১. সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, লাইলাতুল নিসফে মিন শাবান এর রাত্রিতে আল্লাহ মুশরিক ও বিদ্বেষে লিপ্ত মানুষ ছাড়া অন্যদেরকে ক্ষমা করেন। কিন্তু এ রাত্রিতে বিশেষ কোনো আমল করতে হবে বা এ রাত্রির ক্ষমা লাভের জন্য বান্দাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে বলে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি।
২. এ রাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে একাকি কবর যিয়ারত করা মৃতদের জন্য ক্ষমা চাওয়া, নিজের পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ ও মুক্তির জন্য প্রার্থনা করার উৎসাহ প্রদান করে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসগুলি সবগুলির সনদেই দুর্বলতা আছে।তবে কয়েকটি হাদীসের দুর্বলতা সামান্য। একাধিক বর্ণনার মাধ্যমে যে দুর্বলতা দূরীভূত হয়।প্রথম প্রকারের সহীহ হাদীস,এ পর্যায়ের বিভিন্ন সামান্য দুর্বল বা ‘হাসান লি-গাইরিহী’ পর্যায়ের হাদীস এবং কোনো কোনো তাবিয়ীর কর্মের আলোকে আমরা মনে করি যে,এ রাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে কবর যিয়ারত করা বা মৃতদের জন্য দোয়া করা, ব্যক্তিগতভাবে একাকী ইবাদাত ও দোয়া মুনাজাতে রত থাকা সুন্নাত সম্মত।
৩. এ সকল ইবাদাত দলবদ্ধভাবে আদায় করা,সে জন্য মসজিদে বা অন্য কোথাও সমবেত হওয়া, উক্ত রাতে বিশেষ ভাবে গোসল করা,নির্দিষ্ট সূরা পাঠের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে নামাজ আদায়,হালুয়া-রুটি তৈরী ও বিতরণ করা,বাড়ি,গোরস্থান বা কবরে আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি কর্ম একেবারেই ভিত্তিহীন,সুন্নাত বিরোধী এবং নব-উদ্ভাবিত কর্ম।
৪. ১৫ ই শাবানের দিবসে সিয়াম পালনের ফযীলতে কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়নি।তবে শাবান মাসে বেশি বেশি সিয়াম পালন,বিশেষত প্রথম থেকে পনের তারিখ পর্যন্ত সিয়াম পালন রাসূল ﷺ এর সুপরিচিত সুন্নাত। এ ছাড়া প্রত্যেক মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ সিয়াম পালনও সুন্নাত নির্দেশিত গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব ইবাদাত। এ জন্য সম্ভব হলে শাবানের প্রথম ১৫ দিন,না হলে অন্তত ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ সিয়াম পালন করা উচিত।
৫. এ রাত্রিতে ভাগ্য লিখা হয় মর্মে রাসূল ﷺ ও সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত সকল হাদীস বানোয়াট, মিথ্যা বা দুর্বল।
৬. সূরা দুখানে উল্লেখিত ‘মুবারাক রজনী’ বলতে “শবে বরাত” বুঝানো হয় নি,বরং “শবে কদর” বুঝানো হয়েছে। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের সমন্বিত অর্থ ও সাহাবী-তাবিয়গণের ব্যাখ্যার আলোকে এ কথা নিশ্চিত যে,মুবারাক রজনী বলতে লাইলাতুল কাদর বুঝানো হয়েছে। কাজেই সূরা দুখানের আয়াতগুলি মধ্য-শাবানের রজনীর জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে মধ্য শাবানের রজনীর পৃথক মর্যাদা রয়েছে।