আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট

প্রশ্নোত্তর

ক্যাটাগরি

প্রশ্নোত্তর 1067

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক

প্রকাশকাল: 31 ডিসে. 2008

প্রশ্ন

ভূমিকাঃ আমাদের সমাজে অনেক ভদ্রলোক অন্যকে গালি দেন অথবা গালি না দিলেও অভিশাপ দেন, তাদের বুঝিয়ে বলতে গেলে তারা বলেন আল্লাহ গালি দিয়েছেন সাথে অভিশাপ ও দিয়েছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঁঃ) গালি দিয়েছেন, অভিশাপ দিয়েছেন, অন্যের নাম বিকৃত করেছেন, আমিও করবো, বাংলাদেশের যে আলেম রা করে তারাও ঠিক করে এসব কাজ
ঘটনা ১; আমাদের মহল্লায় মসজিদের ইমাম বক্তব্যের ভেতর কুরান ও হাদিস থেকে উল্লেখ করে বলেন – কাউকে গালি দেয়া, নাম বিকৃত করা ঠিক না, সে যতই পাপী হোক, মৃত্যুর পর সমালোচনা বা খারাপ নাম করা ঠিক নয়, কারণ তাদের সাজা তারা পেয়ে গেছে। ইত্যাদি। যারা জাহানারা ইমাম কে জাহান্নামের ইমাম যাদি। কুদ্রতে খুদা কে গজবে খুদা বলেন এটা তাদের ভুল। ঘটনা ২ঃ এখন ভূমিকায় উল্লেখিত ভদ্র রা অই ইমামের সমালোচনা ও গীবত করেন, তারা বলেন
——- যেহেতু আরব রা এক লোকের নাম আবুল হাকাম রেখেছিলো, কিন্তু রাসুল (সাঁঃ ) তার নাম আবু জেহেল করে দিয়েছিলন সেহেতু ঘটনা ১ এর আলেম দের উক্ত সমালোচনা নাম বিকৃতি ঠিক আছে। —— যেহেতু বদর যুদ্ধের পর রাসুল (সাঁঃ) আবু জেহেলের বাড়ি পায়খানা ঘোষণা করেছিলেন সাহেতু মৃত ব্যক্তিদের নামে সমালোচনা ঠিক আছে, মসজিদের ইমামের কথা ভুল । ইত্যাদি। (1067) * প্রশ্ন ** এই ২ যেহেতু কতটুকু সত্য, বা এর ব্যাখ্যা কি? আর সুরাহ হুজুরাতের ১১ নং আয়াত থেকে শুরু হওয়া নিয়ম গুলোর সাথে এর মিল অমিল কি? দয়া করে বিস্তারিত বলবেন। উল্লেখ্য যে, উপরক্ত ভুমিক্যায় উল্লেখিত সমস্যা এক ভদ্রের নয়, সারা সমাজে ফিতনা বেড়ে যাচ্ছে, দল তো আছেই, যেমন ইমাম তাবলীগই দলে ছিলেন তাই সব অন্যরা তার সমালোচনা বেশি করছে। এসব ভালো লাগছেনা। প্রশ্ন উত্তরটা পেলে যদি কিছু করতে পারি । আর হা সম্ভব হইলে সরাসরি দাওয়াতে শযতেদিতে পারেন বা এই রিকোয়েস্ট মাথায় রাখতে পারেন ভবিষ্যতে,। স্থান মনিরাম্-পুর যশোর। জাঝাকাল্লাহ।

