আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 1762

নামায

প্রকাশকাল: 26 নভে. 2010

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম, আমি সব নামাজের সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়িল আলা পড়ে, আরবি দোয়ার পাশাপাশি বাংলা দোয়া পরার চেষ্টা করি । বাংলা দোয়া পড়লে মনে তৃপ্তি পাই। প্রশ্ন ১/ সুন্নত ও নফল নামাজ এ নাকি দোয়া পরা যাবে, কিন্তু ফরজ নামাজের সিজদায় দোয়া পরা যায় না। ২/আরবি দোয়া পড়তে হয়, বাংলা পড়া যাবে না। বিষয় টি জানাবেন।

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। যে কোন নামাযের ভিতর আরবীতে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত দুআ পড়তে হয়। তাই প্রত্যেকের উচিত আরবী দুআ মুখস্ত করা। মুখস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায় বলে আলেমদের মতামত থেকে বোঝা যায়। এই বিষয়ে শায়খ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি. রাহে বেলায়াত গ্রন্থে বলেছেন, মাতৃভাষায় যিকর ও দুআ পাঠ: রাসূলুল্লাহ সা.-এর শেখানো যিকর ও দুআগুলি অর্থ হৃদয়ঙ্গম করে মূল আরবীতে পাঠ করলেই মহান আল্লাহর যিকর ও দুআর প্রকৃত স্বাদ, তৃপ্তি, আনন্দ ও আধ্ম্যাতিকতা লাভ করা যায়। কারণ তাঁর ভাষার যে অপূর্ব কাঠামো ও পূর্ণতা তা কোনোভাবে অন্যভাষায় ভাষান্তর করা যায় না। মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বালী মাযহাবের ফকীহগণ সাধারণভাবে আরবীতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য অনারব ভাষায় সালাতের মধ্যে যিকর ও দুআ পাঠ বৈধ বলেছেন। হানাফী মাযহাবের ইমামাগণ আরবীতে অপারগের জন্য সালাতের মধ্যে অনারব ভাষা ব্যবহার বৈধ বললেও পরবর্তী ফকীহগণ তা মাকরূহ বলেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম সারাখসী বলেন: وَلَوْ كَبَّرَ بِالْفَارِسِيَّةِ جَازَ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ … وَلاَ يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي يُوسُفَ وَمُحَمَّدٍ رَحِمَهُمَا اللَّهُ إلاَّ أَنْ لاَ يُحْسِنَ الْعَرَبِيَّةَ … وَكَذَلِكَ الْخِلاَفُ فِيمَا إذَا تَشَهَّدَ بِالْفَارِسِيَّةِ যদি সালাতের তাকবীর র্ফাসী ভাষায় বলে তবে আবূ হানীফা (রাহ)-এর মতে তা জায়েয হবে। …আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদের মতে তা জায়েয হবে না, তবে আরবীতে পারঙ্গম না হলে জায়েয হবে। সালাতের মধ্যে তাশাহ্হূদ ফারসীতে পাঠ করা … ক্ষেত্রেও একই মতভেদ । আবূ বাকর সারাখসী, আল-মাবসূত ১/৩৬-৩৭। আরো দেখুন: আালাউদ্দীন সমরকন্দী, তুহফাতুল ফুকাহা ১/১৩০; আলাউদ্দীন কাসানী, বাদাউউস সানাইয় ১/১১২-১১৩। সালাতের মধ্যে অনারব ভাষায় যিকর-দুআ প্রসঙ্গে আল্লামা শামী বলেন: الْمَنْقُولَ عِنْدَنَا الْكَرَاهَةُ … وَظَاهِرُ التَّعْلِيلِ أَنَّ الدُّعَاءَ بِغَيْرِ الْعَرَبِيَّةِ خِلَافُ الْأَوْلَى، وَأَنَّ الْكَرَاهَةَ فِيهِ تَنْزِيهِيَّةٌ… وَلَا يَبْعُدُ أَنْ يَكُونَ الدُّعَاءُ بِالْفَارِسِيَّةِ مَكْرُوهًا تَحْرِيمًا فِي الصَّلَاةِ وَتَنْزِيهًا خَارِجَهَا হানাফী মাযহাবের বর্ণিত মত যে তা মাকরূহ। … বাহ্যত প্রতীয়মান হয় যে, তা অনুত্তম বা অনুচিত পর্যায়ের এবং মাকরূহ তানযীহী। … অনারব ভাষায় দুআ করা সালাতের মধ্যে মাকরূহ তাহরীমী এবং সালাতের বাইরে মাকরূহ তানযীহী হওয়াও অসম্ভব নয়।ইবন আবিদীন, রাদ্দুল মুহতার (হাশিয়াতু ইবন আবিদীন) ১/৫২১। সামগ্রিক বিচারে প্রত্যেক আগ্রহী মুমিনের উচিত মাসনূন দুআ ও যিকরগুরি অর্থ-সহ আরবীতে মুখস্থ করা এবং সালাতের মধ্যে তা পাঠ করা।একান্ত অক্ষম হলে যতদিন আরবী দুআ মুখস্থ না হয় ততদিন নফল বা তাহাজ্জুদের সালাতের মধ্যে ও সাজদায় মাসনূন দুআগুলির অর্থ মাতৃভাষায় পাঠ করা অনুচিত হলেও নিষিদ্ধ হবে না বলেই আমরা আশা করি। মাসনূন দুআগুলো মুখস্থ না হওয়া পর্যন্ত সালাতের বাইরে বই হাতে দেখে দেখে আরবী দুআ পাঠ করা যায়। প্রয়োজনে শুধু বাংলা অর্থ পাঠ করেও দুআ করা যায়। তবে চেষ্টা করতে হবে মাসনূন আরবী দুআ মুখস্থ করার। আল্লাহই ভাল জানেন।