ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ, আল্লাহ তায়ালা মানুষের হৃদয়ের কথাগুলো জানতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন: إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মানুষের হৃদয়ের বিষয় সম্পর্কে অবগত। সূরা আলে ইমরান ১১৯। ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন এর হুকুম
কুরআন ও হাদীসের আলোকে হস্তমৈথুন হারাম। মুহাক্কিক আলেমগণ বলেছেন, যদি জিনার (ব্যভিচারের) আশংকা হয় তাহলে হারাম হবে না। দলীলসহ মাসআলাটি নিম্নরুপ:
হস্তমৈথুন হারাম। কুরআন ও হাদীসে এই ব্যাপারে দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। কুরআনের দলীল:পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (৫) إِلاَّ عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ (৬) فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاء ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ (৭)
আর যারা তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। তবে তাদের স্ত্রী ও দাশীদের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। তখন তারা নিন্দিত হবে না। সুতরাং যারা এদের ছাড়া অন্য কোন মহিলাকে (যৌন চাহিদা পূরণের জন্য) খুঁজবে তারা সীমালংঘনকারী। সূরা মূমিনুন, আয়াত:৫,৬,৭
উক্ত আয়াত দ্বারা ইমাম শাফেয়ী (র.) হস্তমৈথুন হারাম হওয়ার দলীল পেশ করেছেন। আয়াতগুলো উল্লেখ করার পর তিনি বলেছেন,
فَكَانَ بَيِّنًا في ذِكْرِ حِفْظِهِمْ لِفُرُوجِهِمْ إلاَّ على أَزْوَاجِهِمْ أو ما مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ تَحْرِيمُ ما سِوَى الأَزْوَاجِ وما مَلَكَتْ الأَيْمَانُ ثُمَّ أَكَّدَهَا فقال عز وجل {فَمَنْ ابْتَغَى وَرَاءَ ذلك فَأُولَئِكَ هُمْ الْعَادُونَ} فَلاَ يَحِلُّ الْعَمَلُ بِالذَّكَرِ إلاَّ في الزَّوْجَةِ أو في مِلْكِ الْيَمِينِ وَلاَ يَحِلُّ الاِسْتِمْنَاءُ وَاَللَّهُ تَعَالَى أَعْلَمُ শাফেয়ী বলেন, স্ত্রী ও দাশী ছাড়া অন্য কোথাও যৌন চাহিদা পূরণ করা যাবে না এ কথার মধ্যে প্রমাণ রয়েছে যে,স্ত্রী ও দাসী ছাড়া অন্য যে কোন জায়গায় যৌনকর্ম হারাম। এরপর আল্লাহ তায়ালা বিষয়টি আরো জোরালো করে বলেছেন, সুতরাং যারা এদের ছাড়া অন্য কোন মহিলাকে (যৌন চাহিদা পূরণের জন্য) খুঁজবে তারা সীমালংঘনকারী। ফলে স্ত্রী ও দাশী ছাড়া যৌনকর্ম হালাল হবে না এবং হস্তমৈথুন হালাল হবে না।আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন।কিতাবুল উম্ম, (ইমাম শাফী র.) হস্তমৈথুন অধ্যায় ৫/৯৪
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম বাগবী (র.) বলেছেন,
وفيه دليل على أن الاستمناء باليد حرام، وهو قول أكثر العلماء.
