আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 1627

যাকাত

প্রকাশকাল: 14 জুলাই 2010

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন যাকাতের ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ হিসেবে কি স্বর্ণের মূল্য বিবেচ্য হবে না রুপার মূল্য? আমি বিভিন্ন আলেমদের আলচনায় এটা বুঝেছি যে নিসাব ধরতে হবে সর্বনিম্ন মুল্যের সম্পদের মূল্য হিসেবে। সে অর্থে রুপার মূল্য ধরতে হয়। আমি যখন আমার পরিবার পরিজনের নিকট এই কথা বলি তারা আমার সাথে একমত পোষণ করেন না। তাদের কথা স্বর্ণের হিসেব স্বর্ণের আরা রুপার হিসেব রুপার। আমার কাছে তাদের কে বলার মত কোন হাদিস বা ইজমা/কিয়াস বা অন্য কোন দলিল নেই। এ ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য কামনা করছি। প্রশ্ন সঠিক ভাবে বুঝাতে আমি কয়েকটি উদাহরণ দিচ্রবেন। আমি আশা রাখছি আস সুন্নাহ ট্রাস্ট আমাকে এই উদাহরণের ভিত্তিতে উত্তর জানাবেন এবং উপযুক্ত দলিলাদি দিয়ে সাহায্য করবেন। উদাহরণ ১ঃ এক ব্যাক্তির নিকট ৫ ভরি স্বর্ণ ও ৫ ভরি রুপা আছে যা ১ বছর অতিবাহিত হয়েছে। তাহলে কি তার উপর যাকাত ফরয হবে?
এখানে আমি বুঝেছি যাকাত দিতে হবে। যেহেতু ৫ ভরি স্বর্ণের মূল্য সাড়ে ৫২ ভরি রুপার দামের সমান বা তার বেশি। তাই স্বর্ণ ও রুপা মিলিয়ে যা দাম আসবে তার ২.৫% যাকাত দিতে হবে। আমি কি সঠিক বুঝেছি?
উদাহরণ ২ঃ কারো নিকট ১০০০০০ (এক লক্ষ) আছে যা ১ বছর অতিবাহিত হয়েছে। তাহলে কি তার উপর যাকাত ফরয হবে?
এক্ষেত্রে আমি বুঝেছি তাকে যাকাত দিতে হবে। কেননা ১ লক্ষ টাকা ৫২.৫ ভরি রুপার দামের চেয়ে বেশি। যদিও ১ লক্ষ টাকায় ৭.৫ ভরি স্বর্ণ পাওয়া যাবেনা কিন্তু নিসাবের সর্বনিন্ম দাম রুপার হিসেবে করলে যাকাত দেওয়া আবশ্যক। উদাহরণ ৩ঃ কারো নিকট শুধু ৩ ভরি স্বর্ণ আছে যা তিনি নিত্য ব্যাবহার করেন। তার কি যাকাত দিতে হবে? আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।

উত্তর

যাকাতের নিসাব স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি এবং রোপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। অর্থাৎ কারো কাছে যদি শুধু স্বর্ণ থাকে তাহলে সাড়ে সাত ভরির কম হলে যাকাত ফরজ হবে না। তেমনি যদি কারো কাছে শুধু রোপা থাকে তাহলে সাড়ে বায়ান্ন ভরির কমে যাকাত ফরজ হবে ন। তবে যদি কারো কাছে স্বর্ণ ও রোপা উভয়টি থাকে তবে নিসাব পরিমান নয় কিন্তু টাকার হিসাবে সেগুলোর মোট মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রোপার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে অধিকাংশ আলেমের মতে তার উপর যাকাত ফরজ।এই বিষয়ে আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু কিতাবের মধ্যে আছে: ويضم عند الجمهور (غير الشافعية ) أحد النقدين إلى الآخر في تكميل النصاب، فيضم الذهب إلى الفضة وبالعكس بالقيمة، অর্থ: শাফেয়ী মাজাহাবের আলেমগণ বাদে অধিকাংশ আলেমদের নিকটে যাকাতের নিসাব পূর্ণ করার ক্ষেত্রে একটি মুদ্রাকে আরেকটি মুদ্রার সাথে মিলাতে হবে। সুতরাং স্বর্ণকে রুপার সাথে মূল্যে হিসাবে মিলাতে হবে। আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু ৩/১৮২। বিখ্যাত ফিকহী বিশ্বকোষ আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ এর আলেমগণ বলেছেন, ذَهَبَ الْجُمْهُورُ ( الْحَنَفِيَّةُ وَالْمَالِكِيَّةُ وَهُوَ رِوَايَةٌ عَنْ أَحْمَدَ وَقَوْل الثَّوْرِيِّ وَالأَْوْزَاعِيِّ ) إِلَى أَنَّ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ يُضَمُّ أَحَدُهُمَا إِلَى الآْخَرِ فِي تَكْمِيل النِّصَابِ অধিকাংশ আলেমগণ এই মত পোষন করেছেন যে, যাকাতের নিসাব পূর্ণ করার ক্ষেত্রে স্বর্ণ-রোপ্যকে একে অপরের সাথে মিলাতে হবে। যারা এই মত পোষন করেছেন তাদের মধ্যে আছেন হানাফী ও মালেকী আলেমগন, সাওরী ও আওযায়ী রহ.।এবং ইমাম আহমাদ রহ. থেকেও এক বর্ণনায় তিনি এই মত পোষন করেছেন বলে জানা যায়। আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ ২৩/২৬৭। তদ্রুপ যদি কারো আছে নেসাবের চেয়ে কম স্বর্ণ কিংবা রোপা থাকে সাথে টাকা থাকে আর টাকার হিসাবে সেগুলোর মোট মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলার রোপার সমপরিমাণ হয় তাহলে তার উপরেও যাকাত ফরজ। উল্লেখ্য নিসাবের মালিক হওয়ার অর্থাৎ যাকত ফরজ হওয়া পরিমান সম্পদের মালিক হওয়ার এক বছর পর যাকাত আদায় করতে হবে। বছরের মাঝে সম্পদ কমে গেলেও যাকাত দিতে হবে এবং যাকাত দেয়ার সময় যত সম্পদ থাকবে সেটা হিসাব করে আড়াই পার্সেন্ট যাকাত দিতে হব। আপনার উদাহরণগুলোর সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। আর কারো কাছে শুধু তিন ভরি স্বর্ণ থাকলে তাকে যাকাত দিতে হবে না। সুতরাং আপনাদের যদি শুধু স্বর্ন থাকে সাতে সাত ভরির কম তাহলে যাকাত দিতে হবে না। তদ্রুপ রোপা যদি থাকে সাড়ে বায়ান্ন ভরির কম তাহলেও যাকাত দিতে হবে না। তবে দুটোই যদি থাকে তাহেল এক সাথে হিসাব করে দেখবেন যে, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রোপার মূল্য যত টাকা হয় স্বর্ণ-রোপার মূল্য টাকার হিসাবে তত হয় কি না । যদি হয় তাহলে যাকাত দিতে হবে না হরে হবে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।