ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট
(২য় অংশ)
তৃতীয়ত: ডায়াটেসারনের পরে খৃস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত খৃস্টধর্মের সুতিকাগার ফিলিস্তিন বা বৃহত্তর সিরিয়ায় যে ‘নতুন নিয়ম’ প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ ছিল তা সিরিয় পেশিট্টা (SyriacPeshitta) বা সিরীয় সাধারণ সংস্করণ নামে প্রসিদ্ধ ছিল। সিরিয় ভাষা মূলত যীশু খৃস্ট এবং তার শিষ্যদের ব্যবহৃত আরামিক ভাষারই একটি শাখা বা উপভাষা (dialect, or group of dialects, of Eastern Aramaic)। এ বাইবেলের পুরাতন নিয়মিটি হিব্রু ভাষা থেকে এবং নতুন নিয়মটি গ্রীক ভাষা থেকে অনূদিত। ৪০০ খৃস্টাব্দে মৃত প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু সেন্ট ক্যাথেরিন (St. Catherine) এর তালিকায় পেশিট্টা নতুন নিয়মে ১৭ টি গ্রন্থের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। উইকিপিডিয়া বিশ্বকোষে (Development of the New Testament canon) প্রবন্ধের (Outside the Empire) অংশে (Syriac Canon) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করছে: “McDonald & Sanders 2002, lists the following Syrian catalogue of St. Catherine’s, c.400: Gospels (4): Matt, Mark, Luke, John, Acts, Gal, Rom, Heb, Col, Eph, Phil, 1–2 Thess, 1–2 Tim, Titus, Phlm”
“ম্যাকডোনাল্ড ও সানডারস ২০০২ সেন্ট ক্যাথেরিনের (৪০০ খৃ) সিরিয়ান ক্যাটালগ থেকে নি¤েœর তালিকা প্রদান করেছেন: চার গসপেল: (১) মথি, (২) মার্ক, (৩) লূক, (৪) যোহন, (৫) প্রেরিত, (৬) গালাতীয়, (৭) রোমীয়, (৮) ইব্রীয়, (৯) কলসীয়, (১০) ইফিসিয়, (১১) ফিলিপীয়, (১২) ১ থিযেলনকী, (১৩) ২ থিষেলনকীয়, (১৪) ১ তিমথীয়, (১৫) ২ তিমথীয়, (১৬) তীত, (১৭) ফিলমন।”
উইকিপিডিয়ার পেশিট্টা (Peshitta) প্রবন্ধের আলোচনাও এটি প্রমাণ করে। উইকিপিডিয়ার বক্তব্য উদ্ধৃত করার পূর্বে বাইবেলীয় পুস্তকগুলো সম্পর্কে দুটি খৃস্টীয় পরিভাষা বুঝতে হবে: (ক) এন্টিলেগোমেনা (Antilegomena) এবং (খ) সাধারণীয় পত্রাবলি (General epistles/ Catholic Epistles)
(ক) নতুন নিয়মের কয়েকটি পুস্তককে এন্টিলেগোমেনা (Antilegomena) বা সন্দেহযুক্ত বা বিতর্কতি পুস্তক বলা হয়। চতুর্থ খৃস্টীয় শতকের ইউসিবিয়া (৩৪০খৃ) তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, এ পুস্তকগুলোকে অনেকে খৃস্টীয় বাইবেলের অন্তুর্ভুক্ত করলেও এগুলোর বিশুদ্ধতা সন্দেহযুক্ত ও বিতর্কিত। এগুলোর মধ্যে প্রচলিত নতুন নিয়মের শেষের ৬টি পুস্তক রয়েছে। সেগুলোর তালিকা নি¤œরূপ:
(১) যাকোবের পত্র (the Epistle of James)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২০ নং।
(২) পিতরের দ্বিতীয় পত্র (2 Peter)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২২ নং।
(৩) যোহনের দ্বিতীয় পত্র (3 John)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২৪ নং।
(৪) যোহনের তৃতীয় পত্র (3 John)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২৫ নং।
(৫) যিহূদার পত্র (the Epistle of Jude)। প্রচলিত নতুনি নিয়মে ২৬ নং।
(৬) যোহনের নিকট প্রকাশিত বাক্য (Apocalypse of / The Revelation to John)। প্রচলিত নতুন নিয়মের ২৭ নং পুস্তক।
(৭) পলের কার্যবিবরণী (Acts of Paul),
(৮) হারমাসের রাখাল (the Shepherd of Hermas),
(৯) বার্নাবাসের পত্র (the Epistle of Barnabas) (১১) ডিডাচে (the Didache) বা ১২ শিষ্যের শিক্ষা।
(১০) পিতরের নিকট প্রকাশিত পত্র (the Apocalypse of Peter),
(১১) ইব্রীয়গণের সুসমাচার (the Gospel of the Hebrews/ the gospel according to Hebrews)।
সর্বশেষ পুস্তকদুটো কোনো খৃস্টান বাইবেলেই ঢুকানো হয় নি। প্রথম ৬টি পুস্তক প্রচলিত নতুন নিয়মের মধ্যে সংযোজিত। পরবর্তী তিনটি পুস্তকও কোনো কোনো খৃস্টান সম্প্রদায়ের বাইবেলে বা প্রাচীন পা-ুলিপিতে পাওয়া যায়।((উইকিপিডিয়া, Antilegomena.))
(খ) দ্বিতীয় পরিভাষা সাধারণীয় পত্রাবলি। উইকিপিডিয়ার সাধারণ পত্রাবলি (General epistles/ Catholic Epistles) আর্টিকেলে এগুলোর তালিকা নি¤œরূপ:
(১) ইব্রীয়গণের প্রতি পত্র (Epistle to the Hebrews),
(২) যাকবের পত্র (Letter of James),
(৩) পিতরের প্রথম পত্র (First Epistle of Peter),
(৪) পিতরের দ্বিতীয় পত্র (Second Epistle of Peter),
(৫) যোহনের প্রথম পত্র (First Epistle of John),
(৬) যোহনের দ্বিতীয় পত্র (Second Epistle of John),
(৭) যোহনের তৃতীয় পত্র (Third Epistle of John),
(৮) যিহুদার পত্র (Epistle of Jude)
উইকিপিডিয়া (Wikipedia) বিশ্বকোষের পেশিত্তা (Peshitta) আর্টিকেলের সিরিয় নতুন নিয়ম (Syriac New Testament) অনুচ্ছেদে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
One thing is certain, that the earliest New Testament of the Syriac church lacked not only the Antilegomena… but the whole of the Catholic Epistles.
অর্থাৎ “একটি বিষয় নিশ্চিত যে, সিরীয় চার্চের প্রাচীনতম এ ‘নতুন নিয়মে’-র মধ্যে এন্টিলেগোমেনা (Antilegomena) বা সন্দেহযুক্ত বা বিতর্কতি পুস্তকগুলো তো নেইই, উপরন্তু সাধারণ পত্রগুলোর কোনোটিই এর মধ্যে নেই।”
আমরা দেখছি যে, সাধারণীয় ৮টি পত্রের মধ্যে ৫টি পত্র (Antilegomena) বা আইনবিরোধী সন্দেহপূর্ণ পুস্তকগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এ ৮টি পত্রের সাথে (Antilegomena) তালিকাভুক্ত ষষ্ঠ পুস্তক ‘প্রকাশিত বাক্য’ সংযুক্তি হলে আমরা দেখি যে, সিরীয় নতুন নিয়ম থেকে প্রচলিত ২৭টি পুস্তকের ৯টি পুস্তক বাদ দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এতে পুস্তক সংখ্যা ছিল ১৮। তবে ক্যাথেরিনের তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সিরীয় বাইবেলের নতুন নিয়মে ‘ইব্রীয়’ পুস্তকটি বিদ্যমান ছিল। এতে পুস্তক সংখ্যা হয় ১৯।
তবে পরবর্তীকালে সিরীয় নতুন নিয়মের মধ্যে যাকোবের পত্র, পিতরের ১ম পত্র ও যোহনের ১ম পত্র সংযোজন করা হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ পরবর্তী গবেষকগণ এ বাইবেলের পুস্তকসংখ্যা ২২ বলে উল্লেখ করেছেন।
৪র্থ-৫ম খৃস্টীয় শতাব্দীর প্রসিদ্ধতম খৃস্টান ধর্মগুরু জন ক্রীযোস্টম (John Chrysostom: 347-407), থিওডোরেট (Theodoret: 393-466) প্রমুখ প্রাচীন ধর্মগুরু ২২ পুস্তকের নতুন নিয়মের উপর নির্ভর করেছেন এবং এরই উদ্ধৃতি দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে মালানকারা সিরিয় অর্থোডক্স চার্চ (Malankara Syrian Orthodox Church) এবং পূর্ব সিরীয় ক্যালডিয়ান ক্যাথলিক চার্চ (East Syriac Chaldean Catholic Church) মূল পেশিত্তারর ২২ পুস্তকের উপরেই নির্ভর করেন।
চতুর্থত: প্রাচীনতম খৃস্টীয় চার্চগুলোর অন্যতম মিসরীয় বা কপ্টিক (Egyptian/ Coptic) চার্চ। কপ্টিক বাইবেলের মধ্যে অতিরিক্ত দুটি পুস্তক সংযোজিত। ক্লিমেন্টের প্রথম পত্র ও ক্লিমেন্টের ২য় পত্র (the two Epistles of Clement)
পঞ্চমত: আর্মেনিয়ান এপস্টলিক চার্চ (The Armenian Apostolic church)-এর বাইবেলের ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের ২৭ নং পুস্তক (প্রকাশিত বাক্য) পুস্তকটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং করিন্থিয়দের প্রতি পৌলের তৃতীয় পত্র (Third Epistle to the Corinthians) নামে একটি পুস্তক সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া ‘শিষ্যদের প্রতি ঈশ্বরের মাতার উপদেশ (Advice of the Mother of God to the Apostles), ক্রিয়াপসের পুস্তকগুলো (the Books of Criapos) এবং বার্নাবাসের পত্র (Epistle of Barnabas) পুস্তকগুলোকে অনেকে আর্মেনিয়ান নতুন নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করেন, তবে তা সর্বজনস্বীকৃত হয় নি।((বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়া, ব্রিটানিকা, এনকার্টা ইত্যাদি বিশ্বকোষে Apocrypha, Peshitta, Antilegomena, General epistles, Development of the New Testament canon/ Armenian canon আর্টিকেলগুলো দেখুন))
ষষ্ঠত: ইথিওপিয়ান (Ethiopian Orthodox Church)-এর বাইবেলে বা ইথিওপিক বাইবেল (Ethiopic Bible) বা ইথিওপিয়ান নতুন নিয়ম (Ethiopian New Testament)-এ প্রচলিত ২৭টি পুস্তকের সাথে অতিরিক্ত আরো কয়েকটি পুস্তক বিদ্যমান: (১) সিনডস (the Sinodos) (পুস্তকটি কিছু প্রার্থনা ও বিধিবিধানের সংকলন এবং তা রোমের ক্লিমেন্টের সংকলিত বলে মনে করা হয়), (২) ইথিওপিয়ান ক্লিমেন্ট (Ethiopic Clement): ক্লিমেন্টের প্রত্রের ইথিওপিয় ভাষ্য, (৩) অকটাটেউক (Octateuch) (ধারনা করা হয় যে, বইটি পিটার লিখেছিলেন রোমের ক্লিমেন্টকে) (৪) প্রতিজ্ঞাপুস্তক (নিয়মপুস্তক) ১ম খ- (the Book of the Covenant 1), (৫) প্রতিজ্ঞাপুস্তক ২য় খ- (the Book of the Covenant 2) (৬) ডিডাসক্যালিয়া (the Didascalia): চার্চের নিয়মকানুস বিষয়ক।
ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স চার্চ স্বীকৃত বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান অতিরিক্ত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে: (১) হারমাসের রাখাল (the Shepherd of Hermas), (২) ক্লিমেন্টের প্রথম পত্র (1 Clement), (৩) পলের কার্যবিবরণী (Acts of Paul)।((দেখুন উইকিপিডিয়া Development of the New Testament canon/East African canons; New Testament apocrypha/ Development of the New Testament canon.))
এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রচলিত ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলে নতুন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ২৭ হলেও বর্তমানে বিদ্যমান প্রাচীন ও আধুনিক অনেক বাইবেলের নতুন নিয়মের পুস্তক সংখ্যার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। বিভিন্ন খৃস্টীয় বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর তালিকা উল্লেখের আগে এ বিষয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। বাইবেলীয় সাহিত্য (biblical literature) আর্টিকেলের ৪র্থ শতকে বাইবেলের আইনসিদ্ধ গ্রন্থগুলো সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত (Determination of the canon in the 4th century) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
Athanasius, a 4th-century bishop of Alexandria and a significant theologian, delimited the canon and settled the strife between East and West. On a principle of inclusiveness, both Revelation and Hebrews (as part of the Pauline corpus) were accepted. The 27 books of the New Testament—and they only—were declared canonical. In the Greek churches there was still controversy about Revelation, but in the Latin Church, under the influence of Jerome, Athanasius’ decision was accepted. It is notable, however, that, in a mid-4th-century manuscript called Codex Sinaiticus, the Letter of Barnabas and the Shepherd of Hermas are included at the end but with no indication of secondary status, and that, in the 5th-century Codex Alexandrinus, there is no demarcation between Revelation and I and II Clement.
In the Syriac Church, Tatian’s Diatessaron (…. It was the standard Gospel text in the Syrian Middle East until about AD 400) was used until the 5th century, and in the 3rd century the 14 Pauline Letters were added. Because Tatian had been declared a heretic, there was a clear episcopal order to have the four separated Gospels when, according to tradition, Rabbula, bishop of Edessa, introduced the Syriac version known as the Peshitta—also adding Acts, James, I Peter, and I John—making a 22-book canon. Only much later, perhaps in the 7th century,did the Syriac canon come into agreement with the Greek 27 books.
“চতুর্থ শতাব্দীর আলেকজেন্ড্রিয়ার বিশপ ও প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু এথানেসিয়াস নতুন নিয়মের আইনসিদ্ধ পুস্তকগুলো নির্ধারণ করেন এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় খৃস্টান সম্প্রদায় (ক্যাথলিক/ রোমান ক্যথলিক) ও পূবাঞ্চলীয় খৃস্টান সম্প্রদায় (অর্থোডক্স/ গ্রীক অথোডক্স)-এর মধ্যে বিদ্যমান বিভক্তির সমাধান করেন। বাদ না দিয়ে ঢুকিয়ে নেও- এ নীতির ভিত্তিতে ‘প্রকাশিত বাক্য’ ও ‘ইব্রীয়গণের প্রতি পত্র’ (পলীয় রচনাবলীর অংশ হিসেবে) উভয়কেই তিনি গ্রহণ করেন। নতুন নিয়মের ২৭টি পুস্তক এবং শুধু এ ২৭টিই আইনসিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। গ্রীক অর্থোডক্স চার্চগুলোর মধ্যে এখনো ‘প্রকাশিত বাক্য’ পুস্তকটির বিষয়ে বিতর্ক-বিরোধ বিদ্যমান। তবে ল্যাটিন (ক্যাথলিক) চার্চে (পরবর্তী ৫ম শতাব্দীর পপ্রসিদ্ধ ধর্মগুরু) জীরোমের (Saint Jerome) প্রভাবে এ্যথানেসিয়াসের মতটি স্বীকৃত হয়ে যায়।
সর্বাবস্থায়, এখানে উল্লেখ্য যে, সিনাইয়ের পা-ুলিপি (Codex Sinaiticus) নামে প্রসিদ্ধ খৃস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের বাইবেলের লিখিত পা-ুলিপির শেষে বার্নাবাসের পত্র এবং হারমাসের রাখল পুস্তকদুটো বিদ্যমান। বইদুটো নতুন নিয়মের অন্যান্য বইয়ের চেয়ে ভিন্ন মানের বা দ্বিতীয় পর্যায়ের বলে পা-ুলিপিটির মধ্যে কোনোরূপ ইঙ্গিত নেই। আলেকজেন্দ্রীয় পা-ুলিপি (Codex Alexandrinus) নামে প্রসিদ্ধ ৫ম শতাব্দীর বাইবেলীয় পা-ুলিপির মধ্যে ক্লিমেন্টের প্রথম পত্র ও ক্লিমেন্টের দ্বিতীয় পত্র বিদ্যমান। এ দুটো পুস্তক যে প্রকাশিত বাক্য থেকে ভিন্ন সেরূপ কোনো ইঙ্গিত বা পৃথকীকরণ সেখানে নেই।
সিরীয় চার্চে টিটানের ডায়াটেসারন ব্যবহৃত হতো ৫ম শতাব্দী পর্যন্ত। প্রায় ৪০০ খৃস্টব্দ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের সিরীয় চার্চে এটিই ছিল বিশুদ্ধ ও সঠিক গসপেল ভাষ্য। তৃতীয় শতাব্দীতে এর মধ্যে পলের ১৪টি পত্র সংযোজন করা হয়। টিটানকে ধর্মদ্রোহী ঘোষণা দেওয়ার কারণে বিশপের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয় যে, পৃথক চার গসপেলকে গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রচলিত মত থেকে জানা যায় যে, যখন (৫ম শতাব্দীতে) এডেসার বিশপ রাব্বুলা পেশিট্টা নামক নতুন নিয়মের সিরীয় সংস্করণ প্রকাশ করলেন তখন তিনি প্রেরিতদের কার্যবিবরণী, যাকোব, ১ পিতর ও ১ যোহন পুস্তকগুলোর এর মধ্যে সংযোজন করেন। এভাবে ২২ পুস্তকের আইনসিদ্ধ ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়। অনেক পরে ৭ম শতাব্দীতে সিরিয়ান বাইবেলের মধ্যে গ্রীক ২৭ পুস্তকই সংযোজন করা হয়।”
১. ৩. ২. নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর তালিকা
এখানে প্রচলিত ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর পাশাপাশি সিরীয়, ইথিওপীয়, মিসরীয় কপ্টিক ও আমেরিকান এপস্টলিক চার্চের পুস্তকগুলোর সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা প্রকাশ করছি। পুস্তকগুলোর বিস্তারিত নাম ও বাংলা অনুবাদ পরে উল্লেখ করা হবে।
ক্রম | সিরীয় বাইবেল | ক্যাথলিক প্রটেস্ট্যানট | মিসরীয় | আর্মেনিয় | ইথিওপিয় |
1 | Matthew | Matthew | Matthew | Matthew | Matthew |
2 | Mark | Mark | Mark | Mark | Mark |
3 | Luke | Luke | Luke | Luke | Luke |
4 | John | John | John | John | John |
5 | Acts (পরে সংযোজিত) | Acts | Acts | Acts | Acts |
6 | Romans | Romans | Romans | Romans | Romans |
7 | Corinthians 1 | Corinthians 1 | Corinthians 1 | Corinthians 1 | Corinthians 1 |
8 | Corinthians 2 | Corinthians 2 | Corinthians 2 | Corinthians 2 | Corinthians 2 |
9 | Galatians | Galatians | Galatians | Galatians | Galatians |
10 | Ephesians | Ephesians | Ephesians | Ephesians | Ephesians |
১১ | Philippians | Philippians | Philippians | Philippians | Philippians |
12 | Colossians | Colossians | Colossians | Colossians | Colossians |
13 | Thessalonians 1 | Thessalonians 1 | Thessalonians 1 | Thessalonians 1 | Thessalonians 1 |
14 | Thessalonians 2 | Thessalonians 2 | Thessalonians 2 | Thessalonians 2 | Thessalonians 2 |
15 | Timothy 1 | Timothy 1 | Timothy 1 | Timothy 1 | Timothy 1 |
16 | Timothy 2 | Timothy 2 | Timothy 2 | Timothy 2 | Timothy 2 |
১৭ | Titus | Titus | Titus | Titus | Titus |
18 | Philemon | Philemon | Philemon | Philemon | Philemon |
19 | Hebrews | Hebrews | Hebrews | Hebrews | Hebrews |
20 | James (পরে সংযোজিত) | James | James | James | James |
21 | 1 Peter (পরে সংযোজিত) | Peter 1 | Peter 1 | Peter 1 | Peter 1 |
22 | Peter 2 | Peter 2 | Peter 2 | Peter 2 | |
23 | 1 John (পরে সংযোজিত) | John 1 | John 1 | John 1 | John 1 |
24 | John 2 | John 2 | John 2 | John 2 | |
২৫ | John 3 | John 3 | John 3 | John 3 | |
26 | Jude | Jude | Jude | Jude | |
27 | Revelation | Revelation | Revelation | ||
28 | Clement 1 | Clement 1 | |||
29 | Clement 2 | ||||
30 | Corinthians 3 | ||||
31 | Epistle of Barnabas | ||||
32 | Advice of the Mother of God to the Apostles | ||||
33 | the Books of Criapos | ||||
34 | the Sinodos | ||||
35 | Octateuch | ||||
36 | Book of the Covenant 1 | ||||
37 | Book of the Covenant 1 | ||||
38 | the Didascalia | ||||
39 | the Shepherd of Hermas | ||||
40 | Acts of Paul |
১. ৩. ৩. নতুন নিয়মের সন্দেহজনক পুস্তকাবলি
উপরের তালিকা থেকে আমরা দেখছি যে, প্রচলিত ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট নতুন নিয়মের মধ্যে ২৭টি পুস্তক থাকলেও বর্তমানে বিদ্যমান প্রাচীন ও আধুনিক নতুন নিয়ম বা চার্চ স্বীকৃত নতুন নিয়ম (ঘবি ঞবংঃধসবহঃ পধহড়হ)-এর মধ্যে ৪০টি পুস্তক বিদ্যমান। এখানে উল্লেখ্য যে, এ ছাড়া আরো শতাধিক ইঞ্জিল, পত্র ও পুস্তক প্রথম শতাব্দীগুলোর খৃস্টানদের মধ্যে ‘ইঞ্জিল শরীফ’ ও ‘নতুন নিয়মের আসমানী পুস্তক’ হিসেবে প্রচলিত ছিল। তবে সেগুলো কোনো চার্চ স্বীকৃত ‘নতুন নিয়মের’ মধ্যে স্থান পায় নি। এগুলোকে নতুন নিয়মের গোপন, সন্দেহজনক বা জাল পুস্তক (New Testament apocrypha) অথবা সন্দেহজনক বা গোপন নতুন নিয়ম (Apocryphal New Testament) বলা হয়। এ বিষয়ে এনকার্টার (Bible) প্রবন্ধের (The New Testament) পরিচ্ছেদের (precanonical writings) অর্থাৎ ‘চার্চস্বীকৃত নতুন নিয়ম সৃষ্টির আগের লেখালেখি’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
The 27 books of the New Testament are only a fraction of the literary production of the Christian communities in their first three centuries. … As many as 50 Gospels were in circulation during this time.