অর্থ: এই আয়াতের মধ্যে দলীল রয়েছে যে, হস্তমৈথুন হারাম, আর এটাই অধিকাংশ আলেমের মত।তাফসীবে বাগবী, (উক্ত আয়াতের তাফসীর) ৫/৪১০ উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) বলেছেন,
وقد استدل الإمام الشافعي، رحمه الله، ومن وافقه على تحريم الاستمناء باليد بهذه الآية الكريمة { وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ . إِلا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ }
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এবং যে সব আলেম তার সাথে হস্তমৈথুন হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষন করেছেন তারা এই আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তাফসীরে ইবনে কাসীর, (উক্ত আয়াতের তাফসীর) ৫/৪৬৩
আল্লামা আলুসী (রহ.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন,
فجمهور الأئمة على تحريمه وهو عندهم داخل فيما وراء ذلك
জমহুর আইম্মা (অধিকাংশ ইমাম) এই বিষয়টিকে (হস্তমৈথুনকে) হারাম বলেছেন। আর এই বিষয়টি তাদের নিকট আয়াতের অংশ স্ত্রী ও দাসী ছাড়া এর মধ্যে প্রবেশ করবে।তাফসীরে রুহুল মায়ানী, (উক্ত আয়াতের তাফসীর) ৯/২১৩
হাদীসের দলীল:
عن عَبْد اللهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهُ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاء
আমরা এমন কিছু যুবক রাসূল (সা.) এর কাছে ছিলাম যাদের বিবাহের জন্য প্রয়োজনীও সচ্ছলতা ছিল না। তখন রাসূল (সা.) বললেন, হে যুবকেরা, যার সচ্ছলতা আছে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে নিম্নগামী করে ও লজ্জাস্থান সুরক্ষিত করে । আর যে বিবাহে সক্ষম হবে না সে যেন রোজা রাখে। কেননা তা তাকে দমনকারী। এই হাদীসে রাসূল (সা.) হস্তমৈথুন সহজ হওয়া সত্ত্বেও কঠিন কাজ রোজা রাখতে বলেছেন, অথচ তিনি সব সময় সহজ বিষয়টির পরামর্শ দেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৬
মুহাক্কিক আলেমগনের মতে যদি ব্যভিচারের আশংকা করে তাহলে ব্যভিচার এর চেয়ে নিকৃষ্ট । এ সম্পর্কে দুর্বল সনদে সাহাবিদের মতামত বর্ণিত আছে :
عن مجاهد قال سئل بن عمر عنه قال ذلك نائك نفسه
عن أبي يحيى عن بن عباس قال قال رجل إني أعبث بذكري حتى أنزل قال إن نكاح الأمة خير منه وهو خير من الزنى
মুজাহিদ রহি. বলেন, ইবনে উমার (র.) কে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিনি বললেন, এটা নিজের প্রতি অবিচার। আবু ইয়াহইয়া ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, একজন লোক বলল, আমি আমার পরুষাঙ্গ নিয়ে খেলা করি, এমনকি বীর্জ বের হয়ে যায়। জবাবে ইবনে আব্বাস বলেন, বিবাহ এর থেকে উত্তম আর এটা ব্যভিচার থেকে ভাল। মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ১৩৫৮৭ ও ১৩৫৮৮
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
أَمَّا الِاسْتِمْنَاء بِالْيَدِ فَهُوَ حَرَامٌ عِنْدَ جُمْهُورِ الْعُلَمَاءِ وَهُوَ أَصَحُّ الْقَوْلَيْنِ فِي مَذْهَبِ أَحْمَد وَكَذَلِكَ يُعَزَّرُ مَنْ فَعَلَهُ . وَفِي الْقَوْلِ الْآخَرِ هُوَ مَكْرُوهٌ غَيْرُ مُحَرَّمٍ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يُبِيحُونَهُ لِخَوْفِ الْعَنَتِ وَلَا غَيْرِهِ وَنُقِلَ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ أَنَّهُمْ رَخَّصُوا فِيهِ لِلضَّرُورَةِ : مِثْلَ أَنْ يَخْشَى الزِّنَا فَلَا يُعْصَمُ مِنْهُ إلَّا بِهِ وَمِثْلَ أَنْ يَخَافَ إنْ لَمْ يَفْعَلْهُ أَنْ يَمْرَضَ وَهَذَا قَوْلُ أَحْمَد وَغَيْرِهِ . وَأَمَّا بِدُونِ الضَّرُورَةِ فَمَا عَلِمْت أَحَدًا رَخَّصَ فِيهِ . وَاَللَّهُ أَعْلَمُ
