কুরআন-সুন্নাহের আলোকে আমরা দেখি যে, বেলায়াতের পথের কর্মগুলোর পর্যায়, তথা মুমিন জীবনের সকল কর্মের গুরুত্ব ও পর্যায়গুলো নিম্নরূপ:
প্রথম, ঈমান: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবকিছুর মূল বিশুদ্ধ ঈমান। ঈমানের ক্ষেত্রে ত্রুটিসহ সকল নেক কর্ম ও ধার্মিকতা পণ্ডশ্রম ও বাতুলতা মাত্র।
দ্বিতীয়, বৈধ উপার্জন: ঈমানের পরে সর্বপ্রথম দায়িত্ব বৈধভাবে উপার্জিত জীবিকার উপর নির্ভর করা। সুদ, ঘুষ, ফাঁকি, ধোঁকা, যুলুম ইত্যাদি সকল প্রকার উপার্জন অবৈধ। অবৈধ উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহকারীর ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়।
তৃতীয়, বান্দার হক সংশ্লিষ্ট হারাম বর্জন: কর্মের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফরয কর্ম। ফরয দুপ্রকার (ক) করণীয় ফরয (খ) বর্জনীয় ফরয বা “হারাম”। হারাম দুপ্রকার: এক প্রকার পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ ও সৃষ্টির অধিকার বা পাওনা নষ্ট বা তাদের কোনো ক্ষতি করা বিষয়ক হারাম। এগুলো বর্জন করা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থ, আল্লাহর অন্যান্য আদেশ নিষেধ বিষয়ক হারাম বর্জন।
পঞ্চম, ফরয কর্মগুলো পালন।
ষষ্ঠ, মাকরুহ তাহরীমি বর্জন ও সুন্নাতে মু‘আক্কাদা কর্ম পালন।
সপ্তম, মানুষ ও সৃষ্টির সেবা এবং কল্যাণমূলক সুন্নাত-নফল ইবাদত পালন।
অষ্টম, ব্যক্তিগত সুন্নাত-নফল ইবাদত পালন।
আমি এ পুস্তকে কিছু ফরয-ওয়াজিব বিষয়ের আলোচনা করলেও, মূলত অষ্টম পর্যায়ের ইবাদতই এ পুস্তকের মূল আলোচ্য বিষয়। উপরের সাতটি পর্যায়ের কর্ম যদি আমাদের জীবনে না থাকে তাহলে এ অষ্টম পর্যায়ের কর্ম অর্থহীন হতে পারে বা ভণ্ডামিতে পরিণত হতে পারে। আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সাথে লক্ষ করি যে, আমাদের সমাজের ধার্মিক মানুষেরা প্রায়শ এই অষ্টম পর্যায়ের কাজগুলোকে অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দেন, অথচ পূর্ববর্তী বিষয়গুলোর প্রকৃত গুরুত্ব আলোচনা বা অনুধাবনে ব্যর্থ হন। মহান রাব্বুল ‘আলামীন ও তাঁর প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি যে কর্মের যতটুকু গুরুত্ব প্রদান করেছেন তাকে তার চেয়ে কম গুরুত্ব প্রদান করা যেমন কঠিন অপরাধ ও তাঁদের শিক্ষার বিরোধিতা, তেমনি বেশি গুরুত্ব প্রদানও একই প্রকার অপরাধ।
লেখক: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ.
প্রকাশ: জুন ২০২২, পৃ. ৪৫-৪৬