আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 1453

কুরআন

প্রকাশকাল: 21 জানু. 2010

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম। আমার মনে প্রায়ই কিছু অবানতর প্রশ্ন জাগে। যেমনঃ ১। কে নবী বা কে রাসুল তা কিভাবে নির্ধারন হলো? অনেকের থেকে শুনছি যে যাদের কাছে অহি আসে তারাই কি নবী। এটা যদি সত্যি হয় তবে মরিয়ম আঃ কে কেন নবী বলা হয় না? আল্লাহ বলেনঃ আর যখন ফেরেশতা বলল হে মারইয়াম!, আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের উর্ধ্বে মনোনীত করেছেন। হে মারইয়াম! তোমার পালনকর্তার উপাসনা কর এবং রুকুকারীদের সাথে সেজদা ও রুকু কর। এ হলো গায়েবী সংবাদ, যা আমি আপনাকে পাঠিয়ে থাকি। আর আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না, যখন প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে প্রতিপালন করবে মারইয়ামকে এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিলো। যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত। সুরা ইমরান ৩:৪২-৪৫ এই আয়াত সমূহ প্রমাণ করে যে মরিয়ম আঃ এর কাছে অহি আসছিল। ২। মহিলা কোন নবী নেই বা হতে পারবেন না। এটা কি কোরআনে কোথাও বলা আছে?
৩। আল্লাহ্ বলেনঃ হে মারইয়াম! তোমার পালনকর্তার উপাসনা কর এবং রুকুকারীদের সাথে সেজদা ও রুকু কর সুরা ইমরান ৩:৪৩ এই আয়াত কি মহিলাদের জামাতে নামাজ পড়ার দলিল হতে পারে? ৪। আমাকে এক শিয়া ভাই বলছিল যে আমীন শব্দটি সূরা ফাতিহার পর কোরআনে নাই। এই শব্দটি খিস্টানরা ব্যবহার করে। তাদের চক্রান্তেই মুসলমানেরা আমীন অতিরিক্ত যোগ করছে। আমি নিজেও চেক করছি। সূরা ফাতিহার পর আমীন নেই। আমীন শব্দটি কোরআনে কোথাও আছে কি? আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুক।