“খৃস্টান সমাজগুলো খৃস্টীয় প্রথম তিন শতকে যা কিছু লিখেছিল তার অতি সামান্য অংশ হলো নতুন নিয়মের ২৭টি পুস্তক। … এ সময়ে প্রায় ৫০টি ইঞ্জিল বা গসপেল প্রচলিত ছিল।”
এনকার্টার সন্দেহজনক নতুন নিয়ম (Apocryphal New Testament) প্রবন্ধে বলা হয়েছে: Apocryphal New Testament … title that refers to more than 100 books written by Christian authors between the 2nd and 4th centuries. “সন্দেহজনক নতুন নিয়ম.. বলতে এক শতেরও অধিক পুস্তক বুঝানো হয় যেগুলো খৃস্টান লেখকগণ ২য় থেকে ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে লিখেছিলেন।”
আমরা উইকিপিডিয়ার (The New Testament apocrypha) ও (The Lost Books of the Bible and the Forgotten Books of Eden) প্রবন্ধ থেকে, ‘বাইবেল অধ্যয়ন হাতিয়ার’ (biblestudytools) নামক ওয়েবসাইট (http://www.biblestudytools.com/apocrypha/) থেকে এবং আন্তধর্মীয়.সংস্থা (interfaith.org)-এর ওয়েবসাইট (http://www.interfaith.org/christianity/ apocrypha/) থেকে নিম্নের নতুন নিয়মের দেড় শতাধিক বইয়ের তালিকা প্রদান করছি। এগুলোর কয়েকটি পুস্তক এখনো প্রচলিত কোনো কোনো বিধিবদ্ধ (পধহড়হরপধষ) নতুন নিয়মের মধ্যে বিদ্যমান।
ক্রম | ইংরেজি নাম | বাংলা নাম |
1 | Gospel of the Ebionites | এবোনাইটদের ইঞ্জিল |
2 | Gospel of the Hebrews | হিব্রুগণের ইঞ্জিল |
3 | Gospel of the Nazarenes | নাসারাগণের (নাযারীন) ইঞ্জিল |
4 | Gospel of Marcion | মারসিওনের ইঞ্জিল |
5 | Gospel of the Lord (Marcion) | প্রভুর ইঞ্জিল (মারসিওন) |
6 | Gospel of Mani | মানির ইঞ্জিল |
7 | Gospel of Apelles | এপিলিসের ইঞ্জিল |
8 | Gospel of Bardesanes/ Bardaisan | বারডাইসানে ইঞ্জিল |
9 | Gospel of Basilides | বাসিলাইডসের ইঞ্জিল |
10 | Gospel of Thomas | থমাসের ইঞ্জিল |
১১ | Gospel of Peter | পিতরের ইঞ্জিল |
12 | Gospel of Barnabas | বার্নাবাসের ইঞ্জিল |
13 | Gospel of Nicodemus | নিকোডেমাসের ইঞ্জিল |
14 | Gospel of Bartholomew | বার্থলমেয়র ইঞ্জিল |
15 | Gospel of Judas (Iscariot) | জুডাস (ইস্করিয়ট)-এর ইঞ্জিল |
16 | Gospel of Mary (Magdalene) | মেরি (মগ্ºিদিলিন)-এর ইঞ্জিল |
১৭ | Gospel of the Nativity of Mary | মেরির জন্মের ইঞ্জিল |
18 | Gospel of Philip | ফিলিপের ইঞ্জিল |
19 | Greek Gospel of the Egyptians | মিসরীয়দের গ্রীক ইঞ্জিল |
20 | Coptic Gospel of the Egyptians | মিসরীয়দের কপ্টিক ইঞ্জিল |
21 | Gospel of Truth | সত্যের ইঞ্জিল |
22 | Egerton Gospel | ইজার্টন ইঞ্জিল |
23 | Gospel of Jesus’ Wife | যীশুর স্ত্রীর ইঞ্জিল |
24 | Gospel of Eve | হাওয়ার ইঞ্জিল |
২৫ | Gospel of the Four Heavenly Realms | চার স্বর্গীয় অঞ্জলের ইঞ্জিল |
26 | Gospel of Matthias | ম্যাথিয়াসের ইঞ্জিল |
27 | Gospel of Perfection | বিশুদ্ধতার ইঞ্জিল |
28 | Gospel of the Seventy | সত্তরের ইঞ্জিল |
29 | Gospel of Thaddaeus | থাড্ডাউসের ইঞ্জিল |
30 | Gospel of the Twelve | দ্বাদশের ইঞ্জিল |
31 | Gospel of Cerinthus | সেরিন্থাসের ইঞ্জিল |
32 | Secret Gospel of John/ Apocryphon of John | যোহনের গোপন ইঞ্জিল |
33 | Apocryphon of John (long version) | যোহনের গোপন ইঞ্জিল (দীর্ঘ সংস্করণ) |
34 | Gospel of the Saviour/ The Unknown Berlin Gospel | ত্রাণকর্তার ইঞ্জিল (বার্লিনের পরিচয়হীন ইঞ্জিল) |
35 | The Secret Gospel of Mark | মার্কের গোপন ইঞ্জিল |
36 | The Oxyrhynchus Gospels | অক্সিরিনকাস ইঞ্জিল |
37 | Infancy Gospel (protevangelium/ Protoevangelium) of James | যাকোব রচিত শৈশবীয় ইঞ্জিল |
38 | Infancy Gospel of Matthew/ Birth of Mary and Infancy of the Saviour | মথি রচিত শৈশবীয় ইঞ্জিল/ মেরির জন্ম ও ত্রাণকর্তার শিশুকাল |
39 | Infancy Gospel of Thomas Greek A | থমাস রচিত শৈশবীয় ইঞ্জিল গ্রীক-ক |
40 | Infancy Gospel of Thomas – Greek B | থমাস রচিত শৈশবীয় ইঞ্জিল গ্রীক-খ |
41 | Infancy Gospel of Thomas – Latin | থমাস রচিত শৈশবীয় ইঞ্জিল ল্যাটিন |
42 | Syriac Infancy Gospel | সিরীয় শৈশবীয় ইঞ্জিল |
43 | Arabic Infancy Gospel | আরবী শৈশবীয় ইঞ্জিল |
44 | First Infancy Gospel of Jesus Christ | যীশু খৃস্টের প্রথম শৈশবীয় ইঞ্জিল |
45 | History of Joseph the Carpenter | সুত্রধর যোশেফের ইতিহাস |
46 | Life of John the Baptist | যোহন বাপ্তাইজকের জীবনী |
47 | Pseudo-Cyril of Jerusalem on the Life and the Passion of Christ | খৃস্টের জীবন ও যন্ত্রণা বিষয়ে যেরুযালেমের সিরিলের নামীয় পুস্তক |
48 | Diatessaron/ Harmonized gospel | ডায়টেসরন: সমন্বিত ইঞ্জিল |
49 | Questions of Bartholomew | বার্থলমেয়র প্রশ্নাবলি |
50 | Resurrection of Jesus Christ (according to Bartholomew) | যীশু খৃস্টের পুনরুত্থান (বার্থলমেয়র মতানুসারে) |
51 | The Sophia of Jesus Christ | যীশু খৃস্টের প্রজ্ঞাপুস্তক (সোফিয়া) |
52 | Coptic Apocalypse of Paul | পলের নিকট প্রকাশিত বাক্য কপ্টিক |
53 | Apocalypse of Paul | পলের নিকট প্রকাশিত বাক্য |
54 | Apocryphon of James/ Secret Book of James | যাকোবের নিকট প্রকাশিত বাক্য/ যাকোবের গোপন পুস্তক |
55 | Book of Thomas the Contender | প্রতিযোগী থমাসের পুস্তক |
56 | Dialogue of the Saviour | ত্রাণকর্তার কথোপকথন |
57 | Apocalypse of Peter | পিতরের নিকট প্রকাশিত বাক্য |
58 | Gnostic Apocalypse of Peter | পিতরের নিকট প্রকাশিত বাক্য মারফতী |
59 | Pistis Sophia | বিশ্বাসের প্রজ্ঞা/ ত্রাণকর্তার প্রজ্ঞা |
60 | Second Treatise of the Great Seth | মহান সেথের দ্বিতীয় গবেষণা গ্রন্থ |
61 | Trimorphic Protennoia | ট্রায়মরফিক প্রটেনিয়া (ত্রিপর্যায়িক প্রটেনিয়া) |
62 | Ophite Diagrams | অফাইট ডায়াগ্রাম (অফাইট রেখাচিত্র) |
63 | Acts 29 | প্রেরিতদের কার্যবিবরণী ২৯ |
64 | Acts of Andrew | এন্ড্রুর কার্যবিবরণী |
65 | Acts of Barnabas | বার্নাবাসের কার্যবিবরণী |
66 | Acts of John | যোহনের কার্যবিবরণী |
67 | Acts of John the Theologian | ধর্মতাত্ত্বিক যোহনের কার্যবিবরণী |
68 | Acts of the Martyrs | শহীদদের কার্যবিবরণী |
69 | Acts of Paul | পলের কার্যবিবরণী |
70 | Acts of Paul and Thecla | পল ও থেলকার কার্যবিবরণী |
71 | Acts of Peter | পিতরের কার্যবিবরণী |
72 | Acts of Peter and Andrew | পিতর ও এন্ড্রুর কার্যবিবরণী |
73 | Acts of Peter and Paul | পল ও পিতরের কার্যবিবরণী |
74 | Acts of Peter and the Twelve | পিতর ও দ্বাদশের কার্য বিবরণী |
75 | Acts of Philip | ফিলিপের কার্যবিবরণী |
76 | Acts of Pilate | পিলেটের কার্যবিবরণী |
77 | Acts of Thomas | থমাসের কার্যবিরণী |
78 | Acts of Timothy | তিমোথির কার্যবিবরণী |
79 | Acts of Xanthippe, Polyxena, and Rebecca | যানথিপ, পেলিক্সেনা ও রেবেকার কার্যবিবরণী |
80 | Acts and Martyrdom of St. Matthew the Apostle | শিষ্য মথির কার্যবিবরণী ও শহীদ হওয়ার বিবরণ |
81 | Acts of Thaddeus (Epistles of Pontius Pilate) | থাড্ডিয়াসের কার্যবিবরণী/ পন্টিয়াস পিলেটের পত্র |
82 | Acts of Xanthippe and Polyxena | যানথিপ ও পেলিক্সেনার কার্যবিবরণী |
83 | Epistle of Barnabas | বার্নাবাসের পত্র |
84 | Epistles of Clement 1 | ক্লিমেন্টের ১ম পত্র |
85 | Epistles of Clement 2 | ক্লিমেন্টের ২য় পত্র |
86 | Epistles of Clement 3 | ক্লিমেন্টের ৩য় পত্র |
87 | Epistle of the Corinthians to Paul | পলের প্রতি করিন্থীয়দের পত্র |
88 | Epistle of Ignatius to the Smyrnaeans | স্মিরনীয়দের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
89 | Epistle of Ignatius to the Trallians | ট্রালিয়ানদের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
90 | Epistle of Polycarp to the Philippians | ফিলিপীয়দের প্রতি পলিকার্পের পত্র |
91 | Epistle to Diognetus | ডায়গনেটাসের প্রতি পত্র |
