মুমিন আরো বিশ্বাস করেন যে, বিশ্বের সবকিছু একমাত্র আল্লাহরই সৃষ্টি। তিনি ছাড়া সবই তাঁর সৃষ্ট। মানুষের কর্মও আল্লাহর সৃষ্টি। বিশ্বে যাকিছু সংঘটিত হয় সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞানের মধ্যে। তাঁর ইচ্ছা ও জ্ঞানের বাইরে এই মহাবিশ্বের কোথাও সামান্যতম কোনো কিছুই ঘটে না।
সর্বোপরি মুমিন বিশ্বাস করেন যে, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতা রয়েছে। মানুষকে আল্লাহ বিবেক, বিচারশক্তি ও জ্ঞান দান করেছেন। মানুষ তার নিজের জ্ঞান ও ইচ্ছা অনুসারে কর্ম করে। তবে তার কর্ম আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছার মধ্যে সংঘটিত হয়। মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের ইচ্ছা হরণ করতে পারেন। কিন্তু সাধারণত তিনি তা করেন না। তিনি মানুষকে তার স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতা ব্যবহারের জন্য পুরস্কার বা শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তিনি কখনোই কাউকে যুলুম করবেন না। তিনি মহাকরুণাময় ও শ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারক।
একটি উদাহারণ দেখুন। আল্লাহর নির্ধারণ হল, বিষ মৃত্যু আনে। আল্লাহ মানুষকে বিবেক ও জ্ঞান দিয়েছেন। সে জানে যে, বিষপানে মৃত্যু আসে। সে আরো জানে যে, এভাবে মৃত্যুকে গ্রহণ করা কঠিন পাপ। এরপরও কেউ বিষপান করলে সে মৃত্যুবরণ করবে এবং তা হবে আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞানের মধ্যে।
সর্বজ্ঞানী আল্লাহ তাঁর অসীম অনন্ত জ্ঞানে জানেন যে, অমুক ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে বাধ্য না হয়ে, তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও জ্ঞান প্রয়োগ করে মৃত্যু হবে জেনে ও এভাবে মৃত্যু পাপ জেনেও বিষপান করে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছার মধ্যেই বিষপানকারীর মৃত্যু হবে এবং সে তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতার ব্যবহার অনুসারে শাস্তি পাবে।
মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে ওই ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি হরণ করে তাকে বিষপান থেকে বিরত রাখতে পারেন। আবার তিনি ইচ্ছা করলে বিষের ক্ষমতা নষ্ট করে বিষপানকারীকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারেন। তবে সাধারণত তিনি তা করেন না। তিনি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে অন্য সকল সৃষ্টি থেকে সম্মানিত ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। এই ইচ্ছাকে তিনি হরণ করেন না বা বাধা দেন না।…
চলবে…
বই : মুসলমানী নেসাব, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।