উত্তর

ওয়া আলাইকুমুস সালাম। শায়খ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. বলেছেন, ঈমানের অন্যতম বিষয় আল্লাহর রাসূলগণে বিশ্বাস করা। মানুষের প্রতি মহান স্রষ্টার করুণা অসীম। তিনি তাকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও গুণাবলী দান করা ছাড়াও তাকে মঙ্গলের পথ প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন সমাজের মধ্যে থেকে বিভিন্ন মানুষকে বেছে নিয়ে তাঁদের কাছে ওহীর মাধ্যমে সঠিক পথের সন্ধান দান করেছেন। আল্লাহর মনোনীত এসকল মানুষকে ইসলামের পরিভাষায় নবী বা রাসূল বলা হয়। নবী (النبيّ) অর্থ সংবাদদাতা এবং রাসূল (الرسول) অর্থ প্রেরিত বা দূত। আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী লাভ করে যারা মানুষদেরকে আল্লাহর পথের নির্দেশনা দেন তাঁদেরকে নবী ও রাসূল বলা হয়। তবে সকল নবী-রাসূলের নাম বা পরিচয় আমরা জানি না। এ প্রসঙ্গে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙঙ্গীর রহ. বলেন, কুরআনে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে: আদম, ইদরীস, নূহ, হুদ, সালিহ, ইবরাহীম, লূত, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব, ইউসূফ, আইয়ূব, শুয়াইব, মূসা, হারূন, ইউনূস, দাউদ, সুলাইমান, ইল্ইয়াস, ইল্ইয়াসা, যুলকিফল, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা, মুহাম্মাদ (عليهم الصلاة والسلام)। উযাইরকে ইহূদীগণ আল্লাহর পুত্র বলে দাবি করত।কিন্তু কুরআনে তাঁর নবুয়ত সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি। আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: مَا أَدْرِيْ أعُزَيْرٌ نَبِيُّ هُوَ أَمْ لاَ আমি জানি না যে, উযাইর নবী ছিলেন কি না। মূসা (আ)-এর খাদিম হিসাবে ইউশা ইবনু নূন-এর নাম হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণিত কোনো সহীহ হাদীসে অন্য কোনো নবীর নাম উল্লেখ করা হয় নি। কোনো কোনো যয়ীফ হাদীসে আদম আ. এর পুত্র শীস-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন-হাদীস থেকে অন্য কোনো নবীর নাম জানা যায় না। কুরআন কারীমে উল্লিখিত নবী-রাসূলগণকে আমরা নির্দিষ্টভাবে আল্লাহর মনোনীত নবী হিসেবে বিশ্বাস করি। তাঁদের সবাইকে আমরা ভালবাসি ও শ্রদ্ধা করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, তারা সবাই নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী পবিত্র মানুষ ছিলেন। তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন। তাঁরা সবাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী ছিলেন। এঁদের নবুয়ত বা রিসালত আমরা অস্বীকার করি না। কেউ যদি এঁদের কারো নবুয়ত বা রিসালাত অস্বীকার করে অথবা এঁদের অবমাননা করে তবে সে অবিশ্বাসী বা কাফির বলে গণ্য হবে। কুরআন-হাদীসে যাদেরকে নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয় নি তাদের কাউকে আমরা নির্দিষ্টরূপে আল্লাহর মনোনীত নবী বলতে পারি না। অন্য কোনো মানুষের সম্পর্কেই আমরা বলতে পারি না যে, তিনি আল্লাহর নবী ছিলেন। তবে আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ যুগে যুগে আরো অনেক নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন, যারা আল্লাহর মনোনীত প্রিয় পুত-পবিত্র, নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী বান্দা ছিলেন। তাঁরা তাঁদের প্রতি প্রদত্ত দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছেন। তাঁদের নাম বা বিবরণ আমরা জানি না। আল-ফিকহুল আকবার, বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা, পৃষ্ঠা ১৭২। অমরা জানলাম, ওহী পাওয়া এবং তা প্রচার করার দায়িত্ব যারা পালন করবেন তারা নবী-রাসূল আ.। মারইয়াম আ. এর ক্ষেত্রে শুধু তাকে কিছু বিষয় আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন, তাঁকে সেগুলো প্রচার করতে বলেন নি। সুতরাং তিনি সর্বাক্যমতে নবী নন। ২। নবী-রাসূল আর আসবেন না। সুতরাং মহিলা