অর্থ:অধিকাংশ আলেমের নিকট হস্তমৈথুন হারাম আর হাম্বলী মাজহাবের বিশদ্ধ বর্ণনা এটাই। যে এমন করে সে নিন্দার পাত্র। অন্য বর্ণনায় মাকরুহ, হারাম নয়। অধিকাংশ আলেম কোন সময়ই এর বৈধতা দেননি চাই ব্যভিচারের ভয় হোক বা অন্য কোন কারনে হোক। তবে একদল সাহাবী এবং তাবেঈ থেকে বর্ণিত আছে,তারা প্রয়োজনের সময় এটাকে বৈধতা দিয়েছেন। যেমন ব্যভিচারের ভয়ে,রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়ে। আর এটাই আহমাদ এবং অন্যান্যদের মত। আর আমি এমন কাউকে দেখিনি যে বিনা প্রয়োজনে এই বিষয়টির বৈধতা দিয়েছেন। মাজমুউল ফাতাওয়া,২৪/২২৯। বাবু সুয়িলা আনিল ইসতিমনা-ই। তিনি আরো বলেছেন,
الِاسْتِمْنَاءُ لَا يُبَاحُ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ سَلَفًا وَخَلَفًا سَوَاءٌ خُشِيَ الْعَنَتُ أَوْ لَمْ يُخْشَ ذَلِكَ . وَكَلَامُ ابْنِ عَبَّاسٍ وَمَا رُوِيَ عَنْ أَحْمَد فِيهِ إنَّمَا هُوَ لِمَنْ خَشِيَ الْعَنَتَ وَهُوَ الزِّنَا وَاللِّوَاطُ خَشْيَةً شَدِيدَةً خَافَ عَلَى نَفْسِهِ مِنْ الْوُقُوعِ فِي ذَلِكَ فَأُبِيحَ لَهُ ذَلِكَ لِتَكْسِيرِ شِدَّةِ عَنَتِهِ وَشَهْوَتِهِ . وَأَمَّا مَنْ فَعَلَ ذَلِكَ تَلَذُّذًا أَوْ تَذَكُّرًا أَوْ عَادَةً ؛ بِأَنْ يَتَذَكَّرَ فِي حَالِ اسْتِمْنَائِهِ صُورَةً كَأَنَّهُ يُجَامِعُهَا فَهَذَا كُلُّهُ مُحَرَّمٌ لَا يَقُولُ بِهِ أَحْمَد وَلَا غَيْرُهُ وَقَدْ أَوْجَبَ فِيهِ بَعْضُهُمْ الْحَدَّ ، وَالصَّبْرُ عَنْ هَذَا مِنْ الْوَاجِبَاتِ لَا مِنْ الْمُسْتَحَبَّاتِ
অর্থ: পূর্ব ও পরবর্তী অধিকাংশ আলেমের নিকট হস্তমৈথুন বৈধ নয়। চাই ব্যভিচারের আশংকা থাক বা না থাক। ইবনে আব্বাস (রহ.) এবং ইমাম আহমাদ থেকে যা (অর্থাৎ বৈধতা) বর্ণিত আছে সেটা ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে গুনাহর আশংকা করে। আর তা হল ব্যভিচার, বলৎকারে লিপ্ত হওয়ার প্রচন্ড ভয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি স্বাদ উপভোগের জন্য কিংবা কোন মেয়ের আকৃতি মনে মনে ভেবে তার সাথে সহবাস করছে এমন মনে করে হস্তমৈথুন করে তাহলে তা সম্পূর্ণ হারাম। ইমাম আহমাদ বা কেউ এটাকে বৈধ বলেননি। কোন কোন আলেম বলেছেন তার উপর হদ ওয়াজিব। আর এর থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব, মুস্তাহাব নয়। মাজমুউল ফাতাওয়া, ১০/৫৭৪। বাব- আসসবরু আলাল মুহাররমাত। ইবনে আবেদীন শামী আল হানাফী (রহ.) বলেছেন,
الاستمناء حرام أي بالكف إذا كان لاستجلاب الشهوة أما إذا غلبته الشهوة وليس له زوجة ولا أمة ففعل ذلك لتسكينها فالرجاء أنه لا وبال عليه كما قاله أبو الليث ويجب لو خاف الزنا
যৌন প্রশান্তি লাভের উদ্দেশ্যে হস্তমৈথুন হারাম। তবে স্ত্রী বা দাসী না থাকা অবস্থায় যদি যৌনকাংখা অতিরিক্ত প্রবল হয় তাহলে আশা করা যায় এই কারণে সে গুনাহগার হবে না। এমনই বলেছেন ফকীহ আবু লাইছ। আর যদি ব্যভিচারের ভয় করে তাহলে এটা করা ওয়াজিব। হাশিয়াতু রদ্দিল মুখতার আলা দুররিল মুখতার, ৪/২৭ বাব ফি হুকমিল লিওতাত। মোটকথা হস্তমৈথুন হারাম, তবে যদি ব্যভিচারের আশংকা থাকে তাহলে একটু শিথিলতা আছে।