ করা মাকরূহ; কারণ মহান আল্লাহর উপরে কারো কোনো অধিকার নেই। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা যায় যে,প্রথম তিন প্রকারের ওসীলা গ্রহন করা বৈধ। এমনকি কোনটি উত্তম । কিন্তু চতুর্থ প্রকার তথা ব্যক্তি স্বত্তার ওসীলা দিয়ে দোয়া করা অপছন্দনিয় যা থেকে বেচে থাকা আমাদের উচিত্ জীবিত হোক বা মৃত হোক । আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।