92 | Epistle to the Laodiceans (Paul) | লোডিসীয়দের প্রতি পত্র |
93 | Epistle to Seneca the Younger (Paul) | যুবক সিনিকার প্রতি পত্র |
94 | Paul and Seneca | পল ও সিনিকা |
95 | Third Epistle to the Corinthians | করিন্থিয়দের প্রতি তৃতীয় পত্র |
96 | Epistles of Pontius Pilate | পন্টিয়া পিলেটের পত্র |
97 | Letter of Aristeas | এরিস্টাসের পত্র |
98 | Apocalypse (Revelation) of Pseudo-Methodius | মেথোডিয়াসের নামে প্রচারিত প্রকাশিত বাক্য |
99 | Apocalypse of Thomas | থমাসের প্রতি প্রকাশিত বাক্য |
100 | Apocalypse of Stephen | স্টিফেনের প্রতি প্রকাশিত বাক্য |
101 | First Apocalypse of James | যাকোবের প্রতি প্রকাশিত বাক্য ১ |
102 | Second Apocalypse of James | যাকোবের প্রতি প্রকাশিত বাক্য ২ |
103 | Revelation of John the Theologian | ধর্মতাত্ত্বিক যোহনের প্রতি প্রকাশিত বাক্য |
104 | Revelation of Paul | পলের প্রতি প্রকাশিত বাক্য |
105 | The Shepherd of Hermas | হারমাসের রাখাল |
106 | The Home Going of Mary | মেরির গৃহে প্রত্যাবর্তন |
107 | The Falling asleep of the Mother of God | ঈশ্বরের মাতার ঘুমিয়ে পড়া |
108 | The Descent of Mary | মেরির অবতরণ |
109 | Apostolic Constitutions | শিষ্যদের সংবিধান |
110 | Book of Nepos | নেপোসের পুস্তক |
111 | Canons of the Apostles | শিষ্যদের কানুন |
112 | Cave of Treasures | গুপ্তধনের গুহা |
113 | Didache (Teachings of the Twelve Apostles) | বার শিষ্যের শিক্ষামালা |
114 | Liturgy of St James | সাধু যাকোবের নীতিমালা |
115 | Penitence of Origen | অরিগনের অনুশোচনা |
116 | Prayer of Paul | পলের প্রার্থনা |
117 | Sentences of Sextus | সেক্সটাসের বিচার |
118 | Physiologus | ফিযিওলোগাস (প্রাণীদের কাহিনী) |
119 | Book of the Bee | মৌমাছির পুস্তক |
120 | The Naassene Fragment | নাসীন পাণ্ডুলিপি |
121 | The Fayyum Fragment | ফাইঊম পা-ুলিপি |
122 | Memoria Apostolorum | শিষ্যগণের স্মৃতি |
123 | Martyrdom of Polycarp | পলিকার্পের শহীদ হওয়া |
124 | Epistula Apostolorum/Letter of the Apostles | শিষ্যগণের পত্র |
125 | Epistle of Pseudo-Titus | তিতের নামীয় পত্র |
126 | Letter of Peter to Philip, | ফিলিপের প্রতি পিতরের পত্র |
127 | The Epistles of Jesus to Abgarus | এবগারাসের প্রতি যীশুর পত্র |
128 | Decretum Gelasianum or the Gelasian Decree | জেলাসিআনের ডিগ্রী |
129 | Acts of Andrew and Matthias | এন্ড্রু ও ম্যাথিয়াসের কার্যবিবরণী |
130 | Martyrdom of Bartholomew | বার্থলমেয়র শহীদ হওয়া |
131 | Book of John the Evangelist | ইঞ্জিলপ্রচারক যোহনের পুস্তক |
132 | The Martyrdom of Matthew | মথির শহীদ হওয়া |
133 | Teaching of Thaddeus | থাড্ডিয়াসের শিক্ষা |
134 | Consummation of Thomas | থমাসের পরিপূর্ণতা |
135 | Book of John concerning the dormition of Mary (transitus mariæ) | মেরির ঊধ্বারোহন বিষয়ে যোহনের পুস্তক |
136 | Narrative of Joseph of Arimathaea | আরিমাথিয়ার যোসেফের বর্ণনা |
137 | Avenging of the Saviour | ত্রাণকর্তার প্রতিশোধ |
138 | Alexandrians | আলেকজেন্দ্রীয়গণ |
139 | Muratonian Canon (fragment) | মুরাটোনিয়ান বাইবেল (পা-ুলিপির অংশ) |
140 | Traditions of Mattias | মাটিয়াসের ঐতিহ্য |
141 | Preaching of Peter | তিতরের প্রচার |
142 | Didascalia Apostolorum | শিষ্যগণের নিয়মকানুন |
143 | Psuedo-Sibylline Oracles (Sibyl) | সিবিলের নামে প্রচলিত বক্তব্যসমূহ |
144 | The Apostles’ Creed | প্রেরিতগণের ধর্ম বিশ্বাস |
145 | The Epistle of Ignatius to the Ephesians | ইফিসীয়দের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
146 | The Epistle of Ignatius to the Magnesians | মাগনেসীয়দের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
147 | The Epistle of Ignatius to the Trallians | ট্রালীয়ানদের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
148 | The Epistle of Ignatius to the Romans | রোমীয়দের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
149 | The Epistle of Ignatius to the Philadelphians | ফিলাডেলফীয়দের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
150 | The Epistle of Ignatius to the Smyrneans | স্মারনীয়দের প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
151 | The Epistle of Ignatius to Polycarp | পরিকার্পেপর প্রতি ইগনাটিয়াসের পত্র |
152 | Letter of Herod To Pilate the Governor | গভর্নর পীলাতের প্রতি হেরোডের পত্র |
153 | Letter of Pilate to Herod | হেরোদের প্রতি পীলাতের পত্র |
১. ৩. ৪. নতুন নিয়ম বনাম ইঞ্জিল শরীফ
উপরের ২৭টি গ্রন্থের মধ্যে প্রথম চারটি গ্রন্থকে ‘ইঞ্জিল চতুষ্ঠয়’ বলা হয়। ‘ইঞ্জিল’ শব্দটি শুধু এই চারটি গ্রন্থের জন্য প্রযোজ্য। ইঞ্জিল শব্দটি মূলত গ্রীক ভাষা থেকে আরবীকৃত শব্দ। গ্রীক ‘বঁ’ অর্থ ভাল (good) এবং ‘announc’ অর্থ ঘোষণা (aggelein), একত্রে ‘eeuaggelos’ অর্থ সুসংবাদ ঘোষণা (bringing good news)। গ্রীক ‘euaggelion’ শব্দের অর্থ সুসংবাদ (good news)। এ শব্দটি থেকে আরবী ‘ইঞ্জিল’ শব্দ এবং ইংরেজী ‘ইভাঞ্জেল’ (evangel) শব্দটির উৎপত্তি। আর ইঞ্জিল বা ইভাঞ্জেল (বাধহমবষ) বলতে এ চারটি পুস্তক বুঝানো হয়।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বাইবেল সোসাইটি নতুন নিয়মকেই ‘ইঞ্জিল শরীফ’ নামে প্রচার করেন। প্রথম চার ইঞ্জিলের পরের পুস্তকগুলোকেও ইঞ্জিলের অমুক বা তমুক সিপারা বা খ- বলে উল্লেখ করছেন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে সুস্পষ্ট অসত্য ও অনুবাদের ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততা। বিশেষত ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ অবশ্যই আক্ষরিক ও মূলাশ্রয়ী হতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে খৃস্টান অনুবাদকগণ এক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা নষ্ট করেছেন। দুটি পর্যায়ে তারা এরূপ অবিশ্বস্ততার আশ্রয় নিচ্ছেন।
(ক) প্রথম চারটি পুস্তকের ক্ষেত্রে মূল গ্রীক ও ইংরেজি নাম “সাধু মথির, মার্কের, লূকে বা যোহনের মতানুসারে ঈসা মাসীহের পবিত্র ইঞ্জিল’ কথাটির অনুবাদে তারা লিখছেন: “ইঞ্জিল শরিফ, প্রথম খ-: মথি’ অথবা ‘মথিলিখিত ইঞ্জিল’।
(খ) চারটি ‘মতানুসারে ইঞ্জিলের’ পরবর্তী ২৩ টি পুস্তক বা পত্রকেও ইঞ্জিল শরিফ ও ইঞ্জিল শরিফের বিভিন্ন খ- বা ‘সিপারা’ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
তারা দাবি করছেন যে, গ্রন্থগুলো মূল গ্রীক থেকে অনূদিত। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত যে, মূল গ্রীকে এ দুটি বিষয়ের একটিও নেই। দু দিক থেকেই তারা অনুবাদের বিশ্বস্ততা নষ্ট করেছেন। সুপ্রিয় পাঠক, নি¤েœর বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:
প্রথমত: আমরা দেখলাম যে, নতুন নিয়মের প্রথম চারটি পুস্তককে খৃস্টানগণ ‘ইঞ্জিল’ বলে দাবি করেছেন। এছাড়া বাকি ২৩টি পুস্তককে বিগত ২ হাজার বৎসরে কোনো একজন খৃস্টানও ‘ইঞ্জিল’ বলে দাবি করেন নি। খৃস্টান প্রচারকগণ বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবেই জানেন। তবুও তারা এরূপ করছেন।
দ্বিতীয়ত: আমরা দেখেছি যে, বাইবেলের বাংলা অনুবাদকে তারা ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ নামকরণ করেছেন। খৃস্টানগণ বাইবেলের আরবী অনুবাদকে মূলত এ নামে আখ্যায়িত করেন। তারা বলতে পারেন যে, আমরা বাংলা অনুবাদের জন্য আরবী নাম ব্যবহার করেছি। তবে বাইবেলের নতুন নিয়মকে কখনোই আরবীতে ‘ইঞ্জিল’ বলা হয় না। কোনো আরবী বাইবেলেই পুরাতন নিয়মের ২৭টি পুস্তককে একত্রে ‘ইঞ্জিল’ নামে অনুবাদ করা হয় নি। আরবী ভাষায় নতুন নিয়মের নাম (العهد الجديد), যার অর্থ নতুন নিয়ম বা নতুন সন্ধি। বিশ্বের কোনো ভাষাতেই খৃস্টানগণ নতুন নিয়মের ২৭টি পুস্তককে ‘ইঞ্জিল’ বলে দাবি করেন নি।
