আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 1162

কুরআন

প্রকাশকাল: 5 এপ্রিল 2009

প্রশ্ন

আপন ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে ইসলামে নাজায়েজ। পবিত্র কোরআনে সূরা ফাতির এর আয়াত নং ৪৩ এবং সুরা রুম এ আয়াত নং ৩০ আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর রীতি-নীতিতে বা আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবে না বা পরিবর্তন নেই। তাহলে আমার প্রশ্নঃ আদম আঃ এর সন্তানদের ক্ষেত্রে কি ভাবে ভাই-বোন (এক জোড়ার একজনের সাথে অন্য জোড়ার একজন) এর মধ্যে বিয়ে হয়েছিল? আসলে কি ভাই-বোন এর মধ্যে বিয়ে হয়েছিল? যদি এই ঘঠণা সত্যি হয় তবে কোরআনে বা হাদিসে কোথায় এটা বলা আছে? বিস্তারিত জানতে চাই। আর যদি সত্যি না হয় তবে কিভাবে বংশ বৃদ্ধি হয়েছিল?

উত্তর

আপনি যে দুটি আয়াতের কথা উল্লেখ করেছেন সেখানে কোথাও নেই আল্লাহর বিধানে কোন পরবর্তন হবে না। এই ধরনের মিথ্যা ও অপূর্ণাঙ্গ কথার দ্বারা বিপদগামীরা মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। দেখা যাক সেখানে কী আছে: সূরা রুম এর ৩০ নম্বর আয়াতের একটি অংশ হলো: لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّه এর বাংলা সরল অর্থ: আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। তাফসিরকারকগণ বলেছেন এর অর্থ হলো: মানুষ যখন জন্ম নেয় তখন মানুষ ইসলাম ধর্মের উপরই জন্ম নেয়। পরে বাবা-মারা তাকে অন্য পথে নিয়ে যায়। এই যে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ইসলাম ধর্মের উপর সৃষ্টি করেন তাতে কোন পরিবর্তন নেই। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা কাউকে ইসলামের উপর সৃষ্টি করেন আবার কাউকে অন্য ধর্মের উপর সৃষ্টি করেন তা নয়। বরং এক্ষেত্রে সবাই সমান, আল্লাহর এই কাজে কোন পরিবর্তন করেন না। এবার আসি সূরা ফাতির প্রসঙ্গে। উক্ত আয়াতটি হলো فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ الْأَوَّلِينَ فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا আয়াতটির বাংলা অর্থ হলো: তারা কি পূর্ববর্তীদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে না? তুমি আল্লাহর কর্মপন্থায় কোন পরিবর্তন পাবে না। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেছেন,যে সব জাতি পূর্বে আল্লাহর নিদর্শন, আল্লাহর বিধানকে মিথ্যা বলেছে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা শাস্থি দিয়েছেন। এখানে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদেরকে হুশিয়ারি দিয়েছেন যে, তারা যেন পূর্ববর্তীদের শাস্তির বিষয়টি মনে রাখে, তারা যদি পূর্ববর্তীদের মত আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে তাহলে তাদেরও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আর যারাই আল্লাহর বিধানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে তাদেরই শাস্তির সম্মুখী হতে হবে আল্লাহ তায়ালার এই রীতিতে কোন পরিবর্তন নেই। অর্থাৎ কাফেরদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার বিধান হলো তাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ তায়ালার এই বিধানে এই রীতিতে কোন পরিবর্তন হবে না। বিস্তারিত জানতে দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, উক্ত আয়াতের তাফসীর। এবার দেখবো শরয়ী বিধানের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা কোন পরিববর্তন করেন কি না: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا আয়াতটির সরল অর্থ হলো: আমি যে আয়াতই রহিত করি কিংবা ভুলিয় দেই তখন তার পরিবর্তে দান করি তার চেয়ে উত্তম বা তারম মত কোন আয়াত। তাফসীরকারকগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা কখনো কখনো আগের বিধানকে রহিত করে নতুন বিধান চালু করেন। তাহলে বুঝা গেলা শরয়ী আহাকামের পরিবর্তন হতে পারে। বিস্তারিত জানতে দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, উক্ত আয়াতের তাফসীর। আপনি যে দুটি আয়াত উল্লেখ করছেন এমন আরো একটি আয়াত কুরআনে আছে। সেটি সম্পর্কে্ও আলোচনা করছি, যাতে আপনার ভুল ভেঙ্গে যায়। আয়াতটি হলোالَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ (63) لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ আয়াতটির অর্থ হলো: যারা ঈমান এনেছে এবং মুত্তকি তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া এবং আখেরাতে সুসংবাদ। আল্লাহর কথায় কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সফলতা। সূরা ইউনুস,আয়াত ৬৩,৬৪। এই আয়াতে আল্লাহর কথায় কোন পরিবর্তন নেই অর্থ হলো মূমিনদের জন্য যে দুনিয়া এবং আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা কল্যান রেখে দিয়েছেন, মুমিনরা জান্নাতে যাবে আল্লাহ তায়ালার এই কথায় বা বিধানে কোন পরিবর্তন নেই। ভাই সবশেষে একটা পরামর্শ দেই, কুরআনের কোন আয়াত সম্পর্কে মন্তব্য করার পূর্বে তাফসীরসহ আয়াতটি ভালভাবে পড়া উচিৎ। আর আদম আঃ সময় বিধান ছিল ভাইবোন বিয়ে হওয়া জায়েজ। এটা শরয়ী বিধান। সুতরাং পরিবর্তন হওয়া কোন সমস্যা নয়। আশা করি আপনার মনের সংশয় দূর হবে। এরপরও কোন অস্পষ্টতা থাকলে পূনরায় প্রশ্ন করবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।