আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 110

অর্থনৈতিক

প্রকাশকাল: 19 মে 2006

প্রশ্ন

ইস্তেগফারের নিয়ম

উত্তর

আমাদের অনেকই এই أستغفر الله رب من كل ذنب, وأتوب إليه দিয়ে ইস্তেগফার করি । কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এক আলেম সাহেব বলেন, এই ইস্তেগফার কোন হাদিসের কিতাবে নেই, এবং কেউ দেখাতে পারবেও না । জানার বিষয় হল তার কথা সঠিক কি না? জানিয়ে বাদিত করবেন। আমাদরে অনইে এই أستغفر الله رب من كل ذنب, وأتوب إليه দিয়ে ইস্তগেফার করি । কন্তিু কছিুদনি র্পূবে এক আলমে সাহবে বলনে, এই ইস্তগেফার কোন হাদসিরে কতিাবে নইে, এবং কউে দখোতে পারবওে না । জানার বষিয় হল তার কথা সঠকি কি না? জানযি়ে বাদতি করবনে। ইস্তিগফারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় মুমিন-মনের উপলব্ধি। মানব মনের একটি অতি আকর্ষণীয় কাজ অন্যের অন্যায়গুলো বড় করে দেখা ও নিজের অন্যায়কে ছোট ও যুক্তিসঙ্গত বলে মনকে প্রবোধ দেওয়া। আমরা একাকী বা একত্রে যখনই চিন্তাভাবনা বা গল্প করি, তখনই সাধারণত অন্যের অন্যায়গুলো আলোচনা করি। মুমিনের আত্মিক জীবন ধ্বংসে এটি অন্যতম কারণ। মুমিনকে সদা সর্বদা নিজের পাপের কথা চিন্তা করতে হবে। এমনকি আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের বিপরীতে তাঁর ইবাদতের দুর্বলতাকেও পাপ হিসাবে গণ্য করে সকাতরে সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সকল প্রকার পাপকে কঠিন, ভয়াবহ ও নিজের জীবনের জন্য ধ্বংসাত্মক বলে দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে বারবার ক্ষমা চাইতে হবে। এ পাপবোধ নিজেকে সংকুচিত করার জন্য নয়। এ পাপবোধ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ভারমুক্ত, পবিত্র, উদ্ভাসিত ও আল্লাহর নৈকট্যের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ বলেছেন : إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ فِي أَصْلِ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابِ وَقَعَ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ لَهُ هكَذَا فَطَارَ মুমিন ব্যক্তি তাঁর পাপকে খুব বড় করে দেখেন, যেন তিনি পাহাড়ের নিচে বসে আছেন, ভয় পাচ্ছেন, যে কোনো সময় পাহাড়টি ভেঙ্গে তাঁর উপর পড়ে যাবে। আরা পাপী মানুষ তার পাপকে খুবই হালকাভাবে দেখেন, যেন একটি উড়ন্ত মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, হাত নাড়ালেই উড়ে যাবে। বুখারী (৮৩-কিতাবুদ দাআওয়াত, ৪-বাবুত তাওবাহ) ৫/২৩২৪ (ভারতীয় : ২/৯৩৩); তিরমিযী (৩৮-কিতাব সিফাতিল কিয়ামাহ, ১৫-বাব..সিফাত আওয়ানিল হাওয) ৪/৫৬৮ (ভা ২/৭৬)। হুহহু এই বাক্যে ইসতিগফার হাদীসে পাওয়া যায় না। তবে এই বাক্য দ্বারাও ইসতিগফার করা যাবে, কেননা মুমিন যে কোনো ভাষায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। ভাষা বা বাক্যের চেয়ে মনের অনুশোচনা ও আবেগ বেশি প্রয়োজনীয়। তবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর শেখানো বাক্য ব্যবহার করা উত্তম। সাধারণভাবে বিভিন্ন হাদীসে ইসতিগফারের জন্য আসতাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি ) এবং কখনো এর সাথে ওয়া আতূবু ইলাইহি (এবং আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি) বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে কয়েকটি মাসনূন বাক্য উল্লেখ করছি: ১। أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হ। অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ৩০০। হাদীসটি সহীহ। ২। أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি। অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৬। ৩। رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ (الغَفُوْرُ) উচ্চারণ : রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় রাহীম-এর বদলে: গাফূর। অর্থ: হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী। সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদীস নং৩৮১৪; সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৩৪। হাদীসটি সহীহ। ৩। (৩ বার) أَسْتَغْفِرُ اللهَ (الْعَظِيْمَ) الَّذِيْ لاَ إلهَ إِلاَّ هُوَ الحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লা-হাল্ (আযীমাল্) লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুআল হাইউল কাইঊমু ওয়া আতূবু ইলাইহি। অর্থ: আমি মহান আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সর্ব সংরক্ষক, এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫১৭। হাদীসটি সহীহ। ৪। (সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার) اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আনতা রাব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাক্বতানী, ওয়াআনা আবদুকা, ওয়াআনা আলা- আহদিকা ওয়াওয়াঅ্দিকা মাস তাতাঅ্তু। আঊযু বিকা মিন শাররি মা- স্বানাতু, আবূউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা, ওয়াআবূউ লাকা বিযামবি। ফাগ্ফিরলী, ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আপনার কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার ও প্রতিজ্ঞার উপরে রয়েছি যতটুকু পেরেছি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যে কর্ম করেছি তার অকল্যাণ থেকে। আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আপনি আমাকে যত নিয়ামত দান করেছেন তা-সহ এবং আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আমার পাপ-সহ। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩০৬। কুরআন কারীমে মুমিনগণকে বারবার তাওবা ও ইসতিগফার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাওবা ও ইসতিগফারের জন্য ক্ষমা, পুরস্কার ও মর্যাদা ছাড়াও জাগতিক উন্নতি ও বরকতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন হাদীসে ইসতিগফারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসতিগফার আল্লাহর অন্যতম যিক্র। যিক্রের সাধারণ ফযীলত ইস্তিগফারকারী লাভ করবেন। এ ছাড়াও ইস্তিগফারের অতিরিক্ত মর্যাদা ও সাওয়াব রয়েছে। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : وَاللهِ إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً আল্লাহর কসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। বুখারী (৮৩-কিতাবুদ দাআওয়াত, ৩-বাব ইসতিগফারিন নাবিয়্যি) ৫/২৩২৪