বিশ্বের যে কোনো জাগতিক ‘ডকুমেন্ট’ অনুবাদের ক্ষেত্রে এরূপ করলে তা ‘ক্রিমিন্যাল’ বা ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। পাঠক একটু চিন্তুা করুন:
(১) প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘ড্রীমস ফ্রম মাই ফাদার’ (Dreams from My Father)। যদি কেউ এ শিরোনামে বই ছেপে তার মধ্যে আমেরিকা সরকারের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা মন্ত্রীর লেখা কিছু বই সংযেজান করে প্রকাশ করেন বা ড্রীমস বইটির প্রথম খ-, দ্বিতীয় খ- ইত্যাদি নামে প্রকাশ বা প্রচার করেন এবং মানুষেরা এ সকল সংযোজিত পুস্তকের বক্তব্য বারাক ওবামার বক্তব্য হিসেবে গণ্য করেন তবে বারাক ওবামা ও আমেররিকার প্রশাসন বিষয়টিকে কিভাবে দেখবেন? পাঠক এরূপ কর্মকে কতটুকু সঠিক ও বিশ্বস্ততা বলে গ্রহণ করেবন।
(২) ‘বাংলাদেশের সংবিধান’ শিরোনাম দিয়ে একটি বই ছেপে এর মধ্যে যদি সুপ্রিম কোর্টের কিছু রায়, সরকারি কিছু গেজেট, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর লেখা কিছু পুস্তক সংযোজন করে বাংলাদেশ সংবিধান দ্বিতীয় খ-, তৃতীয় খ- ইত্যাদি নামে সংবিধানের সাথেই প্রকাশ ও প্রচার করা হয় এবং মানুষের এ সকল সংযোজিত পুস্তকের বক্তব্য ‘বাংলাদেশের সংবিধানের’ বক্তব্য হিসেবে উদ্ধৃতি দিতে থাকে তখন বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে কিভাবে নিবেন?
সকল ডকুমেন্টের ক্ষেত্রেই বিষয়টি সুস্পষ্ট। যে সকল প-িত বাইবেল অনুবাদ করেছেন তাদের লেখা কোনো গ্রন্থ বা তাদের সম্পতির কোনো দলিলের মধ্যে এরূপ কিছু করা হলে তারা তাকে প্রতারণা বলে গণ্য করবেন এবং আদালতের আশ্রয় নিবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ধর্মগ্রন্থের অনুবাদের ক্ষেত্রে তারা মূলকে সংরক্ষণ করছেন না।
পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে যে, মিথ্যা ঈশ্বরের নিকট ঘৃণিত ও বিশ্বস্ততা মুক্তির পথ (লেবীয় ১৯/১১; হিতোপদেশ ১২/২২), অনন্ত নরকই মিথ্যাবাদীদের ঠিকানা (প্রকাশিত বাক্য ২১/৮)। বাইবেলেই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে সামান্যতম সংযোজন বা বিয়োজন করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং কেউ এরূপ করলে সে পরকালের মুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে (প্রকাশিত বাক্য ২২/১৮-১৯)। নতুন নিয়মকে ইঞ্জিল বলা কি মিথ্যা ও অবিশ্বস্ততা নয়? প্রথম খ-, দ্বিতীয় খ- ইত্যাদি সংযোজন করা কি ধর্মগ্রন্থের মধ্যে সংযোজন নয়? তাহলে ধার্মিক মানুষ কিভাবে এরূপ করেন।
বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈশ্বর অনেক ভাববাদীর কাছে মিথ্যার আত্মা প্রেরণ করেন (১ রাজাবলি ২২/২২; ২২/২৩; ২ বংশাবলি ১৮/২১; ১৮/২২; প্রকাশিত বাক্য ২০/১০)। তাহলে কি এসকল ধার্মিক ধর্মপ্রচারক মিথ্যার আত্মায় প্ররেচিত হয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন এবং মনে করেছেন তারা ঈশ্বরের গৌরবার্থে মিথ্যা বলছেন?
১. ৩. ৫. ‘ইঞ্জিল’ বনাম ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’
আমরা দেখলাম যে, ২৭টি বইয়ের মধ্যে মাত্র চারটি বইকে খৃস্টানগণ ইঞ্জিল বলে দাবি করেছেন। মূল গ্রীক বা ইংরেজি বাইবেলে এগুলির নাম নিম্নরূপ:
(১) The Holy Gospel of Jesus Christ According to St. Matthew/ The Gospel According To St. Matthew: সাধু মথির মতানুসারে ঈসা মাসীহের পবিত্র ইঞ্জিল/ সাধু মথির মতানুসারে ইঞ্জিল।
(২) The Holy Gospel of Jesus Christ According to St. Mark/ The Gospel According To St. Mark: সাধু মার্কের মতানুসারে ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল।
(৩) The Holy Gospel of Jesus Christ According to St. Luke/ The Gospel According To St. Luke: সাধু লূকের মতানুসারে ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল
(৪) The Holy Gospel of Jesus Christ According to St. John/ The Gospel According To St. John: সাধু যোহনের মতানুসারে ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল।
পাঠক, নাম থেকেই বুঝতে পারছেন যে, বিভিন্ন ব্যক্তি পুস্তক লিখে তা ‘ইঞ্জিল’ বলে দাবি করেন, এজন্যই পুস্তকগুলোর এরূপ নামকরণ করা হয়। পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা জানব যে, ঈসা (আ) ইঞ্জিল প্রচার করেছিলেন বলে প্রচলিত ছিল। তবে কারো কাছেই এর কোনো ‘কপি’ ছিল না। তাঁর তিরোধানের শতাধিক বৎসর পরে অনেক মানুষ ‘ইঞ্জিল’ লিখে প্রচার করতে শুরু করেন যে, এটি ঈসা (আ) এর ইঞ্জিল। এজন্য এগুলির এরূপ নামকরণ করা হয়: ‘অমুকের মতানুসারে এটি ইঞ্জিল’। আমরা নতুন নিয়মের অতিরিক্ত পুস্তকগুলোর মধ্যে আরো অনেক ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’ দেখেছি।
১. ৩. ৬. ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’ ও প্রকৃত ইঞ্জিল
আমরা দেখলাম যে, ‘ইঞ্জিল শরীফ’ নামের পুস্তকটি কখনোই ইঞ্জিল নয়। ২৭টির মধ্যে মাত্র চারটি পুস্তক “মতানুসারে ইঞ্জিল” বলে দাবি করেছেন খৃস্টানগণ। এগুলোর মূল গ্রীক বা ইংরেজি নামকরণে মূলের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলা ও অন্যান্য অনেক ভাষায় অনুবাদের সময় তারা মূলের প্রতি বিশ্বস্ততা নষ্ট করে এগুলোর নাম দিয়েছেন ‘মথির ইঞ্জিল’, ‘মথিলিখিত ইঞ্জিল’, ইঞ্জিল শরিফ, প্রথম খ-: মথি… ইত্যাদি।
এ সকল ‘মতানুসারে ইঞ্জিলের’ সাথে ‘ঈসা মাসীহের ইঞ্জিলের’ মুল পার্থক্য ঈসা (আ)-এর ‘ইঞ্জিল’ আল্লাহর কালাম বা তাঁর নিজের বক্তব্য। আর প্রচলিত ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’ চারটির মধ্যে আল্লাহর কোনো কালাম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এগুলির মধ্যে ঈসা মাসীহের বক্তব্যও কম। এগুলি মূলত তাঁর জীবনীগ্রন্থ। এগুলির মধ্যে ঈসা মাসীহ বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের বর্ণনা সংকলন করা হয়েছে।
এছাড়া আমরা দেখলাম যে, এরূপ প্রায় অর্ধশত ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’ দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকের খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। আমরা দেখব যে, তৃতীয় শতাব্দীতে খৃস্টান ধর্মগুরুগণ নিজেদের পছন্দের উপর নির্ভর করে এ চারটিকে বাছাই করেন। এ বিষয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার (biblical literature)-এর বক্তব্য:
As far as the New Testament is concerned, there could be no Bible without a church that created it; yet conversely, having been nurtured by the content of the writings themselves, the church selected the canon. … Indeed, until c. AD 150, Christians could produce writings either anonymously or pseudonymously—i.e., using the name of some acknowledged important biblical or apostolic figure. The practice was not believed to be either a trick or fraud. …
“নতুন নিয়মের বিষয়টি হলো যদি চার্চ (ধর্মগুরুদের মন্ডলী) বাইবেল তৈরি না করত তাহলে কোনো বাইবেলই থাকতো না। অপরদিকে লিখনিগুলির বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে চার্চই বাইবেলের বইগুলি বাছাই করেছে। … প্রকৃত বিষয় হলো, ১৫০ খৃস্টাব্দের দিকে যে কোনো খৃস্টান নাম প্রকাশ না করে, অথবা কোনো প্রসিদ্ধ বাইবেলীয় ব্যক্তিত্ব বা যীশুর শিষ্যদের নামে বই লিখতে পারতেন। এরূপ কর্মকে ছলচাতুরি বা প্রতারণা বলে গণ্য করা হতো না! …”
বিষয়টি বিস্ময়কর। ১০০/১৫০ বৎসর পরে যে কোনো খৃস্টান সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে একটি বই লিখে প্রচার করছেন, এটি মথি লিখিত ইঞ্জিল, এটি পিতর লিখিত ইঞ্জিল… এভাবে যীশুর শিষ্যদের বা সাধুদের নামে যে যা পারছে লিখে প্রচার করছে। এরূপ কর্মকে উক্ত ধার্মিক লেখক বা সমাজের অন্য কোনো ধার্মিক খৃস্টান কেউই অন্যায় বা পাপ বলে গণ্য করছেন না! এগুলো সমাজে ইঞ্জিল নামে প্রসিদ্ধ হওয়ার আরো ১০০/১৫০ বৎসর পর এরূপ ধার্মিক খৃস্টানগণ “অজ্ঞাত ধার্মিক মানুষদের লেখা” অর্ধশত ইঞ্জিল থেকে শুধু বিষয়বস্তুর পছন্দনীয়তার দিকে তাকিয়ে ৪টি ইঞ্জিল বেছে নিয়ে “নতুন নিয়ম”-এর অন্তর্ভুক্ত করলেন!