উত্তর

আপনার প্রশ্নে কয়েকটি বিষয় আছে। ১. গালি দেয়া, ২. লানাত দেয়া, ৩. নাম বিক্রিত করা। প্রথমে আমরা গালি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করবো। তবে শুরুতেই আপনাকে বলে রাখ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুসলিম এবং অমুসলিমের ক্ষেত্রে ভাগ আছে। মুসলিমকে গালি দেয়া গুনাহের কাজ। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ، عَنْ زُبَيْدٍ ، قَالَ : سَأَلْتُ أَبَا وَائِلٍ ، عَنِ الْمُرْجِئَةِ فَقَالَ : حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ অর্থ: মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী (গুনাহের কাজ) এবং তাকে হত্যা করা কুফুরী কাজ। এই হাদীস থেকে স্পষ্ট যে, কোন মুসলিমকে গালি দেয়া জায়েজ নেই। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮। আর অমুসলিম হলেও তাকে গালি দেয়া যাবে না। নিচের হাদীসটি লক্ষ্য করুন: حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ مَسْرُوقٍ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ أَتَى النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- أُنَاسٌ مِنَ الْيَهُودِ فَقَالُوا السَّامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ. قَالَوَعَلَيْكُمْ قَالَتْ عَائِشَةُ قُلْتُ بَلْ عَلَيْكُمُ السَّامُ وَالذَّامُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَا عَائِشَةُ لاَ تَكُونِى فَاحِشَةً অথ: আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কিছু ইহুদী নবী সা. কাছে এসে বলল, السَّامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ (তোমাদের উপর মৃত্যু আসুক, সালামের পরিবর্তে এই কথা তারা বলেছিল। ) তখন রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তোমাদের উপরও। আয়েশা রা. বলেন, তখন আমি বললাম, বরং তোমাদের উপর মৃত্যু এবং বেইজ্জতি আসুক। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, হে আয়েশা! তুমি (তাদের মত) অশ্লীল কাজকারী হয়ো না। সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫৭৮৬। তবে কোন অমুসলিম যদি মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত থাকে বা শত্রুতায় লিপ্ত থাকে তাহলে তাকে গালি দেয়া জায়েজ। এই বিষয়ে ইমাম সানয়ানী বলেন, وفي مفهوم قوله المسلم دليل على جواز سب الكافر فإن كان معاهدا فهو أذية له وقد نهى عن أذيته فلا يعمل بالمفهوم في حقه وإن كان حربيا جاز سبه إذ لا حرمة له وأما الفاسق فقد اختلف العلماء في جواز سبه بما هو مرتكب له من المعاصي فذهب الأكثر إلى جوازه لأن المراد بالمسلم في الحديث الكامل الإسلام والفاسق ليس كذلك এই হাদীসে (মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী) মুসলিম উল্লেখ থাকার কারণে এই কথা বুঝে আসে যে, কাফেরকে গালি দেয়া জায়েজ। তবে যদি কাফের ইসলামী রাষ্ট্রে ট্যাক্সের বিনিময়ে থাকে তাহলে গালি দেয়া হবে তাকে কষ্ট দেয়া আর কষ্ট দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। সুতরাং তার ক্ষেত্রে গলি দেয়া জায়েজ কথাটি প্রযোজ্য নয়। তবে যদি কোন কাফের মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে তাহলে তাকে গালি দেয়া জায়েজ।আর সর্বদা পাপাচারে লিপ্ত থাকা ফাসেককে গালি দেয়া জায়েজ কিনা সে বিষয়ে মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশ আলেম জায়েজ বলেছেন। কেননা হাদীসে মুসলিম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পরিপূর্ণ মুসলিম। আর ফাসেক পরিপূর্ণ মুসলিম নয়। সুবুলুস সালাম ৪/১৮৮। এখান থেকে বুঝে আসে মুসলিম ও ট্যাক্স দিয়ে থাকা কাফের এবং যুদ্ধ বা শত্রুতারত কাফেরের হুকুম এক নয়। অর্থাৎ আবু জাহেল এবং মুসলিমের হুকুম এক নয়। এবার লানাত বিষয়ে আলোচনা করা যাক: মুসলিমকে লানাত করা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ومن لعن مؤمنا فهو كقتله অর্থ: যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে লানাত করলো তাহলে সে যেন তাকে হত্যা করলো। সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬০৪৭। কাদেরকে লানত করা যাবে এই বিষয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, وَاللُّغَةُ تُجَوِّزُ مُطْلَقًا لِمَنْ لَعَنَهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ؛ وَأَمَّا لَعْنَةُ الْمُعَيَّنِ فَإِنْ عُلِمَ أَنَّهُ مَاتَ كَافِرًا جَازَتْ لَعْنَتُهُ . وَأَمَّا الْفَاسِقُ الْمُعَيَّنُ فَلَا تَنْبَغِي لَعْنَتُهُ ؛ { لِنَهْيِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُلْعَنَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حِمَارٍ الَّذِي كَانَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ } مَعَ أَنَّهُ قَدْ لَعَنَ شَارِبَ الْخَمْرِ عُمُومًا مَعَ أَنَّ فِي لَعْنَةِ الْمُعَيَّنِ – إذَا كَانَ فَاسِقًا أَوْ دَاعِيًا إلَى بِدْعَةٍ – نِزَاعٌ যাদেরকে আল্লাহ আর তাঁর রাসূল লানাত দিয়েছেন তাদেরকে লানাত করা নি:শর্তভবে জায়েজ। এবং নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি যদি কাফের হয়ে মারা যায় তাকেও লানাত করা জায়েজ। আর কোন ফাসেককে নির্দিষ্ট করে লানাত করা উচিত নয়, কারণ নবী সা. আব্দুল্লাহ ইবনে হিমার, যিনি মদ পান করেছিলেন, তাকে লানাত করতে নিষেধ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭৮০। )তবে ব্যাপকভাবে মদপানকারীর উপর তিনি লানাত করেছিলেন। (ব্যাপকভাবে অর্থাৎ এমন বলা মদপানকারীদের উপর আল্লাহর লানাত হোক। ) এর সাথে যখন কোন ফাসেক ব্যক্তি নিজের কাজকে সমর্থন করবে এবং কোন বিদআতি নিজের বিদআতের দিকে অন্যদের আহ্ববান করবে তখন তাকে লানাত করা জায়েজ কিনা এই বিষয়ে বিতর্ক আছে। (অর্থাৎ একদল জায়েজ বলেন আরেক দল না-জায়েজ বলেন। )মাজমাউল ফাতওয়া ৬/৫১১। তাহলে আমরা বলতে পারি মুসলিমকে লানাত দেয়া নিষিদ্ধ তবে বিদআতের দিকে আহ্বান কারী বিদআতী এবং পাপকাজের সমর্থনকারী ও অন্যেকে পাপকাজের দিকে আহ্বানকারী ব্যক্তিকে লানাত দেয়া অনেক আলেমের মতে জায়েজ। আর কাফিরকে মারা যাওয়ার পরও লানাত করা জায়েজ। সুতরাং এক্ষেত্রে কাফের আর মুসলিমকে এক করলে চলবে না। নাম বিকৃত করা যাবে ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, وَلا تَنَابَزُوا بِالأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ তোমরা কারো নামকে বিকৃত করো না, ইমান গ্রহনের পর তা খুবই নিকৃষ্ট কাজ। যে তাওবা করবে না সে জালিম। সূরা হুজুরত, আয়াত নং ১১। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম কোন মূমিন মুসলিমকে গালি দেয়া যাবে না, লানাত করা যাবে না এবং তাদের নাম বিকৃত করা যাবে না। তবে কাফিরদেকে ক্ষেত্রে সকল ক্ষেত্রে হুকুম এক নয়। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সা. কাউকে (অবশ্যই শত্রতারত কাফেরকে) লানাত করেছেন বা নাম বদলে দিয়েছেন সেই জন্য আমাদের জন্য (কোন মূমিনের ক্ষেত্রে) জায়েজ বিষয়টি এমন ভাবা ঠিক নয়্। তবে কোন পাপাচারী যদি মানুষকে পাপের দিকে আহ্বান করে,মানুষকে খারাপ পথে নিয়ে যায় তাহলে সেটা জনগনে সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন, এতে কোন গোনাহ নেই বরং সওয়াবের কাজ। এই বিষয়ে ইমাম নববী বলেন, باب ما يباح من الغيبة اعلم أن الغيبة تباح لغرض صحيح شرعي لا يمكن الوصول إليه بها وهو ستة أسباب: – ৃ الرابع: تحذير المسلمين من الشر ونصيحتهم، وذلك من وجوه: منها جرح المجروحين من الرواة والشهود، وذلك جائز بإجماع المسلمين، بل واجب للحاجة …জেনে রাখা উচিত যে, শরয়ী প্রয়োজনে গিবত বৈধ, যখন গিবত ছাড়া সেই প্রয়োজন সম্ভব নয়। এই প্রয়োজন মোট ছয় প্রকার। ….৪। মুসলিমদেরকে অকল্যান থেকে সতর্ক করা এবং নসীহত করার উেেদ্দশ্যে। রিয়াদুস সালেহীন, বা-বু মা ইউবাহু মিনাল গিবাত, ১৫৩০ নং হাদীসের পূর্বে। আবু জাহেল, জাহান্নামের ইমাম এবং গজবে খুদাকে এভাবে ব্যখ্যা করতে হবে।অর্থাৎ এভাবে নাম বলে তাদের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য জাতিকে সতর্ক করা হয়েছে। নাম বিকৃত করা উদ্দেশ্য নয়। এছাড়া আমরা দেখেছি যে, সাধারণ মূমিন এবং কাফের বা চরম পর্যায়ের ফাসেকের হুকুম এক নয়, চরম পর্যায়ের ফাসেককে গালি দেয়াও অধিকাংশ আলেম জায়েজ বলেছেন। আর মারা যাওয়ার পর মুমিনের দোষত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা উচিৎ নয়। তবে এখানেও মনে রাখতে হবে কাফের বা চরম পর্যায়ের ফাসেক এই হুকুমের অন্তভূক্ত নয়। আপনার প্রশ্ন থেকে যা মনে হয়েছে সেখানে মানুষ নিষিদ্ধ দলাদলীতে লিপ্ত, মুসলিমদের ঐক্যের সার্থে এর থেকে বিরত থাকা দরকার। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।