ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। রুকু এবং সেজদায় কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করা সুন্নাত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণীত আছে যে, রাসূল সাঃ বলেন:
: إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيمِ وَذَلِكَ أَدْنَاهُ وَإِذَا سَجَدَ فَلْيَقُلْ سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلَى ثَلاَثًا وَذَلِكَ أَدْنَاهُ
অর্থঃ যখন তোমাদের কেউ রুকু করবে তখন সে যেন তিনবার সুবহানা রাব্বীয়াল আযীম বলে। আর এটা হল সর্বনিম্ম পরিমান। আর যখন সেজদা করে তখন সে যেন তিনবার বলে সুবহানা রাব্বীয়াল আলা। আর এটা হল সর্বনিম্ম পরিমান। সুনানে আবু দাউদ, কিতাব,আস-সালাত, বাব, মা ইয়াকুলু ফিররুকুঈ ওয়াস সুজুদী। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে একবার পড়লেও যথেষ্ঠ হবে। এক্ষেত্রে ফরয হল রুকু এবং সেজদায় এক তাসবীহ পরিমান সময় কাটানো। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত এক হাদীসে এসেছে
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّي كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِي فَقَالَ إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا وَافْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا.
অর্থঃ রাসূল সাঃ মসজিদে প্রবেশ করার পর এক ব্যাক্তি প্রবেশ করে রাসূল সাঃ কে সালাম দিলেন এবং রাসূল সাঃ সালামের জবাব দিয়ে বলেন:ফিরে গিয়ে নামাজ পড় কেননা তুমি নামাজ পড়নি। লোকটি ফিরে গিয়ে পূর্বের ন্যায় আবার নামাজ আদায় করলেন এবং ফিরে এসে রাসূল সাঃ কে সালাম প্রদান করলেন। রাসূল সাঃ আবার লোকটিকে বললেন: তুমি ফিরে গিয়ে নামাজ পড়। কেননা তুমি নামাজ পড়নি। এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর লোকটি বললেন: ঐ সত্বার কসম, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর করে নামাজ আদায় করতে পারিনা। সুতরাং আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন রাসূল সাঃ বললেন: যখন তুমি নামাজে দাড়াবে তখন তাকবির দিবে। এরপর কোরআনের যে অংশ তোমার কাছে সহজ সে অংশ থেকে পড়বে। অতঃপর রুকু করবে শান্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত, তারপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাড়াবে। এরপর সেজদা করবে শান্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে শান্ত হয়ে বসবে। আর পুরা নামাজ এভাবে আদায় করবে।বুখারী,আস-সহীহ, হাদীস নং ৭৫৭। তবে সর্বাধিক কতবার পড়া যায় এব্যাপারে হাদীসে সীমাবদ্ধ করা হয়নি । যে যেই পরিমান পড়বে সে সেই পরিমান সাওয়াবের অধিকারী হবে। ইনশাল্লাহ। তাছাড়া রাসূলে কারীম সাঃ রুকু এবং সেজদায় অধিক সময় ব্যায় করতেন বলে বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়। এ অধিক সময়ে তিনি কতবার তাসবীহ পাঠ করেছে তা গননা করাও একটি দুঃসাধ্য ব্যাপার। অনুরুপভাবে জোড়-বিজোড়ের ব্যাপারেও কোরআন ও নির্ভরযগ্য কোন হাদীসে কিছু বলা হয়নি। একটি হাদীসে এসেছে رُوِيَ أَنَّهُ عليه السلام كَانَ يَخْتِمُ بِالْوِتْرِ يَعْنِي فِي تَسْبِيحَاتِ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ،
অর্থঃ বর্ণীত আছে যে, রাসূল সাঃ বিজোড়ের মাধ্যমে শেষ করতেন।অর্থাৎ রুকু ও সেজদার তাসবীহ এর ক্ষেত্রে। হাদীসটি মারগিনানী রহঃ তার হেদায়া গ্রন্থে আল আওকাত তুকরাহু ফিহাস সালাত পরিচ্ছেদে এনেছেন। আল্লামা ঝাইলায়ী রহঃ হাদীসটির ব্যাপারে বলেন: গরীব জিদ্দান। নাসবুর রাইয়াহ, বাবু সিফাতিস সালাহ। আর ইবনে হাজার আস ক্বালানী রহঃ বলেন: লাম আজিদহু (হাদীসটি আমি পাইনি)। আদ দিরায়াহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৭, হাদীস নং ১৭৬। হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন:
ما رأيت أحدا أشبه صلاة بصلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم من هذا الفتى يعني عمر بن عبد العزيز فحزرنا في ركوعه عشر تسبيحات وفي سجوده عشر تسبيحات
অর্থঃ আমি রাসূল সাঃ এর নামাজের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামাজ এই যুবক ছাড়া (অর্থৎ ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহঃ) কাউকে পড়তে দেখিনি। আমি তার রুকুতে দশ তাসবীহ গণনা করলাম এবং সেজদায় দশ তাসবীহ গণনা করলাম। নাসায়ী, আস-সুনান, তাহকীক, আলবানী রহঃ, হাদীস নং ১১৩৫। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবক্ষেত্রে তাাঁর রাসূল সাঃ এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন । আর সঠিক বিষয় একমাত্র তিনিই ভাল জানেন।