মাইক্রোসফট এনকার্টায় (Bible) আর্টিকেলের বক্তব্য:
“The 27 books of the New Testament are only a fraction of the literary production of the Christian communities in their first three centuries. … As many as 50 Gospels were in circulation during this time”
“খৃস্টান সম্প্রদায়গুলি প্রথম তিন শতকে যে সকল ধর্মগ্রন্থ লিখেছিল তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি হলো নতুন নিয়মের ২৭টি বই। তখন ৫০টির মত ইঞ্জিল তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।”
১. ৪. বাইবেলীয় পুস্তকগুলোর বাংলা নাম
১. ৪. ১. নামের অনুবাদ ও অনুবাদের হেরফের
জাগতিক কোনো ডকুমেন্টের মধ্যে নিজস্ব নাম (proper noun)-এর আক্ষরিক বা আভিধানিক অনুবাদ অবিশ্বস্ততা বা অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য। তবে খৃস্টান ধর্মগুরুগণ ধর্মগ্রন্থের অনুবাদের ক্ষেত্রে নিজস্ব নাম (proper noun)-এর অনুবাদ করেন। বাইবেলের নামের ক্ষেত্রে যেরূপ, বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান গ্রন্থগুলোর নামের ক্ষেত্রেও তদ্রƒপই আমরা দেখতে পাই। একইভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের মধ্যে ধর্ম প্রচারের জন্য তারা একই ভাষায় বিভিন্নভাবে নামকরণ করেন। এজন্য অনেক সময় তথ্যসূত্র বা রেফারেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধা হয়। যেমন বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান প্রথম পুস্তকটির ইংরেজি নাম ‘আদি পুস্তক’ (The Book of Genesis)। বাংলা বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণ ও প্রকাশে এ বইটির বাংলা নাম ‘আদি পুস্তক’। কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দস নামক বাইবেলে এ বইটির নাম ‘পয়দায়েশ’। এখন তথ্যসূত্রে ‘আদি পুস্তক’ লেখা হলে সাধারণ পাঠক পুরো ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ ঘেটেও এ বইটি খুঁজে পাবেন না। আবার ‘পয়দায়েশ’ লেখা হলে প্রচলিত বাংলা বাইবেলের কোথাও খুঁজে পাবেন না। ফলে তিনি বিব্রত হবেন অথবা তথ্যসূত্র প্রদানকারীর প্রতি সন্দীহান বা বিরক্ত হবেন। বাইবেলের প্রায় সকল পুস্তকের ক্ষেত্রেই নামের এরূপ হেরফের বিদ্যমান। এজন্য বাইবেল বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা ও উদ্ধৃতি প্রদানের পূর্বে আমরা বাংলা বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণে ব্যবহৃত বাংলা নামগুলো এখানে উল্লেখ করছি। স¦ভাবতই আমরা এখানে শুধু ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর বাংলা নাম উল্লেখ করছি। কারণ অন্য কোনো বাইবেল বাংলায় অনুবাদ করা হয় নি।
১. ৪. ২. বাইবেলীয় পুস্তকগুলোর বিভিন্ন বাংলা নাম
প্রথমত: পুরাতন নিয়ম
ইংরেজী নাম | পবিত্র বাইবেল: জুবিলী | পবিত্র বাইবেল: কেরি | কিতাবুল মোকাদ্দস |
Genesis | আদিপুস্তক | আদিপুস্তক | পয়দায়েশ |
Exodus | যাত্রাপুস্তক | যাত্রাপুস্তক | হিজরত |
Leviticus | লেবীয় পুস্তক | লেবীয় পুস্তক | লেবীয় |
Numbers | গণনা পুস্তক | গণনা পুস্তক | শুমারী |
Deuteronomy | দ্বিতীয় বিবরণ | দ্বিতীয় বিবরণ | দ্বিতীয় বিবরণ |
Joshua | যোশুয়া | যিহোশূয় | ইউসা |
Judges | বিচারকচরিত | বিচারকর্তৃকগণ | কাজীগণ |
Ruth | রূথ | রূত | রুত |
1 Samuel | সামুয়েল ১ম পুস্তক | ১ শমূয়েল | ১ শামুয়েল |
2 Samuel | সামুয়েল ২য় পুস্তক | ২ শমূয়েল | ২ শামুয়েল |
1 Kings | রাজাবলি ১ম পুস্তক | ১ রাজাবলি | ১ বাদশাহ্নামা |
2 Kings | রাজাবলি ২য় পুস্তক | ২ রাজাবলি | ২ বাদশাহ্নামা |
1 Chronicles | বংশাবলি ১ম পুস্তক | ১ বংশাবলি | ১ খান্দাননামা |
2 Chronicles | বংশাবলি ২য় পুস্তক | ২ বংশাবলি | ২ খান্দাননামা |
Ezra | এজরা | ইষ্রা | উযায়ের |
Nehemiah | নেহেমিয়া | নহিমিয় | নহিমিয়া |
Tobias | তোবিত | পুরো বইটি জাল গণ্যে বাতিলকৃত (১) | |
Judith | যুদিথ | পুরো বইটি জাল গণ্যে বাতিলকৃত (২) | |
Esther | এস্থার | ইষ্টের | ইষ্টের |
1st Machabees | মাকাবীয় ১ম পুস্তক | পুরো বইটি জাল গণ্যে বাতিলকৃত (৩) | |
2nd Machabees | মাকাবীয় ২য় পুস্তক | পুরো বইটি জাল গণ্যে বাতিলকৃত (৪) | |
Job | যোব | ইয়োব | আইয়ুব |
Psalms | সামসঙ্গীত মালা | গীতসংহিতা | জবুর শরীফ |
Proverbs | প্রবচনমালা | হিতোপদেশ | মেসাল |
Ecclesiastes | উপদেশক | উপদেশক | হেদায়েতকারী |
Song of Solomon | পরম গীত | পরমগীত | সোলায়মান |
The Book of Wisdom | প্রজ্ঞা পুস্তক | পুরো বইটি জাল গণ্যে বাতিলকৃত (৫) | |
Ecclesiasticus: Sirach | বেন-সিরা | পুরো বইটি জাল গণ্যে বাতিলকৃত (৬) | |
Isaiah | ইসাইয়া | যিশাইয় | ইশাইয়া |
Jeremiah | যেরেমিয়া | যিরমিয় | ইয়ারমিয়া |
Lamentations | বিলাপ-গাথা | বিলাপ | মাতম |
Baruch | বারুক | পুরো বইটি জাল গণ্যে বাতিলকৃত (৭) | |
Ezekiel | এজেকিয়েল | যিহিষ্কেল | হেজকিল |
Daniel | দানিয়েল | দানিয়েল | দানিয়াল |
Hosea | হোসেয়া | হোশেয় | হোসিয়া |
Joel | যোয়েল | যোয়েল | যোয়েল |
Amos | আমোস | আমোষ | আমোস |
Obadiah | ওবাদিয়া | ওবদিয় | ওবদিয় |
Jonah | যোনা | যোনা | ইউনুস |
Micah | মিখা | মীখা | মিকাহ্ |
Nahum | নাহুম | নহূম | নাহূম |
Habakkuk | হাবাকুক হ | বক্কুক | হাবাক্কুক |
Zephaniah | জেফানিয়া | সফনিয় | সফনিয় |
Haggai | হগয় | হগয় | হগয় |
Zechariah | জাখারিয়া | সখরিয় | জাকারিয়া |
Malachi | মালাখি | মালাখি | মালাখি |
দ্বিতীয়ত: নতুন নিয়ম
The Gospel According to Matthew | মথি | মথি | মথি |
The Gospel According to Mark | মার্ক | মার্ক | মার্ক |
The Gospel According to Luke | লুক | লূক | লূক |
The Gospel According to John | যোহন | যোহন | ইউহোন্না |
The Acts of the Apostles | শিষ্যচরিত | প্রেরিত | প্রেরিত |
The Letter of Paul to the Romans | রোমীয় | রোমীয় | রোমীয় |
The 1st Letter of Paul to the Corinthians | ১ করিন্থীয় | ১করিন্থীয় | ১করিন্থীয় |
The 2nd Letter of Paul to the Corinthians | ২ করিন্থীয় | ২ করিন্থীয় | ২ করিন্থীয় |
The Letter of Paul to the Galatians | গালাতীয় | গালাতীয় | গালাতীয় |
The Letter of Paul to the Ephesians | এফেসীয় | ইফিষীয় | ইফিষীয় |
The Letter of Paul to the Philippians | ফিলিপ্পীয় | ফিলিপীয় | ফিলিপীয় |
The Letter of Paul to the Colossians | কলসীয় | কলসীয় | কলসীয় |
The 1st Letter of Paul to the Thessalonians | ১ থেসালোনিকীয় | ১ থিষলনীকীয় | ১থিষলনীকীয় |
The 2nd Letter of Paul to the Thessalonians | ২ থেসালোনিকীয় | ২ থিষলনীকীয় | ২থিষলনীকীয় |
The First Letter of Paul to Timothy | ১ তিমথি | ১ তীমথিয় | ১ তীমথিয় |
The Second Letter of Paul to Timothy | ২ তিমথি | ২ তীমথিয় | ২ তীমথিয় |
The Letter of Paul to Titus | তীত | তীত | তীত |
The Letter of Paul to Philemon | ফিলেমন | ফিলীমন | ফিলীমন |
The Letter to the Hebrews | হিব্রু | ইব্রীয় | ইবরানী |
The Letter of James | যাকোব | যাকোব | ইয়াকুব |
The First Letter of Peter | ১ পিতর | ১ পিতর | ১ পিতর |
