আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 128

ত্বহারাত পবিত্রতা

প্রকাশকাল: 6 জুন 2006

প্রশ্ন

TOUCHING QURAN

উত্তর

বিভিন্ন সহীহ হাদীসের আলোকে উম্মাতের প্রায় সকল ইমাম ও ফকীহ একমত যে, ওযু বা গোসল বিহীন অবস্থায় কুরআন কারীম সরাসরি স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে বর্তমানে কতিপয় ফকীহ ওয বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। সংক্ষেপে বিষয়টি আলোচনা করছি। নাপাক অবস্থায় ও ওযু বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করার নিষেধাজ্ঞায় সহীহ হাদীস বর্ণিত । ইবন উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: لا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। হাদীসটি সহীহ। হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১/৬১৬; আলবানী, সহীহুল জামি ২/১২৮৪, নং ৭৭৮০। অন্য হাদীসে তাবিয়ী আব্দুল্লাহ ইবন আবূ বাকর ইবন মুহাম্মাদ ইবন আমর ইবন হাযম আনসারী (৬৫-১৩৫ হি) বলেন, আমার দাদা সাহাবী আমর ইবন হাযমকে (রা) রাসূলুল্লাহ সা. যে পত্র লিখেছিলেন, তাতে তিনি লিখেছিলেন: أَنْ لا يَمَسَّ اَلْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। এ হাদীসটি অনেককগুলো সনদে বর্ণিত। প্রত্যেক সনদেই কিছু দুর্বলতা বিদ্যমান। তবে সবগুলি সনদের ভিত্তিতে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বাল, ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়াইহি, ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী, শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী ও অন্যান্য প্রাচীন ও সমকালীন মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলে নিশ্চিত করেছেন। মালিক, আল-মুআত্তা ১/১৯৯; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ১/১৫৮-১৬১, নং ১২২। উপরের হাদীসগুলোর ভিত্তিতে অপবিত্র – অর্থাৎ গোসল ফরয থাকা অবস্থায় অথবা অযু-বিহীন- অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণ-সহ মুসলিম উম্মাহর প্রায় সকল ফকীহ এ বিষয়ে একমত। আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুওয়াইতিয়্যা ১৬/২৪০; ২৩/২১৬; ৩৫/৩৩৩; ৩৮/৬। প্রসিদ্ধ হাম্বালী ফকীহ ইবন কুদামা (৬২০ হি) বলেন: وَلا يَمَسُّ الْمُصْحَفَ إلَّا طَاهِرٌ يَعْنِي طَاهِرًا مِنْ الْحَدَثَيْنِ جَمِيعًا، … وَهُوَ قَوْلُ مَالِكٍ وَالشَّافِعِيِّ وَأَصْحَابِ الرَّأْيِ ، وَلَا نَعْلَمُ مُخَالِفًا لَهُمْ إلَّا دَاوُد فَإِنَّهُ أَبَاحَ مَسَّهُ উভয় প্রকারের নাপাকি থেকে পবিত্র না হয়ে কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। … আর এটি অন্য তিন ইমাম- মালিক, শাফিয়ী ও হানাফীগণেরও মত। একমাত্র (তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ফকীহ) দাঊদ যাহিরী (২০১-২৭০ হি) ছাড়া আর কেউ এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। একমাত্র তিনিই অপবিত্র (ওযূ বা গোসল ছাড়া) কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। ইবন কুদামা, আল-মুগনী ১/২৫৬। সাহাবীগণের মধ্যে আলী, ইবন মাসঊদ, সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস, সায়ীদ ইবন যাইদ, সালমান ফারিসী, আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা.) ও অন্যান্য ফকীহ সাহাবী ওযূ বা গোসল বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ করেছেন। কুরতুবী, তাফসীর (জামিউ আহকামিল কুরআন) ১/২২৫-২২৭। ইবন তাইমিয়া (রাহ) বলেন, এদের বিপরীতে কোনো সাহাবী ওযূ বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ বলেছেন বলে জানা যায় না। ইবন তাইমিয়া, মাজমূউল ফাতাওয়া ২১/২৬৬। উল্লেখ যে, ফকীহগণ শিশু-কিশোর ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ওযূ ছাড়া কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। কারণ শিক্ষার জন্য বারবার কুরআন স্পর্শ করা তাদের জন্য প্রয়োজন এবং তারা নাবালেগ হওয়ার কারণে তাদের জন্য শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য নয়। এছাড়া কুরআনের তাফসীর, হাদীসগ্রন্থ, ও কুরআন সম্বলিত অন্যান্য সকল গ্রন্থ ওযূ ও গোসলবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা বৈধ বলে তাঁরা একমত। ড. ওয়াহবাহ যুহাইলী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/৩৯৫; আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুআইতিয়্যাহ ১৬/৫৩।