নবী হতে পারে কী পারে না এই প্রশ্ন এখন অবান্তর। এখন দেখতে হবে নবী রাসূলদের নামের যে তালিকা কুরআন-হাদীসে আছে সেখানে কোন মহিলা নবীর নাম আছি কী না এবং কুরআন-হাদীসে কোন মহিলা নবী এসেছেন মর্মে কোন তথ্য আছে কী না। নবী রাসূলদের যে নামের তালিকা কুরআন-হাদীস থেকে পাওয়া যায় তাতে কোন মহিলা নবীর নাম নেই। এবং কুরআন বা হাদীসে কোন মহিলা নবী হয়েছেন মর্মে কোন তথ্য নেই। সুতরাং মহিলা নবী নেই এটা বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এবং সকল আলেম এ ব্যাপারে ঐক্যমত। ৩। দেখুন, আমরা মুহাম্মদ সা. এর উম্মাত। মুহাম্মাদ সা. আমাদেরকে ইবাদতে যাবতীয় নিয়ম-কানুন শিখিয়েছেন। তিনি মহিলারা জামাতে যাবে কী যাবে না তাও স্পষ্ট করে বলেছেন, সুতরাং মুহাম্মদ সা. মহিলাদের জামাতে নামাযের ব্যাপারে কী বলেছেন সেটা আমাদের কাছে মুখ্য। মারইয়াম আ. এর কাছে কী হুকুম এসেছে সেটা মুখ্য নয়। মহিলাদের জামাতে নামায পড়া জায়েজ। না জায়েজ নয়। রাসূলুল্লাহ সা. এই বিষয়ে বলেছেন, لاَ تَمْنَعُوا النِّسَاءَ أَنْ يَخْرُجْنَ إِلَى الْمَسَاجِدِ ، وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ তোমরা মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়া থেকে বাধা দিও না তবে তাদের ঘর তাদের জন্য উত্তম। মুসনাদু আহমাদ, হাদীস নং ৫৪৭১; সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০০; সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০১৭। সুতরাং মহিলাদের জামাতে যাওয়র হুকুম রাসূল সা. এর বক্তব্য থেকে জানুন। মারইয়াম আ. এর উপর আরোপিত হুকুম থেকে নয়। ৪। দেখুন, কুরআনে অসংখ্য বার বলা হয়েছে, আল্লাহ এবং তার রাসূলকে অনুসরন কর।وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا রাসূল যা নিয়ে আসে তা গ্রহন কর যা থেকে নিষেধ করেতে তা প্রত্যখ্যা কর,তা থেকে বিরত থাকে। সূরা হাশর, আয়াত ৭। সুতরাং কুরআন যেমন মুসলমানের দলীল হাদীসও তেমনি মুসলমানের দলীল। আপনার প্রশ্ন থেকে মনে হচ্ছে কেউ আপনার কাছে হাদীসকে হালকা করে ্উপস্থাপন করেছে। একটি জিনিস মনে রাখবেন হাদীস ছাড়া কুরআনের ্উপর আমল করা কিছুতেই সম্ভব নয়। যেমন, সালাত। কুরআনে শুধু সালাত কায়েমের কথা বলা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু বলা হয় নি। আমীন বলার কথা কুরআনে নেই। তবে সহীহ হাদীসে আছে। সুতরাং আমীন বলা ইহুদী চক্রান্ত নয় বরং নিষেধ করাই ইহুদী চক্রান্ত। আর শিয়া জাতির উৎপত্তিই তো ইহুদী চক্রান্ত থেকে। সুতরাং শিয়া মতের কারো কাছ থেকে ধর্ম শিখতে যাবেন না, তারা আপনাকে চক্রান্তে ফেলে দেবে যেভাবে তার চক্রান্তের শিকার হয়েছে। এবার আমীন বলা সংক্রান্ত হাদীসটি দেখুন, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِذَا قَالَ الإِمَامُ {غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ ، وَلاَ الضَّالِّينَ} فَقُولُوا آمِينَ ، فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন ইমাম গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দোয়াল্লিন বলবে তখন তোমরা আমীন বলো। যার আমীন বলা ফেরেস্তাতের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮২, ৪৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪০। সুতরাং আমীন বলাকে ইহুদী চক্রান্ত বলা কতো বড় শিয়া চক্রান্ত একটু চিন্তা করুন। আর আমীন শুধু মানুষ বলে না ফেরেস্তারাও বলে। আপনি ধর্ম সংক্রান্ত কোন আলোচনা শিয়াদের সাথে করতে যাবেন না। কারণ এতে আপনি বিভ্রান্তিতে পড়ে যেতে পারেন। শিয়াদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন শায়েখ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ রচিত ইসলামী আকীদা এবং আল-ফিকহুল আকবার বই দুটি। শেষে আবারে আপনাকে বলি কুরআন ও হাদীস মিলেই ইসলাম। শুধু কুরআন দ্বারা সবকিছু জানা সম্ভব নয়। সুতরাং হাদীস যেন আপনার কাছে হালকা না হয়ে যায়। যদি উত্তরটি পান তাহলে আমাকে জানাবেন। অথবা ফোন করবেন 01734717299