The Second Letter of Peter | ২ পিতর | ২ পিতর | ২ পিতর |
The First Letter of John | ১ যোহন | ১ যোহন | ১ ইউহোন্না |
The Second Letter of John | ২ যোহন | ২ যোহন | ২ ইউহোন্না |
The Third Letter of John | ৩ যোহন | ৩ যোহন | ৩ ইউহোন্না |
The Letter of Jude | যুদ | যিহূদা | এহুদা |
The Revelation to John | প্রত্যাদেশ | প্রকাশিত বাক্য | প্রকাশিত কালাম |
১. ৫. বাইবেলের বাংলা অনুবাদের হেরফের
সুপ্রিয় পাঠক, আমরা বাইবেলীয় পুস্তকগুলোর বাংলা নামের বিভিন্ন রূপ জানতে পারলাম। আমাদের এ গ্রন্থে আমরা বাইবেলীয় পুস্তকের নাম উদ্ধৃতি করার ক্ষেত্রে মূলত উইলিয়াম কেরি অনূদিত বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি প্রকাশিত ‘পবিত্র বাইবেলের’ নামগুলোই ব্যবহার করব। এ ছাড়া বাইবেলের উদ্ধৃতিগুলোর বঙ্গানুবাদের ক্ষেত্রেও আমরা সাধারণভাবে এ সংস্করণের উপরেই নির্ভর করব। কারণ কেরি বাইবেলের বাংলা কিছুটা দুর্বোধ্য হলেও তা অনেকটা মূলাশ্রয়ী বা মূল ইংরেজির পাঠের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। পক্ষান্তরে পরবর্তী সংস্করণগুলোর ভাষা সহজবোধ্য হলেও আমরা মূল ইংরেজি পাঠের সাথে অনেক ভিন্নতা, অস্পষটতা ও অসঙ্গতি দেখতে পাই।
বাইবেলের মূল ভাষা হিব্রু ও গ্রীক। এ ভাষাদ্বয়ে রচিত বাইবেল সহজপ্রাপ্য নয় এবং ভাষা দুটিও অত্যন্ত কঠিন। এজন্য আমরা ইংরেজি অনুবাদকেই মূল ধরছি। ইংরেজি অনুবাদ কতটুকু বিশ্বস্ত আমরা জানি না। তবে আমরা আশা করি ইংরেজি অনুবাদ যথাসম্ভব মূল নির্ভর। বাংলা বা অন্যান্য ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদকগণের অন্যতম উদ্দেশ্য উক্ত জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে খৃস্টধর্মে দীক্ষিত করা। সম্ভবত এজন্যই এ সকল অনুবাদে আমরা বিভিন্ন প্রকারের অস্পষ্টতা, ব্যতিক্রম, সংযোজন বা বিয়োজন দেখতে পাই। নি¤েœ সামান্য কয়েকটি উদাহরণ পেশ করছি:
প্রথম উদাহরণ: ‘গীতসংহিতা’র ৮২/৬ কিং জেমস ভার্শন (King James Version: KJV) বা অথোরাইযড ভার্ষন (Authorized Version: AV)-এ নিম্নরূপ : “I have said, Ye are gods; and all of you are children of the Most High” (আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর, এবং তোমাদের সকলেই শ্রেষ্ঠতমের সন্তান)।
রিভাইযড স্টান্ডার্ড ভার্শন (Revised Standard Version: RSV)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ : “I say, you are gods, sons of the Most High, all of you” (আমি বলি, তোমরা ঈশ্বর, শ্রেষ্ঠতমের পুত্র, তোমরা সকলেই)
কেরির অনুবাদ নিম্নরূপ : “আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর, তোমরা সকলে পরাৎপরের সন্তান।”
জুবিলি বাইবেলের অনুবাদ: “আমি বলেছি, তোমরা ঐশীজীব! তোমরা সবাই পরাৎপরের সন্তান।”
পবিত্র বাইবেল ২০০০ খৃস্টাব্দের সংস্করণের অনুবাদ: “আমি বলেছিলাম, তোমরা যেন ঈশ্বর, তোমরা সবাই মহান ঈশ্বরের সন্তান।”
কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদ: “আমি বলেছিলাম, তোমরা যেন আল্লাহ, তোমরা সবাই আল্লাহতা’লার সন্তান।”
মূল ইংরেজি ভাষ্য থেকে সুস্পষ্ট যে, এখানে মানুষদেরকে, সকল মানুষকে সুস্পষ্টভাবে ঈশ্বর ও ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়েছে। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, বাইবেলীয় পরিভাষায় কাউকে ঈশ্বর বলা বা ঈশ্বরের পুত্র বলা দ্বারা কোনো দেবত্ব বা ঈশ্বরত্ব বুঝায় না; বরং ঈশ্বরের দাস ও সৃষ্টি বুঝায়। কেরির বাংলা অনুবাদ মূলাশ্রয়ী। তবে অন্যান্য অনুবাদে মানুষকে ঈশ্বর বলার বিষয়টি অস্পষ্ট করা হয়েছে। জুবিলী বাইবেলে ‘ঐশীজীব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর অন্য দুই অনুবাদে ‘যেন’ শব্দটি অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় উদাহরণ: নতুন নিয়মের প্রথম পুস্তক ‘মথি’র ১৯/১৬-১৭ শ্লোক কিং জেমস ভার্শনে (KJV) নিম্নরূপ : “And, behold, one came and said unto him, Good Master, what good thing shall I do, that I may have eternal life? And he said unto him, Why callest thou me good? there is none good but one, that is, God: but if thou wilt enter into life, keep the commandments.” (আর দেখ, একজন আগমন করল এবং তাঁকে বলল: হে সৎ গুরু, আমি কী সৎ কাজ করব যেন আমি অনন্ত জীবন পাই? এবং তিনি তাকে বলেন: তুমি কেন আমাকে সৎ বলছ? একজন ছাড়া কেউ সৎ নেই, তিনি আল্লাহ)
মধ্যপ্রাচ্য বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক ১৯৯২ খৃস্টাব্দে প্রকাশিত আরবী বাইবেলে বক্তব্যটি নিম্নরূপ :
وإذا واحد تقدم وقال له أيها المعلم الصالح أي صلاح أعمل لتكون لي الحياة الأبدية؟ فقال له لماذا تدعوني صالحا، ليس أحد صالحا إلا واحد، وهو الله
(এমন সময় একজন আগমন করল এবং তাঁকে বলল: হে সৎ গুরু, আমি কী সৎ কাজ করব যেন আমি অনন্ত জীবন পাই? এবং তিনি তাকে বলেন: তুমি কেন আমাকে সৎ বলে ডাকছ? একজন ছাড়া কেউ সৎ নেই, তিনি আল্লাহ)
এখানে আমরা দেখছি যে, যীশু মহান আল্লাহর মর্যদার পূর্ণতা রক্ষা করতে নিজেকে ভাল বা সৎ (Good) বলতে আপত্তি করছেন। স্বভাবতই এ বক্তব্য তার ঈশ্বত্বের দাবীর সাথে সাংঘর্ষিক। এজন্য আমরা দেখছি যে, বাংলা বাইবেলগুলোতে রিভাইযড স্টান্ডার্ড ভার্শনের অনুসরণে অন্যরকম অনুবাদ করা হয়েছে। কেরির অনুবাদ নিম্নরূপ : “আর দেখ, এক ব্যক্তি আসিয়া তাঁহাকে বলিল, হে গুরু, অনন্ত জীবন পাইবার জন্য আমি কিরূপ সৎকর্ম করিব? তিনি তাহাকে কহিলেন, আমাকে সতের বিষয় কেন জিজ্ঞাসা কর? সৎ একজন মাত্র আছেন।”
অন্যান্য বাংলা বাইবেলেও কাছাকাছি অনুবাদ করা হয়েছে।
তৃতীয় উদাহরণ: মথি ২৫/১৫ নিম্নরূপ : (KJV: And unto one he gave five talents, to another two, and to another one; RSV: to one he gave five talents, to another two, and to another one…)
কেরির অনুবাদ: “তিনি এক জনকে পাঁচ তালন্ত, অন্য জনকে দুই তালন্ত, এবং আর এক জনকে এক তালন্ত … দিলেন।”
জুবিলি বাইবেল: “একজনকে তিনি পাঁচশ’ মোহর, অন্যজনকে দু’শো মোহর, ও আর একজনকে একশ’ মোহর … দিলেন।”
পবিত্র বাইবেল ২০০০ সংস্করণ: “তিনি একজনকে পাঁচহাজার, একজনকে দু’হাজার ও একজনকে এক হাজার টাকা দিলেন।”
কিতাবুল মোকাদ্দস: “তিনি একজনকে পাঁচহাজার, একজনকে দু’হাজার ও একজনকে এক হাজার টাকা দিলেন।”
আমরা জানি না, খৃস্টান ধর্মগুরুগণের নিকট শত ও হাজার একই সংখ্যা কি না! তবে আমরা দেখছি যে, কেরির অনুবাদ মূলের প্রতি বিশ্বস্ত। তালন্ত (talent) যেহেতু প্রাচীন মুদ্রা, সেহেতু টীকায় তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে ইচ্ছামত ‘এক তালন্ত’-কে ইচ্ছামত এক শত টাকা বা এক হাজার টাকা বলে অনুবাদ করা মোটেও বিশ্বস্ত অনুবাদ বলে গণ্য নয়।
চতুর্থ উদাহরণ: নতুন নিয়মের তৃতীয় পুস্তক ‘লূক’। এ পুস্তকের ৯ অধ্যায়ে ২৮ শ্লোক নিম্নরূপ (KJV: And it came to pass about an eight days after these sayings, he took Peter and John and James, and went up into a mountain to pray. RSV: Now about eight days after these sayings, he took Peter and John and James, and went up on the mountain to pray.)
