উপরে উল্লিখিত নিকটতম আত্মীয় ব্যতীত অন্য সকল আত্মীয় ও অনাত্মীয় পুরুষের সামনে মুসলিম মহিলার পুরো দেহই ‘আউরাত’ বা আবৃতব্য গুপ্তাঙ্গ। কেবলমাত্র মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়ের বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে যা পরবর্তীতে আলোচনা করব। বিবাহ বৈধ এরূপ সকল আত্মীয় ও সকল অনাত্মীয়ের সামনে মুসলিম নারীর উপর ফরয দায়িত্ব যে, তিনি নিজের পুরো দেহ আবৃত করে রাখবেন।
উপরের আয়াতে আল্লাহ মুসলিম নারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের ওড়না বা মাথার কাপড় এমনভাবে পরিধান করে, যেন তা ভালভাবে বুক ও গলা ঢেকে রাখে। এভাবে আল্লাহ মুমিন নারীদের জন্য মাথা, দুই কান, ঘাড়, গলা ও বুকসহ পুরো দেহ আবৃত করা ফরয বলে নির্দেশ করেছেন।
আমরা ইতঃপূর্বে দেখেছি যে, মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, “হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।”
এ আয়াতও নির্দেশ করে যে,
মুমিন রমণীর জন্য পুরো দেহ আবৃত করা ফরয। শুধু তাই নয়, দুরাত্মীয় বা অনাত্মীয় পুরুষের সামনে দেহের সাধারণ পোশাকের অতিরিক্ত চাদর বা বোরকা জাতীয় কোনো পোশাক পরিধান করে নিজেকে আবৃত করা মুমিন নারীর জন্য ফরয।
এ সকল আয়াত ও বিভিন্ন হাদীসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর সকল আলিম, ইমাম ও ফকীহ একমত যে, দূরাত্মীয় ও অনাত্মীয় পুরুষদের সামনে এবং বহির্গমনের জন্য মুমিন নারীদের সম্পূর্ণ দেহ আবৃত করা ফরয। উপরের আয়াতের ‘স্বভাবতই যা প্রকাশিত’ কথাটির ব্যাখ্যার ভিত্তিতে কেবলমাত্র মুখম-ল, কব্জি পর্যন্ত দুই হাত ও পদযুগলের বিষয়ে মুসলিম ফকীহগণের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। তাঁরা একমত যে, মুসলিম নারীর জন্য দেহের বাকি অংশ আবৃত করা ফরয। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা এত সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন যে, এ বিষয়ে মতভেদের কোনো অবকাশ নেই।
মুসলিম উম্মাহর সকল ইমাম ও ফকীহ একমত যে, কোনো পুরুষ হাঁটু বা উরু অনাবৃত করলে যেরূপ ফরয পরিত্যাগ করার জন্য কঠিন পাপে পাপী হবেন, তেমনি কোনো মুমিন নারী মাথা, মাথার চুল, কান, ঘাড়, গলা, কনুই, বাজু বা দেহের অন্য কোনো অংশ অনাবৃত করে বাইরে বেরোলে বা মাহরাম নয় এরূপ পুরুষদের সামনে গমন করলে কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশ লঙ্ঘন করার ও ফরয পরিত্যাগ করার কঠিন পাপে পাপী হবেন।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ, বই: পোশাক, পর্দা ও দেহ-সজ্জা, পৃ. ২৬৪-২৬৫।