মি‘রাজের বিষয় কুরআন কারীমে সূরা নাজমেও আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। এ সূরার শুরুতে আল্লাহ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবরাঈল আলাইহিস সালাম থেকে ওহী লাভ করেন এবং তিনি জিবরাঈল আলাইহিস সালাম-কে তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে দেখেছেন। এরপর মিরাজের রাত্রিতে সিদরাতুল মুনতাহার নিকট জিবরাঈলকে পুনরায় স্বআকৃতিতে দর্শন এবং আল্লাহর অবর্ণনীয় নিয়ামত দর্শনের বিষয়ে আল্লাহ বলেন:
أَفَتُمَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى -وَلَقَدْ رَآَهُ نَزْلَةً أُخْرَى -عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى -عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى -إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى -مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى -لَقَدْ رَأَى مِنْ آَيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى
“সে (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সাথে বিতর্ক করবে? নিশ্বয়ই সে তাকে (জিবরীলকে) আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার (প্রান্তবর্তী বদরী বৃক্ষের) নিকট। যার নিকট অবস্থিত জান্নাতুল মা‘ওয়া। যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারা ছিল আচ্ছাদিত। তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিল।”1সূরা [৫৩] নাজম: ১২—১৮।
হাদীস ও সীরাত বিষয়ক গ্রন্থে
প্রায় ৪০ জন সাহাবী সহীহ বা যয়ীফ সনদে মিরাজের ঘটনার বিভিন্ন দিক ছোট বা বড় আকারে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনো হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মি‘রাজের তারিখ সম্পর্কে একটি কথাও বর্ণিত হয়নি। সাহাবী—তাবিয়ীগণও তারিখ বিষয়ে তেমন কিছু বলেননি। এসকল হাদীসের শিক্ষা গ্রহণই তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। দিবস পালন তো দূরের কথা তারিখ জানার বিষয়ে তাদের আগ্রহ ছিল অতি সামান্য।
ফলে তারিখের বিষয়ে
পরবতীর্ যুগের মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মি‘রাজ একবার না একাধিকবার সংঘঠিত হয়েছে, কোন্ বছর হয়েছে, কোন্ মাসে হয়েছে, কোন্ তারিখে হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে এবং প্রায় ২০টি মত রয়েছে। ফাতহুল বারী, উমদাতুল কারী, আল-মাওয়াহিবুল­স্নাদুনিয়্যাহ, শারুহুল মাওয়াহিব, তারিখে ইবন কাসীর, সীরাহ শামিয়্যাহ ইত্যাদি হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও সীরাতুন্নাবী বিষয়ক যে কোনো মৌলিক আরবী গ্রন্থে আপনারা এ সকল মত দেখতে পারবেন।
কোনো কোনো
আলিমের মতে যুলকাদ মাসে, কারো মতে রজব মাসের এক তারিখে, বা রজব মাসের প্রথম শুক্রবারে এবং কারো মতে রজব মাসের ২৭ তারিখে মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। তবে অধিকাংশ আলিমই বলেছেন যে, রবিউল আউয়াল মাসে মি‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল। তাবিয়ীদের মধ্যে ইমাম যুহরী ও উরওয়া ইবনুয যুবাইর থেকে এ মত বর্ণিত।
ইবনু আবী শাইবা
সংকলিত এক মুরসাল হাদীসে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন, এদিনেই তিনি নুবুওয়াত লাভ করেন, এ দিনেই তিনি মি‘রাজে গমন করেন, এদিনেই তিনি হিজরত করেন এবং এদিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।2মুহাম্মাদ ইবনু ইউসূফ শামী, সুবুলুল হুদা (সীরাহ শামিয়্যাহ) ৩/৬৪—৬৬। আরো দেখুন ইবনু কাসীর, আল—বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/৪৭০—৪৮০; কাসতালানী, আল—মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ ২/৩৩৯—৩৯৮; খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি, পৃ. ৪০৯।
মিরাজের বিস্তারিত
ঘটনার বিশদ বর্ণনা অনেক সময়ের প্রয়োজন। মিরাজ বিষয়ক সিহাহ সিত্তার হাদীসগুলি একত্রিত করেছেন ইমাম ইবনুল আসীর তাঁর “জামিউল উসূল” গ্রন্থে। এ ছাড়া এ বিষয়ক বিষয়ক প্রসিদ্ধ, অপ্রসিদ্ধ সহীহ—যয়ীফ সকল হাদীস সংকলন ও সমন্বয় করেছেন আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনু ইউসূফ শামী তার “সীরাহ শামিয়্যাহ” গ্রন্থে। এগুলির আলোকে সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে মিরাজের সংক্ষেপ ঘটনা আমরা এখানে আলোচনা করব।
চলবে…
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।