ইংরেজি (eight days)-কে বাংলায় আট দিন ও এক সপ্তাহ অনুবাদ করেছেন। কেরির অনুবাদ: এই সকল কথা বলিবার পরে, অনুমান আট দিন গত হইলে তিনি পিতর, যোহন ও যাকোবকে সঙ্গে লইয়া প্রার্থনা করবির জন্য পর্বতে উঠিলেন।” জুবিলী বাইবেলের অনুবাদেও ‘আনুমানিক আট দিন’ বলা হয়েছে।
বাইবেল ২০০০ খৃস্টাব্দের সংস্করণ ও কিতাবুল মোকাদ্দসে এক সপ্তাহ বলা হয়েছে। পবিত্র বাইবেল: “এই সব কথা বলবার প্রায় এক সপ্তার পরে যীশু প্রার্থনা করবার জন্য পিতর, যোহন ও যাকোবকে নিয়ে একটা পাহাড়ে গেলেন।” কিতাবুল মোকাদ্দস: “এই সব কথা বলবার প্রায় এক সপ্তা পরে ঈসা মুনাজাত করবার জন্য পিতর, ইউহোন্না ও ইয়াকুবকে নিয়ে একটা পাহাড়ে গেলেন।”
আমরা জানি না, খৃস্টান ধর্মগুরুগণের নিকট এক সপ্তাহ এবং আট দিন একই কিনা অথবা তাদের সপ্তাহ আট দিনে হয় কি না! তবে মূল ভাষ্যের ‘৮ দিন’ কথাকে এভাবে ইচ্ছমত এক সপ্তা বানানো কখনোই বিশুদ্ধ ও বিশ্বস্ত অনুবাদ নয়।
পঞ্চম উদাহরণ: লূক ১৬/৫-৭ নিম্নরূপ : (KJV: So he called every one of his lord’s debtors unto him, and said unto the first, How much owest thou unto my lord? And he said, An hundred measures of oil. And he said unto him, Take thy bill, and sit down quickly, and write fifty. Then said he to another, And how much owest thou? And he said, An hundred measures of wheat. And he said unto him, Take thy bill, and write fourscore. RSV: the same)
ইংরেজি (An hundred measures) ‘এক শত পরিমাপ/ মাত্রা’ কথাটিকে কেউ ‘এক শত মন’, কেউ তিন টন ও চার টন এবং কেউ ‘দু হাজার চারশো লিটার ও ‘আঠারো টন’ লিখেছেন। কেরির অনুবাদ: “পরে সে আপন প্রভুর প্রত্যেক ঋণীকে ডাকিয়া প্রথম জনকে কহিল, তুমি আমার প্রভুর কত ধার? সে বলিল, এক শত মণ তৈল। তখন সে তাহাকে কহিল, তোমার ঋণপত্র লও, এবং শীঘ্র বসিয়া পঞ্চাশ লেখ। পরে সে আর এক জনকে বলিল, তুমি কত ধার? সে বলিল, এক শত বিশি গোম। তখন সে কহিল, তোমার ঋণপত্র লইয়া আশি লেখ।”
জুবিলি বাইবেল: যারা তার প্রভুর কাছে ঋণী ছিল তাদের সে এক একজন করে ডাকল। প্রথমজনকে সে বলল: আমার প্রভুর কাছে তোমার দেনা কত? সে বলল, তিন টন তেল। সে তাকে বলল, তোমার ধারপত্র নাও, শীঘ্র বসে দেড় টন লেখ। আর একজনকে সে বলল, তোমার দেনা কত? সে বলল, চার টন গম। সে তাকে বলল, তোমার ধারপত্র নিয়ে তিন টন লেখ।”
পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস: “এই বলে যারা তার মনিবের কাছে ধার করেছিল তাদের প্রত্যেককে সে ডাকল। তারপর সে প্রথম জনকে জিজ্ঞাসা করল, আমার মনিবের কাছে তোমার ধার কত? সে বলল, দু’হাজার চারশো লিটার তেল। সেই কর্মচারী তাকে বলল, যে কাগজে তোমার ধারের কথা লেখা আছে সেটা নাও এবং শীঘ্র বসে এক হাজার দু’শো লেখ। সেই কর্মচারী তারপর আর একজনকে বলল, তোমার ধার কত? সে বলল, আঠারো টন গম। কর্মচারীটি বলল, তোমার কাগজে সাড়ে চৌদ্দ টন লেখ।”
সুপ্রিয় পাঠক, মূল ইংরেজিতে বলা হয়েছে ‘এক শত পরিমাপ তেল’ এবং ‘এক শত পরিমাপ গম’। কেরির অনুবাদো ‘এক শত’ সংখ্যাটি সঠিকভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। অন্যান্য অনুবাদে বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে। একে বিশ্বস্ত অনুবাদ বলা যায় না। এছাড়া প্রশ্ন হলো: ‘একশত পরিমাপ’, একশত মণ, তিন টন, দু হাজার চারশো লিটার, চার টন, আঠারো টন সবই কি একই পরিমাণ? ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ তো দূরের কথা কোনো জাগতিক দলিল, চুক্তি, সংবিধান, বইপুস্তক অনুবাদের ক্ষেত্রে কোনো অণুবাদক এরূপ করলে তা কি গ্রহণযোগ্য হবে?
ষষ্ঠ উদাহরণ: নতুন নিয়মের চতুর্থ পুস্তক যোহন বা ইউহান্না। যোহন ১২/২৫ ইংরেজিতে নিম্নরূপ: কঔঠ: “KJV: “He that loveth his life shall lose it; and he that hateth his life in this world shall keep it unto life eternal”. RSV: “He wjp loves his life loses it; and he who hates his life in this world will keep it for eternal life.”
পাঠক দেখছেন যে, উভয় ভার্শনেই অর্থ এক: “ যে তার নিজ জীবন/ প্রাণ ভালবাসবে সে তা হারাবে; এবং যে এ জগতে তার তার নিজের জীবন ঘৃণা করবে সে অনন্ত জীবনের জন্য তা সংরক্ষণ করবে।”
কেরির অনুবাদ: “যে আপন প্রাণ ভাল বাসে সে তাহা হারায়; আর যে এই জগতে আপন প্রাণ অপ্রিয় জ্ঞান করে, সে অনন্ত জীবনের জন্য তাহা রক্ষা করিবে।”
কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দস ও অন্যান্য পরবর্তী অনুবাদ: “যে নিজের প্রাণকে বেশী ভালবাসে সে তার সত্যিকারের জীবন হারায়, কিন্তু যে এই দুনিয়াতে তা করে না সে তার সত্যিাকরের জীবন অনন্ত জীবনের জন্য রক্ষা করবে।”
আমরা দেখছি যে, কেরির অনুবাদ মূলানুগ। শুধু ‘হেট’ বা ঘৃণা করাকে অপ্রিয় জ্ঞান করা লেখা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী অনুবাদ খুবই অবিশ্বস্ত। একেবারেই অপ্রাসঙ্গিকভাবে মূল অর্থ পরিবর্তন করে “বেশী” শব্দটি যোগ করা হয়েছে। একইভাবে মূল বক্তব্য বিনষ্ট করে “সত্যিকারের জীবন” শব্দদুটো যোগ করা হয়েছে। আর হেট বা ঘৃণা করা শব্দটি বেমালুম চেপে যেয়ে ‘তা না করে’ বলা হয়েছে। ‘তা না করা’ অর্থাৎ কোনো কিছুকে ‘বেশী ভাল না বাসা’ কি হেট বা ঘৃণা করার সমার্থক। ভাষায় তো নেইই, কোনো বিবেকবান মানুষ কি তা বলবেন? আমি আমার কোনো বন্ধুকে কম ভালবাসি- এর অর্থ কি আমি তাকে ঘৃণা করি?
কোনো ছাত্র যদি গ্রামার পরীক্ষায় এরূপ ইচ্ছামত ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ অনুবাদ করে তবে শিক্ষক কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? কোনো আর্থিক, বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক ডকুমেন্টের এরূপ অনুবাদ করা হলে তা কি ‘অপরাধ’ বলে গণ্য করা হবে না?
পাঠক হয়ত এরূপ অবিশ্বস্ততার কারণ বুঝতে পারছেন না। ইঞ্জিলের এ বক্তব্যটি আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রচুর সমালোচনা কুড়িয়েছে। কারণ নিজের জীবনকে ভালবাসা সহজাত মানবীয় প্রকৃতি। কাউকে বলা যায় যে, তুমি জীবনের চেয়ে দেশ, রাষ্ট্র, ধর্ম বা ঈশ্বরকে বেশি ভালবাসবে। কিন্তু এ কথা বলা যায় না যে, জীবনকে ভালবাসলেই তুমি চাকরি বা অনন্ত জীবন হারাবে। এজন্য যীশুর নামে কথিত বক্তব্যটি খুবই আপত্তিকর।
অন্যদিকে অনন্ত জীবন লাভ করতে জীবনকে ঘৃণা করতে হবে কথাটিও একইরূপ অগ্রহণযোগ্য। কেউ যদি জীবনকে ঘৃণা-ই করে তবে তাকে অনন্তকালের জন্য রক্ষার চেষ্টা করবে কেন। জীবনের প্রতি প্রেমই তো তাকে তা অনন্তকালের জন্য রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে। জীবনের প্রতি ঘৃণা মানুষকে অসুস্থ ও অপ্রকৃতস্থ করে।((http://www.thegodmurders.com/id90.html))
বস্তুত যীশুর নামে ইঞ্জিলের মধ্যে লিখিত অনেক কথাই এরূপ প্রান্তিক। দ্বিতীয় শতাব্দীর খৃস্টীন সন্যাসী ও জ্ঞানবাদী বা ‘মারফতী’ (মহড়ংঃরপ) সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে এরূপ ‘প্রান্তিক’ আবেগী কথাগুলো খুবই বাজার পেত। সম্ভবত এগুলো যীশুর নামে বানানো কথা। সর্বাবস্থায় এগুলোর ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, কিন্তু মূল বক্তব্যের মধ্যে মানবীয় ব্যাখ্যা জুড়ে দিয়ে তাকে যীশুর বা ঈশ্বরের কথা বলে চালানো কি ধর্ম, মানবতা, বিবেক বা জাগতিক আইনে গ্রহণযোগ্য?
সপ্তম উদাহরণ: নতুন নিয়মের ষষ্ঠ পুস্তক রোমীয়। এ পত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের সপ্তম শ্লোক (verse)-টি ইংরেজি কিং জেমস ভার্শন (King James Version: KJV) বা অথোরাইযড ভার্ষন (Authorized Version: AV)-এর নিম্নরূপ : “For if the truth of God hath more abounded through my lie unto his glory; why yet am I also judged as a sinner?” (কারণ যদি ঈশ্বরের সত্য অধিক উপচে পড়ে তার মর্যাদার প্রতি আমার মিথ্যায় তবে এরপরও আমিও কেন পাপী বলে বিচারিত হই?)
রিভাইযড স্টান্ডার্ড ভার্শন (Revised Standard Version: RSV)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ: But if through my false-hood God’s truthfulness abounds to his goory, why am I still being cindermned as a sinner? (কারণ যদি আমার মিথ্যাচারিতার মাধ্যমে ঈশ্বরের সত্যবাদিতা তার মর্যাদায় উপচে পড়ে তবে এরপরও আমিও কেন পাপী বলে নিন্দিত হচ্ছি?)